ফল বেরনোর পর উচ্ছ্বাস।
চারশোয় চারশো পেয়ে এ বছর আইএসসি পরীক্ষায় নম্বরের এভারেস্ট-শৃঙ্গে আরোহণ করেছিলেন বাংলার দেবাংকুমার আগরওয়াল। আর মাধ্যমিকে মোট ৭০০-র মধ্যে ৬৯৪ পেয়ে রেকর্ড করল পূর্ব মেদিনীপুরের সৌগত দাশ। ৬৯১ পেয়ে যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় হয়ে রেকর্ড করেছে ফালাকাটা গার্লস হাইস্কুলের শ্রেয়সী পাল এবং কোচবিহারের ইলাদেবী গার্লস হাইস্কুলের দেবস্মিতা সাহাও। মাধ্যমিকে পাশ (৮৬.০৭%)-এর হারেও বিগত সব বছরকে টেক্কা দিয়েছে ২০১৯। এবং গত কয়েক বছরের মতো এ বারেও ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।
মঙ্গলবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বার পাশের হার পর্ষদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ৮৬.০৭%।’’ গত বছর ছিল ৮৫. ৪৯%। ৬৯৪ অর্থাৎ ৯৯.১৪% নম্বর পেয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মহম্মদপুরের সৌগত প্রথম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাধ্যমিকে সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে বলে জানান পর্ষদ-প্রধান। গত বছরের প্রথম সঞ্জীবনী দেবনাথ পেয়েছিলেন ৬৮৯।
সিবিএসই এবং আইসিএসই পরীক্ষায় শীর্ষ স্থানাধিকারীরা অনেক সময়েই প্রায় পুরো নম্বর পান। বাংলায় তেমনটা না-হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবার আফসোস করেছেন। তাঁর বক্তব্য, এ রাজ্যে মূল্যায়নে কৃপণতা আছে। তবে গত বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের গ্রন্থন সেনগুপ্ত পেয়েছিলেন ৯৯.২% নম্বর। এ বার মাধ্যমিকেও সৌগতের প্রাপ্ত নম্বরের হার ৯৯% ছাড়িয়ে গেল। পর্ষদের ইতিহাসে এই প্রথম। পর্ষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৩ সালে পাশের হার ছিল ৬০.৭৬%। ১৯৮৮ সালে তা হয় ৫০%। ক্রমে বাড়তে বাড়তে এ বার ৮৬.০৭%।
সৌগতের এভারেস্ট-সমান সাফল্য ছাড়াও এ বার মেধা-তালিকায় জেলার পরীক্ষার্থীদেরই জয়জয়কার। মেধা-তালিকায় প্রথম থেকে দশম স্থানে রয়েছে মোট ৫১ জন পড়ুয়া। তৃতীয়ও হয়েছে দু’জন। রায়গঞ্জ গার্লস হাইস্কুলের ক্যামেলিয়া রায় এবং
শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের ব্রতীন মণ্ডল। দু’জনেরই প্রাপ্তি ৬৮৯। দশম স্থান (৬৮১) অধিকার করে কলকাতার মুখ রেখেছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠের সোহম দাস।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, কলকাতার বেশির ভাগ নামী স্কুলই এখন সিবিএসই অথবা আইসিএসই বোর্ডের অধীন। অভিভাবকেরাও ইংরেজি মাধ্যমের ওই সব স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়াতে ভীষণ ভাবে আগ্রহী। সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এঁটে ওঠার তাগিদেও অনেকে সিবিএসই বোর্ডে ভর্তি হতে আগ্রহ দেখায়। এ বারের প্রথম সৌগতও জানিয়েছে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হতে সে কলকাতার একটি বেসরকারি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে গিয়েছে।
গত বছরের তুলনায় এ বার মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছু কম। তবে এ বারেও ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রের তুলনায় ১২.৫৬% বেশি। ২০১৭ সালে ছিল ১০.৭৬% বেশি। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ১১.৯১%। এ বার সেটা আরও বাড়ল। তবে ছাত্রীদের পাশের হার ছাত্রদের তুলনায় কিছুটা কম। মুসলিম ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও মুসলিম ছাত্রদের তুলনায় বেশি। ছাত্রী এক লক্ষ ৭১ হাজার ৬৭৯ জন। ছাত্র ৯৯ হাজার ৯৯৬ জন।
বিজ্ঞান বিষয়ে ‘এএ’ (৯০-১০০ নম্বর) পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা গত বারের তুলনায় এ বছর বেশ খানিকটা কমে গিয়েছে। গত বার গণিতে ‘এএ’ পেয়েছিল ৩০ হাজার ৬১৪ জন। এ বার সংখ্যাটা কমে হয়েছে ২২ হাজার ৬৫৩। ভৌতবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞানেও ‘এএ’ প্রাপকের সংখ্যা কম। ইতিহাসেও গত বারের তুলনায় ‘এএ’ প্রাপকের সংখ্যা কম। তবে প্রথম ভাষা, দ্বিতীয় ভাষা এবং ভূগোলে ‘এএ’ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে। দ্বিতীয় ভাষায় খুবই কম ‘এএ’ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল গত বার।
এ বছর পাশের হার সব থেকে বেশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়— ৯৬. ১০%। তার পরে রয়েছে কলকাতা— ৯২.১৩%। এর পরে আছে পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, হাওড়া, কালিম্পং। পর্ষদ-সভাপতি জানান, এ বছর দৃষ্টিহীন ১৮৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৭৫ জন পাশ করেছে। বধির ১৫২ জনের মধ্যে পাশ করেছে ১৩২ জন। অন্যান্য প্রতিবন্ধী ৪০১ জনের মধ্যে ৩৫২ জন পাশ করেছে।
এ বার কারও ফল অসম্পূর্ণ নেই বলে জানান পর্ষদ-প্রধান। পরীক্ষা বাতিল হয়েছে ৭৩ জনের। তাদের মধ্যে রয়েছে মোবাইল আনা বা তা ব্যবহারের ঘটনায় অভিযুক্তেরা। এ বার জীবনবিজ্ঞান ছাড়া প্রতিটি বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর কিছু পরেই হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পর্ষদ-সভাপতি এ দিন জানান, কোন হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে এ-সব হচ্ছিল, তা শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy