Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অন্ডালে থমকে ওএনজিসি, অকাজে চাপা কাজের গ্যাস

বেসরকারি বিমানবন্দর, আর তাকে ঘিরে উপনগরী। সেই প্রকল্পের মাটির তলায় গ্যাসের বিপুল ভাণ্ডার। অন্ডালের সেই বিমানবন্দর ঘিরে ইদানীং অনিশ্চয়তার কালো মেঘ।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:২০
Share: Save:

বেসরকারি বিমানবন্দর, আর তাকে ঘিরে উপনগরী। সেই প্রকল্পের মাটির তলায় গ্যাসের বিপুল ভাণ্ডার। অন্ডালের সেই বিমানবন্দর ঘিরে ইদানীং অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। তবু তারই জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় তেলসংস্থাকে রানিগঞ্জে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের দাবি, তিন বছর ধরে রাজ্যের অনুমতি আটকে থাকায় ওএনজিসি রানিগঞ্জের কয়লাখনিতে সঞ্চিত কোলবেড মিথেন (সিবিএম) গ্যাস তোলার প্রকল্পে হাত দিতে পারছে না। যার সুবাদে রাজ্যে বিপুল লগ্নির সম্ভাবনা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাও জেগেছে নানা মহলে।

ওএনজিসি সূত্রের খবর: রানিগঞ্জের বিভিন্ন পরিত্যক্ত কয়লাখনির ভিতরে জমে আছে ২৩৯ কোটি ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস। কুড়ি বছর ধরে তা তোলার পরিকল্পনা। যে জন্য ৩৫০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিশাল কর্মকাণ্ডের ছক কষেছে এই নবরত্ন সংস্থা। শুধু কূপই খোঁড়া হবে ৮৫টি। ওএনজিসি চেয়েছিল ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে উত্তোলন শুরু করতে। অথচ রাজ্যের তরফে প্রয়োজনীয় পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন লাইসেন্স (পিএএল) এবং মাইনিং লিজের ছাড়পত্র এখনও মেলেনি। সংস্থা-সূত্রের দাবি, ২০১২-’১৩ সাল থেকে তারা দরবার করে চলেছে। কিন্তু অনুমতি মিলছে না।

কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক অবশ্য ইতিমধ্যে প্রকল্পে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছে। রাজ্য দিচ্ছে না কেন?

শিল্প দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, ওএনজিসি’র প্রস্তাবিত প্রকল্প-এলাকার মধ্যে পড়ছে অন্ডালের বেসরকারি বিমানবন্দর, যাকে ঘিরে বিমাননগরীও গড়ে ওঠার কথা। বেঙ্গল এরোট্রপলিস প্রজেক্টস লিমিটেড (বিএপিএল)-এর প্রকল্পটির উপরে রাজ্যের প্রভূত আশা। যদিও ঘটনা হল, অন্ডাল বিমানবন্দরে আপাতত উড়ান বন্ধ। উপনগরীর কাজও তেমন এগোচ্ছে না। আর্থিক বোঝায় জর্জরিত বিএপিএল রাজ্যের কাছে ফের অর্থসাহায্য চেয়েছে। এখন ওই প্রকল্পে রাজ্যের অংশীদারি ১.২ শতাংশ। তা বাড়িয়ে ১১ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছে বিএপিএল। সে জন্য লগ্নি করতে হবে ৬০ কোটি টাকা। রাজ্য মন্ত্রিসভা সেই প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে।

প্রায় মুখ থুবড়ে পড়া এ হেন বেসরকারি প্রকল্পের ‘স্বার্থে’ রাজ্য কেন নতুন করে লগ্নি করছে, কেনই বা তার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থার বিশাল বিনিয়োগ হাতছাড়া করছে, তা নিয়ে প্রশাসনের আনাচে-কানাচে বিস্তর ধন্দ। নবান্নের কর্তাদের একাংশ বলছেন, বাম আমলে বিমানবন্দর প্রকল্প ছকার সময়ই জানা ছিল যে তার তলায় কয়লার সঞ্চয় রয়েছে। গ্যাস থাকার সম্ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়াও শুরু হয় তখন থেকেই। কিন্তু সেই আমলেও বেসরকারি প্রকল্পের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডারকে উপেক্ষা করা হয়েছিল। তৃণমূল জমানায় সেই ধারাই অব্যাহত রয়েছে।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে রিপোর্ট দিয়ে ওএনজিসি জানিয়েছে, রানিগঞ্জে সিবিএম তোলার ‘ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ তৈরি হয়ে গিয়েছে ২০১২-য়। কেন্দ্র অনুমতি দেয় ২০১৩-র এপ্রিলে। গোল বেঁধেছে ৭ বর্গ কিমি এলাকা নিয়ে, বিমাননগরীর জমি যার অন্তর্গত। ওখানে ১৩টি কূপ খোঁড়ার কথা। কিন্তু রাজ্য বা বিএপিএল— কেউ ওখানে গ্যাস তুলতে দিতে রাজি নয়।

রাজ্য, ওএনজিসি এবং বিএপিএল ক’দফা বৈঠকে বসেও বরফ গলাতে পারেনি। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে টাটা কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। তারা প্রস্তাব দেয়, উল্লম্ব (ভার্টিক্যাল) কূপের বদলে বিমাননগরীর গা বরাবর সমান্তরাল (হরাইজন্টাল) কূপ তৈরি হোক। ওএনজিসি জানিয়ে দিয়েছে, এ ভাবে গ্যাস উত্তোলন সম্ভব নয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরোক্ষে ওএনজিসি’র দিকেই আঙুল তুলছে বিএপিএল। সংস্থার এমডি পার্থ ঘোষের প্রশ্ন, ‘‘একটা সমাধান-সূত্র তো বেরিয়েছিল! এখন ওরা (ওএনজিসি) আবার বিতর্ক বাড়াচ্ছে কেন?’’

এমতাবস্থায় রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে জট ছাড়ানোর দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের উপরে ছেড়েছেন তেলমন্ত্রী। বাবুল এ দিন বলেন, ‘‘ওএনজিসি প্রচুর বিনিয়োগ করতে তৈরি। বিএপিএল’কে বুঝতে হবে, শিল্প হলে তবেই বিমান চলবে। শুনলাম, রাজ্য সরকার কলকাতা ও আশপাশে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ বাড়াবে। তা হলে ওএনজিসি’কে গ্যাস তুলতে দিচ্ছে না কেন?’’ রাজ্য শিল্প দফতরের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘ওএনজিসি’র সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে ২০১৩-য়। দরকারে আবার হতে পারে। আমরা লগ্নি হারাতে চাই না।’’

লগ্নি-লক্ষ্মী ধরে রাখতে নবান্ন কী পদক্ষেপ করে, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ONGC Andal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE