কলকাতার পাভলভ মানসিক হাসপাতালে রোগীদের নগ্ন করে রাখার ঘটনায় এক সময়ে শোরগোল পড়েছিল। এ বার কলকাতাতেই সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মর্গ থেকে সর্বসমক্ষে মৃত রোগিণীর সম্পূর্ণ নগ্ন দেহ তাঁর আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠল।
এসএসকেএম হাসপাতালের এই ঘটনার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মৃতার বাড়ির লোক। ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুরের বাসিন্দা ওই পরিবারের প্রশ্ন, ‘মৃতদেহের প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে আশা করা যায় না? কেন পরিবার ও পরিবারের বাইরের এক ঝাঁক মানুষের সামনে কারও দেহ নগ্ন অবস্থায় বার করা হবে? কেন এই সামান্য আব্রু বা মর্যাদাটুকু রাখার চেষ্টা হবে না?’
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গত ১৯ মে এই লিখিত অভিযোগ যাওয়ার পরেই স্বাস্থ্য দফতরে শোরগোল পড়ে যায়। তদন্তে জানা যায়, শুধু এসএসকেএমে নয়, রাজ্য জুড়ে সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে একই নিয়ম মানা হচ্ছে। স্বাস্থ্য খাতে কোটি-কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও তার সামান্য অংশ যে মৃতদেহ ঢাকার কাপড়ের জন্য ব্যয় করা উচিত, সেটা নীতি নির্ধারকদের মাথাতেই আসেনি।
এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র ও সুপার দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এমন নিয়ম যে চলছে, তা তাঁরা জানতেন না। তাঁদের মতে, পরিজনেরা কাপড় কিনে না দিলে মর্গের দেহ নগ্ন অবস্থায় ফেরত দেওয়া হবে, এটা নিয়ম হতে পারে না। প্রদীপ মিত্রের কথায়, ‘‘কেন ফরেন্সিকের চিকিৎসক বা ডোমেরা এত দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কাপড়ের জন্য আবেদন করেননি? সব কিছু তো কর্তৃপক্ষের মাথায় রাখা সম্ভব নয়।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘এই অভিযোগটা না পেলে হয়তো বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া পড়তই না। এখন ভাবতে গিয়ে আমাদের মনে হচ্ছে, যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। নিজেদের প্রিয়জনের দেহ নগ্ন অবস্থায় পেলে তো আমাদেরও প্রচণ্ড খারাপ লাগত।’’
এসএসকেএমের ফরেন্সিকের প্রধান বিশ্বনাথ কাহালি অবশ্য এর মধ্যে নিজেদের অন্যায় দেখছেন না। তাঁর মতে, ‘‘চিরকাল সব সরকারি হাসপাতালে এটাই হয়ে এসেছে। সরকার কাপড় না দিলে আমরা কোথা থেকে দেব! কাপড় ছাড়িয়েই মর্গে দেহ রাখার নিয়ম। নয়তো পচন শুরু হয়ে যায়। বাড়ির লোক ডেথ সার্টিফিকেট নিতে গেলে ওয়ার্ডমাস্টারেরাই তাঁদের চাদর বা প্লাস্টিকের শিট কিনে নিতে বলেন। সেটা দিয়েই দেহ ঢাকা হয়। পেশেন্ট-পার্টি কিছু কিনে না দিলে নগ্ন দেহই দেওয়া হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মৃতদেহ নিয়ে অভিযোগটি জানিয়েছে জামশেদপুরের পণ্ডা পরিবার। তাঁদের পরিবারের বধূ বছর সাতচল্লিশের অপর্ণা পণ্ডা গত ৩০ মার্চ নিমপাতা পাড়তে গিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে যান বলে দাবি। এই ঘটনায় তাঁর শিরদাঁড়া ভেঙে যায়। ১৩ এপ্রিল তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। ৪ মে তাঁর মৃত্যু হয়। যেহেতু ছাদ থেকে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল তাই কলকাতা পুলিশ প্রথমে জানায়, ময়না-তদন্ত করতে হবে। সেইমতো দেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।
পরে জামশেদপুর পুলিশ জানায়, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি, তাই ময়না-তদন্ত দরকার নেই। তখন দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অপর্ণাদেবীর স্বামী কানাইচন্দ্র পণ্ডা ও দেওর বলাই পণ্ডার অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে পরিবারের ছোট-বড় অনেকে মর্গের সামনে ছিলেন। ছিলেন একাধিক পুলিশকর্মী, চিকিৎসক, ডোম ও অন্য রোগীদের পরিজন। সকলের সামনে অপর্ণার নগ্ন দেহ তাঁদের হাতে দেওয়া হয়। তাঁরা জানান, এই অবস্থা দেখে অসুস্থ বোধ করছিলেন। কানাইচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছি, এই রাজ্যের সরকারের কি মানবিকতা বলে কিছু নেই?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy