Advertisement
০২ মে ২০২৪

পাহাড়ের হেঁশেলে গোপনে পাঁঠা-মুরগি

তা হলে নানা এলাকায় পাঁঠা, খাসি, ইত্যাদি নিয়ে গিয়ে তা কেটে বিলি করার আড়ালে মোর্চার হাত নেই? মোর্চা নেতা বিনয়ের মন্তব্য, ‘‘এই যে সকলে মিলে মাংস ভাগ করে নেওয়ার ছবি, এটাই তো বুঝিয়ে দিচ্ছে পাহাড়বাসী আন্দোলন সফল করতে কতটা একজোট।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০৩:২২
Share: Save:

রাত ৯টা বাজলেই চুপিসাড়ে খুলে যাচ্ছে পাহাড়ের বহু মুদি দোকান। চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আরও একটু রাত বাড়লে বর্ষার পাহাড় ঠেঙিয়েই ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে খাসি-মুরগি।

মুখে কেউই কিছু স্বীকার করছেন না, কিন্তু মুদি দোকান খোলা থেকে হেঁসেলে মাংস পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত এই সব কাজের পিছনে যে মোর্চার কিছু নেতারই হাত রয়েছে, তা দলের অন্দরে কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে। আচমকা বন্‌ধ ডেকে ২৩ দিন ধরে তা ‘সফল’ করতে পরিকল্পনা মতোই তা করা হচ্ছে। নেতারা অবশ্য প্রশ্ন করলে ফোনে হেসে ফেলছেন। কেউ ফোন ধরে সব শুনে কেটে দিচ্ছেন। মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক বিনয় তামাঙ্গ অবশ্য বলেন, ‘‘দলের তরফে যতটা সম্ভব আনাজ বিলি হচ্ছে। কেউ যাতে না খেয়ে না থাকেন, সেটাও দেখা হচ্ছে। তবে রাতে ১ ঘণ্টা মুদি দোকান খোলার বিষয়টি ঠিক জানি না। সেটা একেবারেই দোকানি ও পাড়া-পড়শিদের সম্পর্কের ব্যাপার।’’

তা হলে নানা এলাকায় পাঁঠা, খাসি, ইত্যাদি নিয়ে গিয়ে তা কেটে বিলি করার আড়ালে মোর্চার হাত নেই? মোর্চা নেতা বিনয়ের মন্তব্য, ‘‘এই যে সকলে মিলে মাংস ভাগ করে নেওয়ার ছবি, এটাই তো বুঝিয়ে দিচ্ছে পাহাড়বাসী আন্দোলন সফল করতে কতটা একজোট। কতটা স্বার্থত্যাগে রাজি।’’ পাহাড়ের পাড়ার ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, রাতে দোকান খোলা হলে সেখানে মোর্চার প্রথম বা মাঝারি স্তরের নেতাদের পরিবারের অনেককেও দেখা যাচ্ছে। বন্‌ধের মধ্যে মোর্চার আনাজ, মাংসের জোগানের বিষয়টি অবশ্য নতুন কিছু নয়। অতীতে পাহাড়ে লাগাতার বন্‌ধে জিএনএলএফ নেতারাও এমনটাই করতেন। তখন নেপালের পশুপতি বাজার থেকে চোরাপথে ছাগল, পাঁঠা, খাসি ইত্যাদি আনা হতো দার্জিলিঙে। পাহাড়ের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, জিএনএলএফের জুতোতেই পা গলিয়ে বন্‌ধ সফল করছে মোর্চা।

বস্তুত, আচমকা বন্‌ধে পাহাড়ে দৈনন্দিন খাবারদাবার বাড়ন্ত। মুদি দোকানে চাল-ডাল-তেল-নুন প্রায় শেষ। ডিম-আলু-পেঁয়াজও বেশি নেই। রাতের অন্ধকারে যে কয়েক গাড়ি আনাজ উঠছে, তাই নানা ভাবে শহর-গ্রামের বাছাই দোকানে যাচ্ছে।

তবে চাল-আটার আকাল এখনও হয়নি। কারণ, পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামেও বর্ষায় ধসের কথা মাথায় রেখে প্রায় ৩ মাসের চাল-ডাল মজুত রাখাই রেওয়াজ। সেখানে আমিষের আকাল। গরুবাথান, কার্সিয়াঙের ডাউহিল বা কালিম্পঙের আলগাড়ার বাসিন্দারা জানান, পোষা মুরগি, হাঁসও প্রায় নেই। নানা ভাবে সে সব জায়গায় যে ছাগল-পাঁঠা, খাসির মাংস পৌঁছচ্ছে, সেগুলোই একমাত্র আমিষ। তাই কোথায় কবে মাংস বিলি হতে পারে, সেই খবর রাখতে তৎপর সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE