ব্রায়ান সালমি
ঠিক যেন ক্রিকেটের প্রবাদপুরুষ ডব্লিউ জি গ্রেস!
তবে নিজেকে গডজ়িলা বা সেটান (শয়তান) বলতেও আপত্তি নেই তাঁর। মধ্য পঞ্চাশের ব্রায়ান সালমির বিষয়ে আর যা জানার নেট ঘাঁটলেই মালুম হবে। বইমেলার পার্বণে মত্ত বাংলামুলুকে ঘটছে তাঁর বহু দিনের স্বপ্নপূরণ। আর কিছু দিনের মধ্যেই প্রথম বইয়ের লেখক হিসেবে তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন।
এই বইটার আশায় শ’খানেক এজেন্টকে লিখে-লিখে আঙুলে ব্যথা হয়েছে ব্রায়ানের। নামমাত্র উত্তরটুকুও কার্যত মেলেনি। বইমেলার কিছু দিন আগে বোলপুরে অনামা তরুণ প্রকাশক, কলেজশিক্ষক পরন্তপ চক্রবর্তীর সঙ্গে ভাব হতেই স্বপ্নপূরণ। আযৌবন খ্যাপাটে পরমাণু-দূষণ বিরোধী আন্দোলনকারী ব্রায়ানের লেখায় দুই কিশোর-কিশোরী রিফ ও র্যাফের রূপকথা। স্রেফ ভালবাসার জোরেই যারা পরমাণু-শক্তি, পৃথিবীর উষ্ণায়ন বা ঘৃণার সঙ্গে লড়াই করে।
শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে চিত্রশিল্পী সুধীররঞ্জন খাস্তগিরের কন্যা শিল্পী-পরিবেশকর্মী শ্যামলী খাস্তগিরের বাড়িতে সাহেবকে দেখেন পরন্তপেরা। শ্যামলীদেবীর পুত্র আনন্দ (যিনি চিনা ভবনের প্রতিষ্ঠাতা, রবীন্দ্র-সুহৃদ তান ইয়ুন শানের নাতিও) ব্রায়ানের বন্ধু। তাঁর সূত্রেই বোলপুরে ঘাঁটি গেড়েছেন কানাডার ভবঘুরে।
এ দেশের বইব্যবসার গণতান্ত্রিক চরিত্রই তাঁর মনপসন্দ, বলছিলেন ব্রায়ান। তাঁর কথায়, ‘‘লেখক-প্রকাশকের এমন সহজ যোগাযোগ দারুণ! ইউরোপ-আমেরিকায় এজেন্টরা লাঠিয়ালের মতো লেখকদের প্রকাশকদের থেকে আড়াল করে রাখে। বই বিক্রি হবে কি হবে না, আশঙ্কায় লেখকদের সৃষ্টিকে আমলই দিতে চান না।’’ ব্রায়ানের ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ইংরেজি-বাংলায় দ্বিভাষিক উপন্যাসকার কুণাল বসুও। যেমন, স্বয়ং টি এস এলিয়টও জর্জ অরওয়েলের ‘অ্যানিমাল ফার্ম’-এর পাণ্ডুলিপি ছাপতে রাজি হননি। তবে কুণালের মতে, ‘‘বই বিপণনের যোগসূত্র হিসেবে জরুরি এজেন্টদের উপস্থিতি।’’ ব্রায়ানের অবশ্য দাবি, প্রকাশক-পরিচালক না-মিললেও তাঁর কম্পিউটারে তৈরি আরও খান সতেরো, বই এবং চিত্রনাট্য। চোখ টিপে হাসলেন, ‘‘মাসে দশ ঘণ্টা রুটিরুজির জন্য বরাতমাফিক লেখালেখি করি। বাকিটা নিজের ইচ্ছেয় লেখা।’’
ভবঘুরে ব্রায়ানের জীবনটাই অবশ্য বইয়ের খোরাক। গত শতকে কানাডার রাজনীতিতে ‘হাড়জ্বালানে’ রাইনোসেরাস পার্টির হয়ে বার বার ভোটে লড়েছেন। জেতার কথা ছিল না, জেতেনওনি, কিন্তু বড় দলের ভোট কেটেছেন। কানাডায় ভোটপ্রার্থীদের ১০০০ ডলার জমা দেওয়ার আইনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক প্রধান রানির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছিলেন। এজলাসে ব্রায়ানকে জোকারের ছদ্মবেশ দেখে জজসাহেব ঘাবড়ে যান। নাম পাল্টে ‘সেটান’ হওয়া নিয়েও জোর বিতর্ক।
দুষ্টু বুদ্ধিতে ভরপুর খোলা গলার রংদার চরিত্রটিকে অবশ্য চেনে না বইমেলার বাঙালি। তবু ভিড়ের মধ্যেও অনায়াসে নজর কাড়ছিল বিশাল বপু লম্বা দাড়ি অবয়ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy