দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার ভোলবদলে আমজনতা কিছুটা স্বস্তিতে। অথচ সেই মেঘলা আকাশ দেখেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। এত দিনের অপেক্ষা বিফলে যাবে না তো?
ওঁদের দুশ্চিন্তার মূলে একটি বিরল মহাজাগতিক ঘটনা— সূর্যের উপর দিয়ে বুধগ্রহের সরণ। যা কিনা আজ, সোমবার কলকাতা-সহ রাজ্যের অনেক জায়গা থেকে দেখা
যাওয়ার কথা।
নির্ঘণ্ট অনুযায়ী, আজ বিকেল ৪টে ৪১ মিনিটের পরে সূর্যের উপর
দিয়ে বুধ চলতে শুরু করবে। কালো তিলের চেহারা নিয়ে তা হামাগুড়ি দেবে সূর্যের গায়ে।
কিন্তু মেঘের আড়ালে দৃশ্যটি ঢাকা পড়বে কি না, রবিবার দিনভর তার খোঁজে হন্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থা পজিশন্যাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের গবেষকেরা। সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেনের কথায়, ‘‘দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার যা মতিগতি, তাতে সোমবার বিকেলে আকাশে মেঘ জমতে পারে। তাই বুধের সরণ চাক্ষুষ করার ব্যাপারে চিন্তা রয়েছে।’’
বস্তুত আলিপুর আবহাওয়া দফতরও আজ মেঘলা আকাশের পূর্বাভাস দিয়েছে। সত্যিই আজ মেঘের আড়ালে বুধের সরণ ঢাকা পড়লে পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশবাসীকে আবার ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, ২০১৯-এ সূর্যের উপর দিয়ে বুধ এক বার হাঁটবে বটে, তবে ভারতের মাটি থেকে সে দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যাবে না।
বিরল মহাজাগতিক দৃশ্যের উপরে মেঘ ‘জল ঢেলে’ দিচ্ছে— এমনটা অবশ্য বিরল নয়। ২০০৯-এর ২২ জুলাইয়ের কথা ধরা যাক। সে দিন ছিল শতাব্দীর দীর্ঘতম সূর্যগ্রহণ। বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে বার করেছিলেন, পটনার কাছে বেউর থেকে গ্রহণ দেখা যাবে সবচেয়ে ভাল। সেই মতো দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীরা সেখানে জড়ো হন। কিন্তু মোক্ষম সময়ে আকাশ মেঘে ঢেকে যায়।
ফলে ওই সকালে বিজ্ঞানীদের হা-হুতাশের অন্ত ছিল না। ২০১২-র জুনে সূর্যের উপরে শুক্রগ্রহের সরণের সময়েও আকাশ মেঘলা ছিল। যদিও সে দিন সরণ আরম্ভ হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে আচমকা মেঘ কেটে ঝকঝকে সূর্য বেরিয়ে এসে বিজ্ঞানীদের মুখে হাসি ফোটায়। সল্টলেকের অফিসের ছাদে বসে সঞ্জীববাবুরা পরিষ্কার দেখতে পেয়েছিলেন, ‘শুকতারা’ কী ভাবে সূর্যের বুকের উপর দিয়ে গুটিগুটি হাঁটছে!
তবে তার সঙ্গে এ বার বুধের সরণের ফারাক রয়েছে।
কী রকম?
সঞ্জীববাবু বলছেন, শুক্রের সরণ হয়েছিল ভোরে। তাই শুরুর সময়টুকু নষ্ট হলেও উদিত সূর্যের দৌলতে তার সিংহভাগ দেখা গিয়েছিল।
কিন্তু আজ বুধ হামাগুড়ি দেবে ডুবতে বসা সূর্যের উপরে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সূর্য দিগন্তে
হেলে পড়বে। বহুতলে ঘেরা শহর থেকে দিগন্ত পুরোপুরি দৃশ্যমান না-থাকায় দৃশ্যটি এমনিতেই বেশি ক্ষণ স্থায়ী হবে না। ‘‘তার উপরে মেঘ এসে গেলে তো আরও বিপদ!’’— মন্তব্য সন্দীপবাবুর।
স্বস্তির মেঘ এ ক্ষেত্রে ভিলেন হয়ে দাঁড়াবে কিনা, আর ক’ঘণ্টা বাদেই মালুম হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy