জলসম্পদ ভবনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে উমা। — নিজস্ব চিত্র
সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের জামিন প্রাপ্তি-সহ নানা বিষয়ে বিজেপি-তৃণমূলের আঁতাঁত দেখছে বিরোধী শিবির। এই নিয়ে তাদের হইচইয়ের মধ্যেই রবিবার পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করলেন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী। বিজেপি-তৃণমূলের সখ্য নিয়ে জল্পনার আবহে যা আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
উমা এ দিন বিধাননগরের জলসম্পদ দফতরে রাজ্যের সেচমন্ত্রী রজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সেচ সচিব এবং বিভাগীয় কর্তাদের সঙ্গে সেচের বিভিন্ন প্রকল্প এবং সমস্যার বিষয়ে বৈঠক করেন। তার পরেই তিনি সেচ দফতর-সহ রাজ্যের অন্যান্য দফতরের কাজে মমতার ভূমিকার প্রশাংসা করে বলেন, ‘৩০ বছর ধরে বাম সরকার রাজ্যটাকে শ্মশান বানিয়ে রেখেছিল। এই ৪ বছরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কাজ করেছেন এবং সেচ দফতরের যে কাজ দেখলাম, সেই সাফল্যের কথা আগামী দিনে আমাদের দফতরের মাধ্যমে অন্যান্য রাজ্যে ছড়িয়ে দেব। কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের পত্রিকায় এ বার পশ্চিমবঙ্গের সেচ দফতরের সাকসেস স্টোরিই শিরোনামে আনা হবে।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও জানান, এ রাজ্যের সেচ দফতরের সাফল্যের উদাহরণ দেখিয়ে অন্য রাজ্যগুলিকেও সেচে উন্নতি করতে বলা হবে।
রাজ্য সেচ দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে সেচের বিভিন্ন কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান উমা। আয়লা-বিধ্বস্ত অঞ্চলে পুনর্গঠনের কাজ, খাল-বিল সংরক্ষণ-সহ বিভিন্ন নদী-বাঁধ তৈরির অতীত ও বর্তমান রিপোর্ট এবং ছবি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। রাজীববাবু তাঁকে বলেন, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের পরিকল্পনা। কেন্দ্র ওই প্রকল্পের জন্য দ্রুত আর্থিক অনুমোদন দিলে কাজ শীঘ্রই শুরু করা সম্ভব। ওই প্রকল্পে কেন্দ্র ও রাজ্যের ৫০ শতাংশ করে অর্থ ব্যয় করার কথা। সেটা রাজ্যের ক্ষেত্রে কমিয়ে ২৫ শতাংশ এবং কেন্দ্রের ভাগে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার আর্জিও জানানো হয় উমাকে।
সেচ দফতর সূত্রের আরও খবর, ডিভিসি-র সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের অভাবের কথাও এ দিন উমাকে জানানো হয়েছে। বৃষ্টির মরসুমে জল ছাড়া এবং জল ধরে রাখার বিষয়ে দু’ পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব চরম হচ্ছে বলে তাঁকে জানান সেচ কর্তারা। কয়েক দিন আগেও বর্ধমান ও বাঁকুড়ায় আমন ধান চাষের জন্য জল দিতে ডিভিসি আপত্তি জানিয়েছিল বলে সেচ-কর্তাদের অভিযোগ। যদিও পরে ডিভিসি কিছুটা জল দিয়েছে। সেচমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল-সহ প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন। আমরা আবার উমা ভারতীকে জানালাম। ওঁর কাছে আবেদন করেছি, যাতে রাজ্যে ডিভিসির অপারেশন নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে দেওয়া হয়। উনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’
উমা এ দিন হাওড়ার ঘুসুড়িতে গঙ্গার ভাঙন ঘুরে দেখে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সেচ দফতরের তরফে তাঁর কাছে ফরাক্কা থেকে সাগর পর্যন্ত গঙ্গার দু’ ধারে ভাঙনরোধী কাজে কেন্দ্রের অর্থ সহযোগিতার জন্য আবেদন জানানো হয়। এ ছাড়াও তাঁকে জানানো হয় রাজ্যের সীমানা এলাকায় নদী-বাঁধ তৈরির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ৯০ শতাংশ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও খুবই কম টাকা মিলেছে। আয়লা-বিধ্বস্ত এলাকায় বাকি ৯০ কিমি বাঁধ তৈরিতেও কেন্দ্রের অর্থ সাহায্যের জন্য উমাকে অনুরোধ করেন রাজীববাবু। সেচ দফতর সূত্রের খবর, উমা তাদের এই সব কাজের জন্য আবেদন করতে বলেছেন। দ্রুত অর্থ সাহায্য দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy