তাজপুর সৈকত। ফাইল চিত্র।
আয়ুষ্মান ভারতের পর তাজপুর বন্দর!
কয়েক দিন আগেই কেন্দ্রের ঘোষণা করা স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসার কথা জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বার কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগের বন্দর প্রকল্প থেকেও সরে এল রাজ্য। বুধবার নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তাজপুর বন্দর আমরাই গড়ব। দু’বছর ধরে কেন্দ্র কিছুই করেনি। তাই ঠিক করেছি, রাজ্যই এই বন্দর নির্মাণ করবে।’’ মমতার পরপর এই দুই ঘোষণা লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের মধ্যে দ্বৈরথ আরও তীব্র করবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
প্রায় ৭০০ কোটি টাকা খরচ করে তাজপুর বন্দর নির্মাণে যে স্পেশ্যাল পারপাস ভেহিক্ল (এসপিভি) সই হয়েছিল তাতে কেন্দ্রের অংশীদারিত্ব ছিল ৭৪%। বাকি ২৬% ছিল রাজ্যের হাতে। সেই চুক্তিতেই বলা আছে, তাজপুর বন্দরের পর সাগরে আরও একটি বন্দর নির্মাণ করা হবে। সেই বন্দর নির্মাণের আগেই মুড়িগঙ্গা নদীর উপর রেল-কাম-রোড সেতু তৈরি করে দিতেও রাজি হয়েছিল কেন্দ্রীয় জাহাজ ও সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক।
রাজ্যের এক কর্তা জানান, রাজ্যের মূল লক্ষ্য ছিল মুড়িগঙ্গার সেতুটি কেন্দ্রীয় খরচে তৈরি করে নেওয়া। সেই কারণেই তাজপুরের রাশ দিল্লির হাতে ছাড়তে রাজি হয়েছিল নবান্ন। কিন্তু দিল্লির সরকার সেতুটি গড়তে উদ্যোগী হয়নি, তাজপুর নিয়েও কোনও কথা রাজ্যকে জানায়নি। ফলে রাজ্যের কাছে কোনও উপায় রইল না। উল্লেখ্য, সম্প্রতি সাগরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুড়িগঙ্গা সেতুটি রাজ্যই নির্মাণ করবে বলে ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পডু়ন: দলত্যাগীরা ব্রিগেডে, অস্বস্তিতে কংগ্রেস
কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে আইনি সমস্যা হবে না তো? অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, ‘‘তাজপুর রাজ্য নিজে করবে, এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। বাকি সব কিছু প্রক্রিয়াগত ভাবে ঠিক হবে। তাজপুরে বন্দর নির্মাণের ব্যাপারে যে বিজ্ঞপ্তিটি জারি হয়েছিল, তার মেয়াদ ফুরোয়নি। ফলে নীতিগত ভাবে রাজ্যের বন্দর নির্মাণে বাধা নেই।’’ কলকাতা বন্দরের চেয়ারম্যান বিনীত কুমার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনেছি। কোনও মন্তব্য করব না।’’
তবে বন্দর কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, চুক্তি সই হয়েছিল কী ভাবে বন্দর নির্মাণ হবে তা ঠিক করার জন্য। রাজ্য বেরিয়ে গেলে সেই চুক্তির কোনও মূল্য থাকে না। তবে তাজপুরে বন্দর নির্মাণ করতে হলে যে সমুদ্র এবং নদীর যে এলাকা ব্যবহৃত হবে, তা কলকাতা বন্দরের জলসীমার মধ্যে। তার জলসীমা ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বন্দরই ঠিক করবে।
রাজ্যের অভিযোগ, তাজপুর নিয়ে দু’বছরে কেন্দ্র কিছুই করেনি। বন্দর পাল্টা জানিয়েছে, চুক্তি সই হওয়ার পর মে-জুন মাসে উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। তারা খসড়া এপ্রাইজাল রিপোর্ট পেশ করেছে।
তার পর বন্দরের সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। যে এলাকায় বন্দর হবে, সেখানকার ভূতাত্ত্বিক ও সামুদ্রিক প্রকৃতি নিয়ে সমীক্ষার কাজ শেষের পথে। এ মাসের শেষে উপদেষ্টা সংস্থা খসড়া টেকনো কমার্শিয়াল ফিজিবিলিটি রিপোর্ট জমা দেবে। তার পরেই বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি হবে। ডিপিআর তৈরির সময়েই রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল বলে জানাচ্ছে বন্দর সূত্র।
অমিতবাবু এ দিন জানান, ১৫-১৬ মিটার নাব্যতার তাজপুর বন্দরের জন্য কোনও জমি নিতে হবে না। রেল, রাস্তা পরিকাঠামো নির্মাণেও সামান্যই খরচ হবে। রাজ্যের নিযুক্ত উপদেষ্টা সংস্থা তেমনই জানিয়েছে। এখন নতুন করে তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারাই বন্দর নির্মাণের কৌশল রাজ্যকে জানাবে। তার পর মুখ্যমন্ত্রী এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy