Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

ভয়েই রয়েছেন রাবেয়ারা

গত ২২ ফেব্রুয়ারি উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের সভায় দুই বোন দু’দিক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করেন। আসনুরা আটকে গেলেও রাবেয়া শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিষ্ট লক্ষ্যে।

অসুস্থ মায়ের সঙ্গে রাবেয়া এবং আসনুরা। —নিজস্ব চিত্র

অসুস্থ মায়ের সঙ্গে রাবেয়া এবং আসনুরা। —নিজস্ব চিত্র

গৌর আচার্য
করণদিঘি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

ভদ্রেশ্বরের চন্দন মাজির মতো তিন মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বলয় ভেঙেছিলেন ওঁরা দুই বোনও। এক জন শেষ অবধি মঞ্চে উঠতে পারেননি। অন্য জন গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের উপরে। উত্তর দিনাজপুরের রাবেয়া ও আসনুরা খাতুনের পরিবার এখনও সেই তিমিরে। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি অর্ধেক হয়ে পড়ে রয়েছে। চাকরি করতে উজিয়ে যেতে হয় ৪০ কিলোমিটার। তাঁরা বলছেন, ‘‘অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করব, এমন সামর্থও নেই।’’

গত ২২ ফেব্রুয়ারি উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের সভায় দুই বোন দু’দিক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে ওঠার চেষ্টা করেন। আসনুরা আটকে গেলেও রাবেয়া শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন অভিষ্ট লক্ষ্যে। ঠিক যেমন শুক্রবারে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মঞ্চে ওঠেন ভদ্রেশ্বরের চন্দন। তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ছবি দেন এবং পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন। রাবেয়াও জড়িয়ে ধরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পা। আর্জি ছিল, বাবার খুনিদের শাস্তি দিন।

এই ঘটনায় হতচকিত মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার ফাঁক নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তবে জানিয়েছিলেন, ওই পরিবার গীতাঞ্জলি সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছে। তাঁদের এক জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সরকারি অন্যান্য সুবিধাও তাদের দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার করণদিঘির ছাগলকাটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, ভাইবোন ও সত্তরোর্ধ্ব অসুস্থ মাকে নিয়ে এখনও মাটির বাড়িতেই থাকেন রাবেয়ারা। সামান্য জমিতে চাষবাস, আর অন্য সময়ে বিড়ি বেঁধে পেট চলে। রাবেয়াকে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ওয়ার্ড গার্ল-এর কাজ দেওয়া হয়েছিল ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে। কাজ থাকলে দৈনিক ২৫৬ টাকা বেতন। তবে এই কাজ করতে বাড়ি থেকে ৪০ কিলোমিটার যেতে হয় তাঁকে। বাবার খুন নিয়ে যে পড়শিদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা জামিন পেয়ে গিয়েছেন। তাই ভয়ে ভয়েও থাকতে হয় পরিবারটিকে।

রাবেয়ার কথায়, ‘‘হাসপাতালে তো ময়লা সাফাইয়ের কাজ। তা করে যা টাকা পাই, যাতায়াতেই তার অর্ধেক খরচ হয়ে যায়। মায়ের হাত-পা অসাড়। কিন্তু চিকিৎসার টাকা নেই।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা ইটাহারের বিধায়ক অমল আচার্য বলেন, ‘‘এটা পুরোপুরি প্রশাসনিক বিষয়। তাঁরাই দেখবেন।’’ জেলাশাসক আয়েষা রানির দাবি, ‘‘চাকরি তো দেওয়া হয়েছিল। তা করতে না চাইলে কী করা যাবে!’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওঁরা তো পড়াশোনা জানেন। নিজেরাও চেষ্টা করতে পারেন।’’ তা না করে প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন। ঘরের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘ঘরের টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন সম্পূর্ণ কাজ হয়নি দেখা হবে।’’ তিনি জানান, রায়গঞ্জ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে এলে ওই দুই বোনের মায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE