Advertisement
১৭ মে ২০২৪

গোদালার বিরুদ্ধে মামলা শুরুর অনুমতি দিল রাজ্য

মালদহের প্রাক্তন জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর জন্য পুলিশকে অনুমতি দিল রাজ্য সরকার। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) বিভিন্ন কাজে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ওই আইএএস অফিসারকে গত বছরের ৩০ নভেম্বর গ্রেফতার করেছিল শিলিগুড়ি কমিশনারেটের পুলিশ। পরের দিন আদালতে জামিন পেলেও ওই ঘটনার পরে গোদালাকে আর কোনও সরকারি দায়িত্বে ফেরায়নি নবান্ন। বর্তমানে তিনি ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ রয়েছেন। মাত্র তিন মাস আগে আদালতে দাঁড়িয়ে সরকার যে অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা করেনি, তারাই কেন আজ গোদালার বিরুদ্ধে মামলা শুরুর অনুমতি দিল?

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৮:৫১
Share: Save:

মালদহের প্রাক্তন জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা শুরুর জন্য পুলিশকে অনুমতি দিল রাজ্য সরকার। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) বিভিন্ন কাজে কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ওই আইএএস অফিসারকে গত বছরের ৩০ নভেম্বর গ্রেফতার করেছিল শিলিগুড়ি কমিশনারেটের পুলিশ। পরের দিন আদালতে জামিন পেলেও ওই ঘটনার পরে গোদালাকে আর কোনও সরকারি দায়িত্বে ফেরায়নি নবান্ন। বর্তমানে তিনি ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ রয়েছেন।

মাত্র তিন মাস আগে আদালতে দাঁড়িয়ে সরকার যে অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা করেনি, তারাই কেন আজ গোদালার বিরুদ্ধে মামলা শুরুর অনুমতি দিল?

নবান্নের বক্তব্য, গোদালার বিরুদ্ধে আনা পুলিশের অভিযোগ কখনও নস্যাৎ করেনি সরকার। কিন্তু যে পদ্ধতিতে এক জন আমলাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ডেকে এনে তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয়েছিল, তা-ও সমর্থন করেনি। ওই ঘটনার পরে গোদালার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয় এবং তাতে পুলিশের আনা অভিযোগের কিছু সত্যতা রয়েছে বলেই মনে করে সরকার। এ জন্যই ফৌজদারি মামলা শুরুর সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, আর্থিক অস্বচ্ছতা বা দুর্নীতি যে বরদাস্ত করা হবে না, গোদালার বিরুদ্ধে মামলা শুরুর অনুমতি দিয়ে সেই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও নভেম্বরের সেই দিনে গোদালার গ্রেফতার ঘিরে প্রশাসনের অন্দরে কম বিতর্ক হয়নি। সরকারের শীর্ষকর্তাদের কার্যত অন্ধকারে রেখে শিলিগুড়ির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন যে ভাবে ওই আইএএস-কে গ্রেফতার করেছিলেন, তাতে তাঁর এক্তিয়ার নিয়ে সরব হয়েছিলেন প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। সেই রাতেই তড়িঘড়ি পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয় জয়রামনকে।

শুধু তাই নয়, পরের দিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জয়রামনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র বলেন, “আমরা মনে করি, অভিযুক্ত যদি পালিয়ে যেতেন, সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে বা সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করতে পারেন বলে আশঙ্কা থাকে, কেবল তখনই তাঁকে গ্রেফতার করা যায়। গোদালার ক্ষেত্রে এর কোনওটাই প্রযোজ্য নয়। সাধারণ ভাবে কোনও পদস্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সরকারকে জানানো বা অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে কোনওটাই করা হয়নি।”

মুখ্যসচিবের ওই বক্তব্যের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন পেয়ে যান গোদালা। কারণ, সরকারি কৌঁসুলি আদালতে অভিযুক্তের জামিনের বিরোধিতা করেননি। সরকারের এই ভূমিকার সমালোচনায় সরব হন রাজ্য পুলিশের কিছু কর্তা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অফিসারকে সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে জামিনের বিরোধিতা না করায় সেই বার্তাই যাচ্ছে প্রশাসনের সর্বস্তরে। ওই পুলিশকর্তাদের যুক্তি ছিল, কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্মসচিব বা তার চেয়ে উঁচু পদের অফিসারকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেই সরকারের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। সে নিয়ম রাজ্যের কোনও জেলাশাসকের ক্ষেত্রে খাটে না। ‘কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিওর’-এর সংশোধিত ৪১ নম্বর ধারা উল্লেখ করে তাঁরা দেখান, তদন্তকারী সংস্থা যদি মনে করে অভিযুক্ত কোনও ভাবে তদন্তকে প্রভাবিত করতে পারেন, তা হলে তাঁকে গ্রেফতারের আগে সরকারের অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই।

রাজ্য সরকার অবশ্য পুলিশের ওই যুক্তি পুরোপুরি মানেনি। নবান্নের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, এসজেডিএ-র দুর্নীতি মামলায় গোদালার ভূমিকা সম্পর্কে সরকার আগে থেকেই অবহিত ছিল। গত বছরের ৫ জুলাই রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে তদন্তের খুঁটিনাটি জানিয়ে জেলাশাসককে জিজ্ঞাসাবাদ, প্রয়োজনে গ্রেফতারির অনুমতি চেয়েছিলেন জয়রামন। তখনই তাঁকে জানানো হয়, তাড়াহুড়ো নয়। বরং দ্রুত চার্জশিট পেশের ব্যবস্থা করুক পুলিশ। তার পরে গোদালার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। গোদালাকে ডিএমের পদ থেকে সরানোর তোড়জোড়ও শুরু করেছিল সরকার। ওই কর্তার কথায়, কিন্তু তার আগেই গোদালাকে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি জটিল করে ফেলেন জয়রামন।

তাঁর আর্জি যে শেষ পর্যন্ত রাজ্য মেনে নিল, তা নিয়ে আজ মুখ খুলতে চাননি জয়রামন। তিনি বলেন, “এ নিয়ে কোনও মন্তব্য নয়।” দিনভর চেষ্টা করেও গোদালার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, ছুটি নিয়ে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশে নিজের বাড়িতে রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

godala kiran kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE