Advertisement
১৯ মে ২০২৪

বাংলার দুর্ভাগ্য আধাসেনা লাগে, বলছেন সুশান্ত

শুধু রাজ্যের পুলিশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পুরসভা বা পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসনের ভোটও করানো যায় না বলে আবার জানালেন রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য যে, এখানে নির্বিঘ্নে ভোট করতে ভিন্‌ রাজ্য থেকে বাহিনী আনতে হয়। শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। কিন্তু এ কথা বলছেন কেন, তার ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪১
Share: Save:

শুধু রাজ্যের পুলিশ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পুরসভা বা পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় প্রশাসনের ভোটও করানো যায় না বলে আবার জানালেন রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য যে, এখানে নির্বিঘ্নে ভোট করতে ভিন্‌ রাজ্য থেকে বাহিনী আনতে হয়। শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। কিন্তু এ কথা বলছেন কেন, তার ব্যাখ্যা দেননি তিনি।

স্কুল স্তরের পরীক্ষার মধ্যে তিনি ভোটের প্রচারে মাইক বাজানোর অনুমতিটা রাজনৈতিক দলের চাপেই দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই বিতর্কের নিরসন এখনও হয়নি। তা নিয়ে চলছে মামলাও। তার পরে সুশান্তবাবু এ দিন বাংলার দুর্ভাগ্যের কথা তুলে নতুন কিছু প্রশ্ন ও বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যাবেন না ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বারে বারেই আধাসেনার তত্ত্বাবধানে পুরভোট করার পক্ষে সওয়াল করে এসেছেন। পুরভোটে যাঁরা শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন, সেই বিরোধীরা এটাকে লুফে নিয়েছেন। তাঁরা নিজেরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি তো জানাচ্ছেনই, সেই সঙ্গে কমিশনার কেন সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে কেন্দ্রের কাছ থেকে আধাসেনা আদায় করে আনছেন না, সেই প্রশ্নও তুলছেন। শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ উঠছে, নিজের দায় এড়াতেই কমিশনার এখন এই ধরনের মন্তব্য করছেন।

এ দিন সুশান্তবাবুর কাছে প্রশ্ন ছিল, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্যান্য রাজ্যে স্থানীয় প্রশাসনের ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার হয় না কেন?

সরাসরি জবাব এড়িয়ে কমিশনার বলেন, ‘‘আমি এখনও মনে করি, পুরভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে ভোটারদের মনে আস্থা জাগত। তাই রাজ্যকে চিঠি লিখে বলেছিলাম, কেন্দ্রীয় বাহিনী ছাড়া কোনও মতেই অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’’

কিন্তু কেন তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে আস্থা রেখেছিলেন? রাজ্য পুলিশে তাঁর ভরসাই বা নেই কেন?

জবাব দেননি সুশান্তবাবু। বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী যখন পাওয়া যাবে না, তখন রাজ্য পুলিশ দিয়েই ভোট করাতে হবে। কারণ, আইনে এর কোনও বিকল্প নেই।’’ নবান্নের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, প্রতি বারেই রাজ্য সরকার নিজের পুলিশ দিয়ে ভোট করতে চায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশনই আপত্তি তোলে।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের মন্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকারের মন্তব্য, অন্য রাজ্যে এখানকার মতো জঙ্গলের রাজত্ব নেই। তাই স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দরকার হয় না। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমরা ওঁকে (নির্বাচন কমিশনারকে) বলেছিলাম, সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। উনি তা না-করে নিজের দায় এড়াতে এখন এ-সব কথা বলছেন।’’ একই সুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবের বক্তব্য, নির্বাচন কমিশনার এখন এ-সব বলছেন। কিন্তু ওঁর এক্তিয়ারের মধ্যে যে-সব ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে, সেগুলিও উনি করেননি। একের পর এক হামলা হচ্ছে, রাজ্যের মন্ত্রীরা আচরণবিধি চালু থাকা সত্ত্বেও সরকারি গাড়িতে দলের কাজ করছেন— অভিযোগ করা সত্ত্বেও কমিশনার কোনও ব্যবস্থা নেননি। ‘‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে কি,’’ প্রশ্ন তুলেছেন রবীনবাবু। সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে এ দিনই কমিশনে গিয়েছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান কিছু ক্ষমতা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটের জন্য উনি তো সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বলতেই পারতেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার। তার জন্য সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রকে নির্দেশ দিক। কিন্তু উনি কিছুই করেননি।’’

তবে শাসক শিবিরের তরফে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করছেন, ‘নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত ভূমিকা পালন করায় আগেও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এ বারেও তা-ই হবে। ‘‘অবাধ নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দরকার। শুধু বন্দুক বা বাহিনী দিয়ে সুষ্ঠু ভোট হয় না,’’ বলেছেন পার্থবাবু।

সুশান্তবাবু এ দিন তাঁর পূর্বসূরি মীরা পাণ্ডের সুরে পুর-নির্বাচনী আইন সংশোধনের উপরে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘‘পুর-নির্বাচনের দিন ঠিক করার অধিকার এবং নির্বাচনী কাজের জন্য সরকারি কর্মীদের কমিশনে ডেপুটেশনে পাঠানোর আইন যত দিন না তৈরি হচ্ছে, তত দিন কমিশনকে রাজ্য সরকারের কথাই শুনতে হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, সেই আইন বিধানসভায় সংশোধন করতে হবে। কমিশনের কিছু করার নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE