অগ্নিমিত্রা পাল। —নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জে একটি পরিত্যক্ত কয়লাখনিতে নেমে মৃত্যু হল দু’জনের। আরও দু’জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতর কোলিয়ারি এলাকায়। দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধেছিলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তৃণমূলও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে সরব হয়েছিল। কিন্তু কয়লা খনিতে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের এক জন বিজেপি নেতা জানার পরেই কার্যত ডিগবাজি খেলেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা। এ নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করতে শুরু করেছে শাসকদলও। উল্টো দিকে, সিপিএম কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারকেই বিঁধেছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কুনুস্তরিয়া এলাকার বাঁশড়া খোলামুখ খনিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল অনেক দিন ধরে। রবিবার রাতে ওই খনি থেকে কয়লা তোলার চেষ্টা করেন কয়েক জন। সেই সময়েই ধস নামে। তাতেই দু’জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের নাম বিনোদ ভুঁইয়া এবং রাজেশ তুরি। তাঁদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রামপ্রবেশ বার্নোয়াল এবং কারু ভুঁইয়া নামে দু’জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। সকালে বিষয়টি জানাজানি হতেই খনি কর্তৃপক্ষের দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়েরা। এর পরেই বিষয়টিতে রাজনীতির রং লাগে। একে একে সেখানে যান সিপিএম ও তৃণমূলের নেতারা। ঘটনাস্থলে যান বিজেপির অগ্নিমিত্রাও। প্রথমে তিনি অভিযোগ করেন, বেকার যুবকদের খনি অঞ্চলে কাজের ব্যবস্থা নেই। পেটের জ্বালায় এই ধরনের বিপজ্জনক কাজ করতে গিয়েই এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। কোলিয়ারির আঞ্চলিক দফতরের জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গেও দেখা করতে গিয়েছিলেন অগ্নিমিত্রা। সেখানে ওই আধিকারিকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে তাঁকে। অন্য দিকে, কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি অভিযোগ করেন, খনি এলাকায় কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ) ও কোলিয়ারির নিজস্ব নজরদারিতে গাফিলতিতে থাকার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
খনিতে দু’জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই জানা যায়, মৃতদের মধ্যে রাজেশ তুরি স্থানীয় বিজেপি নেতা বলে পরিচিত। তাঁর স্ত্রী রিনা তুরি আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতে বিজেপির প্রার্থীও হয়েছিলেন। এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই অগ্নিমিত্রা দাবি করেন, কয়লা কাটতে গিয়েই বিজেপি নেতার মৃত্যু হয়েছে কি না, তার কোনও প্রমাণ নেই! অগ্নিমিত্রার কথায়, ‘‘দুর্ঘটনাটি কোলিয়ারিতে হয়েছে কি না, তার কোনও প্রমাণ কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। ওখানে মোতায়েন থাকা কোলিয়ারির নিরাপত্তাকর্মীরা এ রকম কোনও ঘটনা ঘটতে দেখেননি। পুলিশ দেহ উদ্ধার করেছে তাঁদের বাড়ি থেকে। কোলিয়ারি থেকে নয়।’’ সম্প্রতি আসানসোলের নারায়ণকড়িতেও পরিত্যক্ত কয়লা খনিতে নেমে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। অগ্নিমিত্রার দাবি, ‘‘বাঁশরার ঘটনার সঙ্গে নারায়ণকড়ির ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। নরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘অগ্নিমিত্রা পাল কেন ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন বুঝতে পারছি না! নারায়ণকড়ির ঘটনায় আমরা যেমন পরিবারের পাশে ছিলাম, এই ঘটনাতেও একই ভাবে পরিবারের পাশে থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy