Advertisement
১৮ মে ২০২৪

হোমে ভাল লাগে না, পালিয়েই গেলেন দুই তরুণী

কৃষ্ণনগরের সরকার অনুমোদিত হোম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বছর উনিশের দুই মহিলা আবাসিক। যদিও এক জনকে ছ’মাসের শিশু-সহ ধরে ফেলে শিয়ালদহ জিআরপি। অন্য জনের কোনও খোঁজ সোমবার রাত পর্যন্ত মেলেনি।

নিজস সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০১:১৭
Share: Save:

কৃষ্ণনগরের সরকার অনুমোদিত হোম থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বছর উনিশের দুই মহিলা আবাসিক।

যদিও এক জনকে ছ’মাসের শিশু-সহ ধরে ফেলে শিয়ালদহ জিআরপি। অন্য জনের কোনও খোঁজ সোমবার রাত পর্যন্ত মেলেনি। তবে কী ভাবে ওই দু’জন হোম থেকে পালিয়েছিলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। হোমের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। নৈশপ্রহরীকে শো-কজও করেছেন হোম কর্তৃপক্ষ।

রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ এবং সমাজ কল্যাণ দফতরের অধীন একটি স্বশাসিত সংস্থার মাধ্যমে এই হোমটি পরিচালিত হয়। সংস্থার চেয়ারম্যান সুরঞ্জনা চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘প্রথম থেকেই মেয়েগুলোর পালিয়ে যাওয়ার ঝোঁক ছিল। আমরা ওদের উপরে বিশেষ নজর রাখতাম। তার পরেও কী ভাবে পালাল, বুঝতে পারছি না।’’

১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘পঙ্কজ আচার্য মহিলা নিবাস’ নামে এই হোমে ১৮-৪৫ বছরের মহিলাদের থাকার ব্যবস্থা আছে। আগে মূলত সহায়সম্বলহীন মহিলারা এই হোমে থাকতেন। এখন অবশ্য বিভিন্ন ধরনের মহিলাদের এই হোমে রাখা হচ্ছে। যাঁরা পালিয়েছিলেন, দু’জনেরই বয়স ১৮ বছরের বেশি হয়ে যাওয়ায় প্রায় আড়াই মাস আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার একটি হোম থেকে তাঁদের কৃষ্ণনগরের এই হোমে পাঠানো হয়েছিল।

সুরঞ্জনাদেবী জানান, পলাতকদের মধ্যে এক জনের একাধিক বার বিয়ে হয়েছে। পাথরপ্রতিমার হোমে থাকার সময়েই তিনি মা হন। তাঁকে স্বামী তাড়িয়ে দিয়েছিল। একটি সংস্থা তাঁকে উদ্ধার করে হোম কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিল। অন্য জনের মা যৌনকর্মী। শৈশবেই মেয়েটিকে উদ্ধার করে একই সংস্থা হোমে পৌঁছে দেয়। শিয়ালদহের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের আবাসনে রেখে পড়ানো হত তাকে। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে সে একটি ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে হোমে ফিরিয়ে আনা হয়। সাবালক হওয়ার পরে তাঁদের নদিয়ার হোমে আনা হয়েছিল।

কেন হঠাৎ তাঁরা নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে পালিয়ে গেলেন? কী ভাবেই বা পালালেন? হোমের চার দিকে উঁচু দোতলা বাড়ি। বাইরে উঁচু পাঁচিল। বাইরে যাওয়ার একটাই দরজা। তার পরে আবার পাঁচিল। সেটা টপকানো যথেষ্ট কঠিন।

হোম কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই দু’জন প্রথম থেকেই সেখানে থাকতে চাইত না। কান্নাকাটিও করত। মাঝে একদিন একটি ছেলে এসে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়া মেয়েটির সঙ্গে দেখাও করে গিয়েছিল। হোমের ভারপ্রাপ্ত সুপার রুমা দে বলেন, ‘‘ওরা কেবলই চলে যাওয়ার কথা বলত। আমরা সেই কারণে ওদের দিকে আলাদা নজরও রাখতাম। কিন্তু এ ভাবে পালিয়ে যাবে, ভাবতে পারিনি।’’

তবে হোমের পরিবেশও মেয়েদের পালিয়ে যাওয়ার অ‌ন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন জেলার সমাজকল্যাণ দফতরের কোনও কোনও আধিকারিক। তাঁদের বক্তব্য, এই হোমে ৫০ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে থাকে ২১ জন। এঁদের মধ্যে আবার কেউ-কেউ কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে হোম সাফাই পর্যন্ত সব কাজ আবাসিকদেরই করতে হয়। এটাও প্রথম থেকে মেয়ে দু’টি মেনে নিতে পারছিল না।

রুমাদেবী জানান, রবিবার রাতে খাওয়া-দাওয়া করে দু’জনেই শুয়ে পড়েছিলেন। সকালে গুনতি করতে গিয়ে দেখা যায়, দু’জন নেই। কোতোয়ালি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। নৈশপ্রহরী সুজয় সূত্রধর থাকেন হোমের ভিতরেই। মেয়ে দু’টি পালিয়ে যাওয়ার সময়ে তিনি কিছু টের পেলেন না? সুজয়বাবুর দাবি, ‘‘আমি রাতে মাঝে-মধ্যেই গোটা হোমটা ঘুরে দেখেছি। কিছুই বুঝতে পারিনি।’’ তাঁর অনুমান, ‘‘হোমের ভিতরের পরিত্যক্ত শৌচাগারের দরজার তালা ভেঙে ভাঙা জানালা গলে পালিয়ে থাকতে পারে ওরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teenager Police Government-home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE