আলিপুর আদালতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
তিনি নিজে জেলবন্দি। তৃণমূল কংগ্রেস তাঁকে সাসপেন্ড করে দল এবং সরকারের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এর পরেও তাঁর দাবি, তৃণমূলে আজও তাঁর স্থান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই।
এমনকি, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখন দল থেকে বহিষ্কার করতে কেন এত দেরি হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশিই তাঁর দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে তিনি জড়িত নন। তৃণমূল অবশ্য তাঁর এ সব বক্তব্যকে ‘মান্যতা’ দিচ্ছে না।
নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের মামলায় বৃহস্পতিবার পার্থকে আদালতে তোলা হয়েছিল। আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের পার্থ বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলে আছি এবং থাকব। দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই আমার স্থান। আমি কুন্তলকে চিনি না। কিন্তু শান্তনুকে চিনি। দলের একটা বড় পদে ছিল। কিন্তু ওদের দু’জনকে বহিষ্কার করতে এত সময় লাগল কেন, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’’
কুন্তল ও শান্তনুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে সাংবাদিক বৈঠকে দলীয় নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন পার্থ। তিনি বলেন, ‘‘কী সব বলা হচ্ছে! পার্টি অফিস থেকে টাকা উদ্ধার হয়নি। এ সব কী বক্তব্য! আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! পার্টি অফিস থেকে টাকা উদ্ধার হতে যাবে কেন? ওই প্রসঙ্গ উঠবেই বা কেন?”
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে সংগঠন থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। তাই এখন তাঁর বক্তব্যে দলের কী বলার থাকতে পারে? নিজের আইনি লড়াই লড়বেন, এটাই প্রত্যাশা করতে পারি।’’
আদালত থেকে বেরিয়ে এ দিন পার্থর দাবি, নিয়োগ দুর্নীতিতে তিনি জড়িত নন। স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ স্বশাসিত সংস্থা। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। সিবিআই তার তদন্ত করছে। আমি নিয়োগ দুর্নীতিতে কোনও ভাবে জড়িত নই। জামিন পাওয়ার পরে সবার আগে আমি নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে যাব। সেখানে সাংবাদিক বৈঠক করব।’’
বিচারকের কাছে এ দিন পার্থের আবেদন, তাঁর বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেওয়া হোক। ওই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৩ মার্চ স্থির হওয়ার পরে পার্থ বিচারককে বলেন, ‘‘হুজুর, পরবর্তী শুনানির দিন আমি পাঁচ মিনিট কথা বলব।’’ শুনে বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়কে শুধু মাথা নাড়তে দেখা যায়।
গত শুনানিতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকা পার্থ এবং তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে নিজেদের মধ্যে ইশারায় বহু কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। তা নিয়ে বিস্তর চর্চাও হয়েছে। পার্থ প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছেন, তিনি অর্পিতাকে চেনেন না। তা হলে ভার্চুয়াল শুনানিতে কেন এত ইশারায় কথা, এ দিন আদালতে ঢোকা-বেরনোর সময়ে এ প্রশ্নের কোনও জবাব অবশ্য দেননি প্রাক্তন মন্ত্রী।
প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল। তৃণমূলই পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এটা পার্থ নিজেও জানেন। তাই দলও পার্থকে বহিষ্কার করতে পারবে না। আর পার্থ সেটা জেনেই এই ধরনের কথা বলছেন।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলে সাসপেন্ড, বহিষ্কার কোনও কিছুরই যে কোনও মানে নেই, ফের বোঝা যাচ্ছে। পার্থবাবু নিজেকে মহাসচিব মনে করেই কথা বলে যাচ্ছেন! তিনি দলের বিধায়কও আছেন। মুখ ও মুখোশ মিলে লুট, দুর্নীতিই চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy