Advertisement
১৬ মে ২০২৪

BJP: অর্থসঙ্কটে বঙ্গ বিজেপি, খরচ কমাতে দিলীপের নির্দেশে সঙ্কুচিত হচ্ছে হেস্টিংসের দফতর

হেস্টিংসে মোট পাঁচটি তলা নিয়ে নির্বাচনী দফতর সাজিয়েছিল বিজেপি। এখন সেটা কমে দু’টি তলা। আরও একটি তলা খুব তাড়াতাড়ি কমাতে হতে পারে।

রাজ্য সংগঠনের খরচ কমাতে মরিয়া দিলীপ ঘোষ।

রাজ্য সংগঠনের খরচ কমাতে মরিয়া দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২১ ১৭:২৩
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে কলকাতার হেস্টিংস এলাকায় বড় আকারের দলীয় দফতর তৈরি করেছিল রাজ্য বিজেপি। ভোট মিটে যাওয়ার পরে একটু একটু করে সেই দফতরের সঙ্কোচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, মূলত অর্থসঙ্কটেই এই সঙ্কোচন। জানা গিয়েছে, সর্বভারতীয় সংগঠনেরকিছুটা সহায়তা পাওয়া গেলেও দল পরিচালনার জন্য মূল অর্থ সংগ্রহের কাজটা রাজ্যস্তরেই করতে হয়। কিন্তু তা এখন অনেকটাই অনিয়মিত। তার উপরে বিধানসভা নির্বাচনে বড় মাপের খরচ হয়েছে। এখন তাই দলীয় দফতর সঙ্কোচন করে কিছুটা হলেও খরচ কমাতে চান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁরই নির্দেশে ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত হেস্টিংসের বাড়িতে দুটো তলা নিয়েই চলবে দফতর। একই সঙ্গে কী ভাবে অর্থ সংগ্রহ বাড়ানো যায় তা নিয়েও দলীয় নেতাদের দিলীপ সক্রিয় হতে বলেছেন বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর।

বিজেপি-র অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া মূলত তিন রকমের। প্রথমত, চাঁদা তোলার রসিদ বই ও কুপনের মাধ্যমে কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের থেকে টাকা নেওয়া। রাজ্য বিজেপি-র নামে চেকের মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ হয়। বিজেপি-কে টাকা দিলে আয়করে ছাড় মেলে বলে অনেকেই বড় অঙ্কের চাঁদা দেন। দ্বিতীয়ত, প্রতি বছর ১১ ফেব্রুয়ারি দীনদয়াল উপাধ্যায়ের মৃত্যুদিনে‘সমর্পন দিবস’ পালন করে বিজেপি। ওই দিন বিজেপি-র নেতা-কর্মীরা দলের তহবিলে টাকা দেন। এখান থেকেও বড় অঙ্কের টাকা জমা হয়। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের কারণে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সেই কর্মসূচি পালিত হয়নি। আর তৃতীয়ত, দলের সাংসদ ও বিধায়কদের থেকে বেতনের একটি অংশ নেয় দল। সাংসদদের অংশ যায় বিজেপি-র কেন্দ্রীয় তহবিলে। আর রাজ্য পায় বিধায়কদের বেতনের একটি অংশ। সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনও সে ভাবে সংগ্রহের কাজ এগোয়নি বলেই জানা গিয়েছে। এমন অবস্থায় খরচ কমাতে হেস্টিংস অফিস সঙ্কোচনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি।

ভোট পর্বে অনেকটা আড়ালে চলে যাওয়া বিজেপি রাজ্য দফতরের গুরুত্ব ফিরছে।

ভোট পর্বে অনেকটা আড়ালে চলে যাওয়া বিজেপি রাজ্য দফতরের গুরুত্ব ফিরছে। ফাইল চিত্র

হেস্টিংসের মোট পাঁচটি তলায় নির্বাচনী দফতর সাজিয়েছিল বিজেপি। দলের পরিকল্পনা ছিল, বিধানসভা নির্বাচনে জয় পেলে গোটাটাই বজায় রাখা হবে। কিন্তু আশানুরূপ না হওয়ায় ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয় সঙ্কোচন। আগেই দু’টি তল ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বার আরও একটি তলা ছেড়ে দিয়ে দফতর থাকছে একটি তলায় এবং সাংবাদিক বৈঠক-সহ অন্যান্য বড় সভার জন্য একটি তলা রাখা হচ্ছে।

হেস্টিংসের কাছে ২ নম্বর সেন্ট জর্জেস গেট রোডের ১০ তলা ‘আগরওয়াল হাউস’-এর পাঁচটি তলা ভাড়া নিয়েছিল বিজেপি। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা ওই বাড়িতে বিধানসভা ভোটের নির্বাচনী দফতর উদ্বোধন করেন বটে কিন্তু বাড়ির কয়েকটি তলা বিজেপি ভাড়া নেয় ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময়েই। ন’তলায় দলের শীর্ষ নেতাদের দফতর ও আটতলায় হয় সাংগঠনিক পদে থাকা নেতাদের ঘর। সাততলায় হয় ভোটের কল সেন্টার। পাঁচতলায় সাংবাদিক বৈঠকের হল ঘর এবং চারতলায় খাওয়া দাওয়ার জায়গা। ভোটের ফল ঘোষণার পরেই চার ও সাততলাটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এ বার আটতলাটিও ছাড়া হচ্ছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ওই তলাটি খালি করে দেওয়া হবে।

রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘ভোটের জন্য খরচ বাড়লেও অর্থ সংগ্রহের কাজ দীর্ঘ সময় আটকে থেকেছে। এখন ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের কারণে কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোটাও খুব দরকার। তার জন্য অর্থের প্রয়োজন। আইনি লড়াইতেও বড় অঙ্কের টাকা খরচ হচ্ছে। তাতেজোর দিতেই দিলীপদা বাড়ি ভাড়া বাবদ খরচে লাগাম টানতে চাইছেন। তা ছাড়া ভোটের আগে দরকার থাকলেও এখন অতগুলি তলা আর দরকারও নেই। আর কলকাতার ওই রকম এলাকায় এক একটি তলের ভাড়া যথেষ্টই বড় অঙ্কের।’’ খরচ কমানোর জন্য আগামী দিনে হেস্টিংসের পাঁচতলাটিও ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। ওই বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘বড় সভার জন্য ওই তলাটি আমাদের দরকার। কিন্তু তার জন্য যে পরিমাণ ভাড়া দিতে হয় তার থেকে প্রয়োজন মতো হল ভাড়া নিলে কম খরচ হবে।’’

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, হেস্টিংসের আটতলায় মূলত বসছিলেন দলের সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। তাঁদের বসার জন্য ইতিমধ্যেই দলের মূল রাজ্য দফতর ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে ব্যবস্থা করা হয়েছে। মহিলা মোর্চা, যুব মোর্চা ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদকদের ঘরও হবে সেখানেই। শুধু দিলীপের জন্য দুই দফতরেই আলাদা আলাদা ঘর থাকছে।

মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যাওয়ায় হেস্টিংসের ন’তলায় ভোটের আগে তাঁর জন্য বরাদ্দ ঘরটিতে বসছেন দুই কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য এবং অরবিন্দ মেনন। পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের ঘর আগে থেকেই ছিল এই তলায়। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘরও আগেই আট থেকে ন’তলায় চলে এসেছে। এ বার দলের বিধায়ক ও সাংসদদের জন্য ঘরও বরাদ্দ করা হচ্ছে ওই তলায়। সেখানে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য রাখা ঘরটিকে এ বার অন্য কাজে ব্যবহার করা হবে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।নতুন পরিকল্পনা মতো এখন থেকে সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালিত হবে দলের পুরনো দফতর থেকেই। হেস্টিংসের নবম তলাটি ব্যবহার হবে কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা ছাড়া দিলীপ, শুভেন্দু-সহ সাংসদ ও বিধায়কদের কাজকর্মের জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE