Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

সৈকতে বিচ ফুটবল চায় দিঘা ও তাজপুর

পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক ক্রীড়াপ্রেমীর কাছে ‘বিচ ফুটবল’ নামটি এখনও অচেনা। যদিও এই খেলার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বিশ্ব পর্যটনের সম্ভবনা। লিখছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক ক্রীড়াপ্রেমীর কাছে ‘বিচ ফুটবল’ নামটি এখনও অচেনা। যদিও এই খেলার সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বিশ্ব পর্যটনের সম্ভবনা। লিখছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল

সৈকতে: দিঘা বিচ ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে আয়োজিত বিচ ভলিবল। নিজস্ব চিত্র

সৈকতে: দিঘা বিচ ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে আয়োজিত বিচ ভলিবল। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৬
Share: Save:

লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকতে বিচ ফুটবল ও ভলিবল ঘিরে উন্মাদনা পরিচিত ছবি। দিঘা, মন্দারমনি ও তাজপুরের সৈকতে সেই ছবি কবে দেখা যাবে? প্রশ্ন তুলছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। এর মধ্যে তাজপুরে বিচ ফুটবল আয়োজনের চেষ্টাও হলেও তা সফল হয়নি।

সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়ির মাঝে এক টুকরো মাঠ, দুই দিকে গোল পোস্ট ও খেলোয়াড়দের দুই পায়ের দক্ষতাই বিচ ফুটবলের মূল বিশেষত্ব। বালিতে ফুটবল খেললে ফিটনেস বাড়ে। তাই বিশ্বের অনেক নামী ফুটবলার সমুদ্র সৈকতের পাশে অনুশীলন করেন। ভারতে বিচ সকার তেমন পরিচিত নয়। ২০১৪ সালে গোয়ায় বিচ ফুটবল প্রতিযোগিতা হলেও, সেটি তেমন জমেনি। কেরলে বিচ ফুটবল খেলা হলেও তা উল্লেখ্যযোগ্য কিছু হয় না। এর মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছিল বেঙ্গল বিচ অ্যাসোসিয়েশন। গত বছর নভেম্বরে তাজপুরে বিচ ফুটবল আয়োজনের চেষ্টা করেছিল তারা। কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন থেকে শুরু করে বিদেশি দলগুলির সঙ্গে কথা বলা—হয়েছিল সব কিছুই। আয়োজকেরা দাবি করেছিল, ব্রাজিল, লেবানন, মিশর, স্পেন-সহ নানা দেশের বিচ ফুটবল দল আসবে। ভারতের চেন্নাই, গোয়া, কেরল ছাড়াও মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানের দলও থাকবে।

প্রতিযোগিতাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে তাজপুরের সৈকতে অস্থায়ী স্টেডিয়াম তৈরি এবং দিঘা, মন্দারমনি, শঙ্করপুর ও কাঁথি বাসস্ট্যান্ডে বড় পর্দা লাগানোর পরিকল্পনাও হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটাই হয়নি। বেঙ্গল বিচ অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি বিশ্বজিৎ মাইতি জানান, সব কিছু পরিকল্পনামাফিক হচ্ছিল। কিন্তু ফিফার অনুমতি না মেলায় প্রতিযোগিতাটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করতে হয়। তবে একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, নিউটাউনে মে মাসে জাতীয় পর্যায়ের বিচ ফুটবল হবে। ভবিষ্যতে ফিফার অনুমতি পেলে দিঘায় আন্তর্জাতিক বিচ ফুটবলের আসর বসবে।

দিঘা, মন্দারমনি ও তাজপুরকে ইতিমধ্যেই সাজিয়ে তুলতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। পর্যটকদের আকর্ষণ করতে দুই সমুদ্র সৈকতেই নানা অনুষ্ঠান হয়। দিঘা ও তাজপুরের হোটেল মালিক সংগঠনগুলির কর্তাদের আশা, বিচ ফুটবলের আসর বসলে দু’জায়গাতেই পর্যটন বাড়বে। বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। সব মিলিয়ে বিশ্ব পর্যটনের মানচিত্রে দিঘা ও তাজপুর কিছুটা জাতেও উঠবে। দিঘা হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দীপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দিঘায় বিচ ফেস্টিভ্যালের সময়ে আমাদের ব্যবসা ভাল হয়। আলাদা করে বিচ ফুটবল হলে দেশের নানা জায়গা ও বিদেশ থেকেও পর্যটকেরা আসবেন।’’ বিচ ফুটবলের আয়োজন নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাও আগ্রহী। এই সংস্থার সহ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিদেশের খেলোয়াড়েরা যদি দিঘার সমুদ্র সৈকতে খেলতে আসেন তাহলে জেলার ছেলে-মেয়েরা অনেক কিছু শিখতে পারবে।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সাধারণ সম্পাদক রজত বেরার গলায়।

কিন্তু স্থানীয় স্তরে এত উৎসাহ থাকলেও বিচ ফুটবল আয়োজনের চেষ্টা করেও আয়োজকেরা কেন সফল হলেন না? শুধুই কী ফিফার অনুমতি না পাওয়া না কি আরও কিছু কারণ রয়েছে এর পিছনে? দিনের আলো না দেখা ওই প্রতিযোগিতার আয়োজকদের একাংশের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাজপুর হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল দাস। একই সঙ্গে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, সরকারি আয়োজনে বিচ ফুটবল আয়োজনের চেষ্টা হলে তাঁরা সহযোগিতা করবেন। এক ধাপ এগিয়ে বেঙ্গল বিচ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি জানিয়ে দিয়েছেন, চলতি বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকেই বিচ ফুটবল আয়োজনের চেষ্টা চলছে।

বিচ ভলিবলের বিষয়টি অবশ্য একটু হলেও আলাদা। কারণ দিঘা ও তাজপুর ‘বিচ ফেস্টিভ্যালে’ বিচ ভলিবল হয়। তবে নানা অনুষ্ঠানের ভিড়ে সেটি আলাদা করে নজর কাড়তে পারে না। সেখানে বিচ তিরন্দাজি, বিচ ম্যারাথনের মতো অন্য কয়েকটি প্রতিযোগিতাও হয়। কিন্তু কোনওটির আয়োজনই বিশ্বমানের হয় না।

দিঘার এক হোটেল ব্যবসায়ী বলছিলেন, ‘‘বাঙালি ফুটবল ভালোবাসে। তাই ভলিবল, তিরন্দাজি, ম্যারাথন যতই হোক না—জনপ্রিয়তায় ফুটবলের ধারেকাছে তাঁরা আসতে পারবে না। তাই আলাদা করে না হলেও পরের বিচ ফেস্টিভ্যালে ফুটবলের অন্তর্ভূক্তি দরকার। তাতে ওই উৎসবের সফলতাও বাড়বে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Beach Football Digha Tajpur Sea Beach
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE