Advertisement
১৯ মে ২০২৪

উপাচার্য পদ ছাড়তে চান সরকারের লোক মারজিত

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি তো সরকারেরই লোক।’’ পরেও নানান প্রসঙ্গে শাসক-ঘনিষ্ঠতার কথা কবুল করেছেন সুগত মারজিত। তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয় দফায় সরকার গড়ার পরে সেই মারজিতই আর অস্থায়ী উপাচার্যের পদে থাকতে চাইছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৪:২৬
Share: Save:

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি তো সরকারেরই লোক।’’ পরেও নানান প্রসঙ্গে শাসক-ঘনিষ্ঠতার কথা কবুল করেছেন সুগত মারজিত। তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিতীয় দফায় সরকার গড়ার পরে সেই মারজিতই আর অস্থায়ী উপাচার্যের পদে থাকতে চাইছেন না। ‘সরকারের লোক’ হয়েও সুগতবাবু কেন উপাচার্য-পদ ছাড়তে চাইছেন, প্রশ্ন উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই।

আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে চিঠি দিয়ে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে দিয়েছেন সুগতবাবু। অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে তাঁর এক বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ জুলাই। সুগতবাবু আচার্যকে লিখেছেন, উপাচার্যের পদে তিনি আর মেয়াদ বৃদ্ধি চান না। যে-পদ থেকে লিয়েন নিয়ে উপাচার্য হয়েছেন, সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে সেই ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া চেয়ার প্রফেসর’-এর পদেই ফিরতে চান।

২০১৫-র জুলাইয়ে সুরঞ্জন দাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পরে মারজিতকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য করা হয় ছ’মাসের জন্য। পরে মেয়াদ বাড়ে আরও ছ’মাস। সুগতবাবু কেন আর মেয়াদ বৃদ্ধি চান না, তা নিয়ে বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষা শিবিরে। কারণ, যে-ভাবে তিনি শিক্ষক-নিগ্রহে অভিযুক্ত শাসক দলের ছাত্রনেতাকে দিয়ে ক্ষমা চাইয়েছেন, ভোটের জন্য পরীক্ষা পিছোনোর দাবি যে-ভাবে নস্যাৎ করেছেন এবং হাজিরা কম থাকায় পরীক্ষায় বসার অনুমতি না-দেওয়ার সিদ্ধান্তে যে-ভাবে অনড় থেকেছেন, তাতে বিকাশ ভবনে তাঁর খাতির বাড়ছিল বই কমছিল না।

সুগতবাবু নিজেকে কোনও রকম বিতর্কে জড়াতে রাজি নন। উপাচার্যের পদ ছাড়ার কারণ হিসেবে তিনি শুধু তাঁর আগেকার কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির বাধ্যবাধকতার কথা বলছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি থেকে লিয়েন নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। সেই চাকরির অনেক বিধিনিষেধ, অনেক নিয়মনীতি রয়েছে। ওই চাকরিটা বাঁচাতে গেলে ১৫ জুলাই আমাকে সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে ফিরে যেতেই হবে। এ ছাড়া উপাচার্যের পদ ছাড়ার আর কোনও কারণ নেই।’’ সুগতবাবু জানান, তিনি এক বার ছ’মাস লিয়েন নিয়েছিলেন। অস্থায়ী উপাচার্যের পদে ছ’মাস মেয়াদ বৃদ্ধির পরে লিয়েনেরও মেয়াদ বাড়াতে হয় ছ’মাস। কিন্তু এর পরে আর লিয়েন বাড়ানো সম্ভব নয়। সুগতবাবুর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, আচার্যের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বেশ কয়েক দিন আগেই। তাতে সুগতবাবু লিখেছেন, ‘আগামী ১৪ জুলাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে আমার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ১৫ জুলাই আমি পুরনো জায়গায় ফিরে যেতে চাই।’

শিক্ষক ও কর্মীর চূড়ান্ত অভাব ছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সমস্যার শেষ নেই। এই মুহূর্তে উপাচার্য, রেজিস্ট্রারের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পদেই অস্থায়ী ভাবে নিযুক্ত লোকেরা আছেন। মেয়াদ শেষ সেনেট, সিন্ডিকেটেরও। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত না-হওয়া সত্ত্বেও পূর্বতন ফিনান্স অফিসার শাস্তি ভোগ করছেন। এত বড় প্রতিষ্ঠানে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই নেওয়া যাচ্ছে না।

এই অবস্থায় সুগতবাবু বিদায় নিলে কী হবে? সার্চ কমিটি গড়ে ওই সময়ের মধ্যে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা যাবে কি? নাকি অন্য কাউকে অস্থায়ী উপাচার্য করা হবে? এই সব প্রশ্নকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পুরোপুরি অনিশ্চয়তার বাতাবরণ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, সুরঞ্জন দাস (পূর্বতন উপাচার্য) তাঁর মেয়াদ (২০১৬ সালের জুলাই) না-ফুরোনো পর্যন্ত থাকুন। এক বছরের মধ্যে সার্চ কমিটি গড়ে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হোক। কিন্তু তা হয়নি। অস্থায়ী উপাচার্য আমাদের স্থায়ী সমস্যাগুলির কোনও সমাধানই করতে পারেননি।’’

বিকাশ ভবনের খবর, নিয়ম অনুযায়ী সার্চ কমিটিতে সেনেটের এক জন সদস্যকে রাখা হয়। কিন্তু এখন তো সেনেটই নেই। তাই সার্চ কমিটিও গড়া যাচ্ছে না। সরকারের মনোনীত কাউকেই আবার অস্থায়ী উপাচার্যের পদে বসানো হতে পারে বলে মনে করছে শিক্ষক ও কর্মী মহল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরের খবর, স্থায়ী উপাচার্য-পদে প্রথম পছন্দ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন সুগতবাবুর নাম পাঠানোর ব্যাপারে মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, সুগতবাবুর মেয়াদ আরও ছ’মাস বাড়িয়ে স্থায়ী উপাচার্যের জন্য সার্চ কমিটি গড়া হবে। সুগতবাবুর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে মেয়াদ ছ’মাস বৃদ্ধির সময়েই তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘এটাই শেষ।’’

কী বলছেন শিক্ষামন্ত্রী?

‘‘মাঝখানে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা সকলেই ব্যস্ত ছিলাম। অস্থায়ী উপাচার্য দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছেন। গোটা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে,’’ বলছেন শিক্ষামন্ত্রী। সেনেট ও সিন্ডিকেটের মেয়াদ ফুরিয়েছে ঠিকই। তবে সেই ব্যাপারে সরকারের কিছু করণীয় ছিল না বলে জানিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। ‘‘এই অবস্থায় সার্চ কমিটি গড়া যে সম্ভব ছিল না, সেটা সকলকে বুঝতে হবে,’’ বলে দিয়েছেন মন্ত্রী।

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে অস্থায়ী লোক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কী করে? পার্থবাবুর দাবি, উপাচার্য-রেজিস্ট্রার ছাড়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের উঁচু স্তরে আর কোনও পদে অস্থায়ী দায়িত্বে কেউ নেই।

শিক্ষা দফতর এখন দু’টি পথ দেখছে। অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেওয়া। তার পরে সার্চ কমিটি গড়ে নিয়মমাফিক নতুন উপাচার্য নিয়োগ করা। l তার আগে কোনও সহ-উপাচার্যকে দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু এই বিষয়ে শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে সরকারি সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vice-chancellor Calcutta Univercity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE