Advertisement
১১ জুন ২০২৪

কলেজের স্বাধিকারের যুক্তিতে ব্রাত্য কেন্দ্রীয় অনলাইন

সাংবাদিক বৈঠক করে এক শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কলেজে ছাত্র ভর্তিতে স্বচ্ছতা আনতে বিশ্ববিদালয় স্তরে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হবে। তার ১০ দিনের মাথায় তৃণমূল সরকারের পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য তাঁদের সরকার কখনওই কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থায় যাবে না। সোমবার বিধানসভায় এবং সভাকক্ষের বাইরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০৩:৪৩
Share: Save:

সাংবাদিক বৈঠক করে এক শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কলেজে ছাত্র ভর্তিতে স্বচ্ছতা আনতে বিশ্ববিদালয় স্তরে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হবে। তার ১০ দিনের মাথায় তৃণমূল সরকারের পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, স্নাতক স্তরে ভর্তির জন্য তাঁদের সরকার কখনওই কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থায় যাবে না।

সোমবার বিধানসভায় এবং সভাকক্ষের বাইরে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “কলেজগুলির স্বাধিকার রক্ষার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।” তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির যথাযথ পরিকাঠামো না-থাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ভাবে ছাত্র ভর্তির দায়িত্ব দিয়ে কাজটি আউটসোর্সিং করা হয়েছিল। কিন্তু আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এই কাজ করাটা সমর্থন করেন না শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে স্নাতক স্তরে ভর্তি হবে কেন?” পরে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হোক।”

বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ রাজ্যের ঐতিহ্য মেনে রাজনীতির কাছেই শিক্ষাকে হারতে হল বলে মনে করছেন শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। তাঁদের ধারণা, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র চাপেই এ ভাবে রাজ্য সরকার এক পা এগিয়ে দু’-পা পিছিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিল। প্রবীণ এক শিক্ষা-প্রশাসকের মন্তব্য, “কলেজের স্বশাসন যে আসলে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের শাসন হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ইতিমধ্যেই তার কিছু নমুনা পাওয়া গিয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরদারিতে অনলাইনে ছাত্র ভর্তি হলে ছাত্র সংসদের মর্জিমতো ভর্তি, তার জন্য টাকার লেনদেনে ছেদ পড়ত। তাতে কলেজগুলিতে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তিতে টান পড়ত। সেই জন্যই টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা কেন্দ্রীয় ভাবে ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছেন বলে অভিযোগ। যদিও টিএমসিপি নেতা তা মানতে রাজি নন।

সোমবারেই শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কলেজ-ভিত্তিক অনলাইন ছাত্র ভর্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানায় টিএমসিপি। পরে এসএফআই-সহ চারটি বাম ছাত্র সংগঠন মেধার ভিত্তিতে ভর্তি, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি ইত্যাদি দাবি জানিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী পরে জানান, ভর্তির ক্ষেত্রে প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি করা যাবে না বলে এ দিন ছাত্র সংগঠনগুলিকে জানিয়েছেন তিনি।

এ দিন বিধানসভায় অধিবেশনের প্রথমার্ধে আরএসপি বিধায়ক নর্মদা রায় সব কলেজে স্নাতকে অনলাইনে ছাত্র ভর্তির দাবি জানান। জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সরকার তো অনলাইনে ভর্তি তুলে দেয়নি। তবে সর্বত্র পরিকাঠামোর যথেষ্ট উন্নতি হয়নি। ইন্টারনেটের সংযোগও নেই।” তিনি জানান, রাজ্যের ৭৫টি কলেজে অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া চালু আছে, ৫১৯টিতে নেই। যত দ্রুত সম্ভব ওই সব কলেজেও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ারর চেষ্টা হবে। তবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তি হবে কলেজ স্তরেই।

ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এই শিক্ষাবর্ষে রাজ্যের কলেজগুলিতে ছাত্র ভর্তি হবে অনলাইনে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মেনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অনলাইনে ছাত্র ভর্তিতে উদ্যোগী হন। উচ্চশিক্ষা দফতর তখনই নির্দেশিকা জারি করে জানায়, ভর্তি হবে কেন্দ্রীয় ভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক। ২৭ মে সাংবাদিক বৈঠক করেও এ কথা জানান ব্রাত্যবাবু। সেই দিনই তাঁকে শিক্ষা দফতর থেকে সরিয়ে পর্যটনমন্ত্রী করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী হন পার্থবাবু। তিনি ২৯ মে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানিয়ে দেন, স্নাতকে অনলাইনে ভর্তি আর বাধ্যতামূলক থাকছে না। ভর্তি কী ভাবে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবে সংশ্লিষ্ট কলেজ। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ভূমিকা থাকবে না। তবে কোনও দিনই যে কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি হবে না, সেটা তখন স্পষ্ট করেননি মন্ত্রী।

মূলত ছাত্র সংসদের দৌরাত্ম্য, কর্তৃপক্ষের উপরে চাপ দিয়ে কলেজে নিজেদের পছন্দমতো ছাত্র ভর্তি, বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কলেজে ভর্তি এই সব ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ছাত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উচ্চশিক্ষা দফতর। কলেজ-ভিত্তিক ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদের জোরাজুরি করার সুযোগ অনেক বেশি। তা ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী যে-সব কলেজে অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু আছে বলে দাবি করছেন, সেখানেও হাতে গোনা কয়েকটি বাদ দিলে বাকিগুলিতে ফর্ম তোলা ও বড়জোর তা জমা দেওয়া যাবে অনলাইনে। টাকা জমা দিয়ে ভর্তির জন্য যেতে হবে কলেজে। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের তখনই ছাত্র সংসদের জোর-জবরদস্তির মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ।

তবে শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভার বাইরে সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, কোথাও কোনও অনিয়মের অভিযোগ থাকলে তা উচ্চশিক্ষা দফতরের হেল্পলাইনে টেলিফোন বা এসএমএস করে জানানো যাবে। আজ, মঙ্গলবার থেকেই হেল্পলাইনগুলি চালু হবে। মন্ত্রী বলেন, “নম্বরগুলি হল: ১৮০০-১০৩-৭০৩৩ এবং ৯২২৩২২৫৪৭৭। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা যাবে।” মন্ত্রীর মতে, ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষাকর্মী সকলে মিলিত ভাবে ভর্তিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তা দ্রুত বন্ধ করা যাবে। কোনও কলেজের কর্তৃপক্ষ যদি দেখেন, তাঁদের উপরে অন্যায় জারিজুরি হচ্ছে, তাঁরা ওই সব নম্বরেই যোগাযোগ করতে পারেন। এই ব্যাপারে ছাত্র সংগঠনগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে পার্থবাবু জানান। তিনি বলেন, “এই ব্যাপারে টিএমসিপি-র দায়িত্ব অন্যদের থেকে বেশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE