Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

চিড় নেই, বার্তা দিতে মমতার ‘মুকুল-শো’

হে পৃথিবী, তাকিয়ে দেখো! আমরা দু’জন কত সুখী! বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটের বার্তা আরও স্পষ্ট হল পৈলানে! মমতা বোঝালেন, তাঁর পুরনো সেনাপতি মুুকুল রায়ের পাশেই আছেন তিনি। দৃশ্যত! প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে সারদা-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুকুল এবং মন্ত্রী মদন মিত্রকে কার্যত ক্লিনচিট দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

হে পৃথিবী, তাকিয়ে দেখো! আমরা দু’জন কত সুখী!

বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কালীঘাটের বার্তা আরও স্পষ্ট হল পৈলানে!

মমতা বোঝালেন, তাঁর পুরনো সেনাপতি মুুকুল রায়ের পাশেই আছেন তিনি। দৃশ্যত!

প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে সারদা-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুকুল এবং মন্ত্রী মদন মিত্রকে কার্যত ক্লিনচিট দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বলেছিলেন, “বলা হচ্ছে মদন চোর, মুকুল চোর! কোনও প্রমাণ আছে? দল এ সব বিশ্বাস করে না!” ওই রকম উচ্চকিত কোনও মন্তব্য না থাকলেও বুধবার পৈলানের কর্মিসভায় মুকুলের প্রতি তাঁর আস্থার প্রমাণ রেখেছেন মমতা। কৌশলে জানিয়ে দিয়েছেন, মুকুলকে দিনে অন্তত ৫০০ বার ফোন করতে হয় তাঁকে!

ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রের মধ্যে পৈলানের ওই কর্মিসভার মঞ্চে হাজির ছিলেন স্থানীয় সাংসদ এবং দলের ‘যুবরাজ’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু যুবরাজ নয়, দলনেত্রীর মঞ্চ থেকে এ দিন বক্তৃতা করেছেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলই।

কালীঘাটের বৈঠক শেষে নিজের গাড়িতে মুকুলকে তুলে নবান্নে নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা। তেমনই এ দিন তিনি জানিয়েছেন মুকুলকে অজস্র বার ফোন করার কথা। তৃণমূলের রাজনীতিতে দলনেত্রীর গাড়ির সওয়ারি হওয়ার মতোই তাঁর কল লিস্টে নাম থাকা সেই নেতার প্রতি নেত্রীর আস্থার সূচক হিসাবেই ধরা হয়। সেই সূচকে পরপর দু’দিনের বার্তা বলে দিচ্ছে, মুকুল আছেন মমতা-বৃত্তেই!

এবং এখানেই রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন কেউ কেউ! যে মুকুল দল চালাতে চিরকাল তৃণমূল নেত্রীর বল-ভরসা, তাঁর প্রতি আস্থা এ ভাবে প্রদর্শনী করে দেখাতে হবে কেন? মুকুল যদি সেই মুকুলই থাকবেন, তা হলে তাঁর পাশে থাকার বার্তা এ ভাবে গাড়িতে চড়িয়ে বা ফোন করার রহস্য ফাঁস করে জানাতে হবে কেন? দলেরই কেউ কেউ বলছেন, “বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম কি দেখাতে হয়? মুকুলের হাতে যে সংগঠনের চাবিকাঠি এবং সেই জন্য যে তিনি দলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে তো সবাই জানে। তা হলে হঠাৎ এই দেখনদারি কেন?”

কেউ কেউ বলছেন, দেখনদারির দরকার ছিল। শাসক দলে সংগঠনের সর্ব স্তরে মুকুলের কাজ মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় করতে পারছেন না এবং তার জন্য নির্বাচনের মরসুমের আগে মুকুলকেই দরকার, এটা বাস্তব। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বাস্তব মুকুলকে নিয়ে প্রদর্শনীর প্রয়োজনীয়তা। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের জের টেনে দলে মুকুলের ডানা ছাঁটা এবং যুবরাজ অভিষেকের উত্থান তৃণমূলের মধ্যেই কোনও কোনও মহলে

অস্বস্তি তৈরি করছিল। দেখা দিচ্ছিল অশান্তির বীজ। অনভিজ্ঞ অভিষেকের পক্ষে এখনই এমন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা কঠিন। আবার মহাসচিব পার্থবাবু বা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী মুকুলের মতো দক্ষতায় সংগঠন সামলাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দলের একাংশেরই সংশয় রয়েছে। তাই বুঝেশুনেই পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু হওয়ার সময় মমতা দলের কর্মীমহলকে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, তাঁর দলের নেতৃত্বে কোনও অনৈক্য নেই। তবে দলের তরফে রাজ্য পুলিশ ‘দেখভাল’ করার মতো গুরুদায়িত্ব এর পরেও মুকুলের হাতে থাকে কি না, তার উত্তর পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে আপাতত।

সারদা গোষ্ঠীর মালিকানাধীন একটি কাগজ হস্তান্তর নিয়ে একটি সংবাদমাধ্যমের দফতরে সপুত্র মুকুলের বৈঠকের ছবি প্রকাশ্যে এসে সম্প্রতি বিতর্ক বেধেছিল। সুযোগ পেয়ে এ দিন সেই প্রশ্নেও মুকুলকে কৌশলে ক্লিনচিট দিয়েছেন মমতা। সরাসরি কিছু উল্লেখ না-করেও বলেছেন, “কোনও সংবাদমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেলে সাংবাদিকেরা বিপদে পড়েন। তাঁরা বিপদে পড়ে আমার কাছে আসেন। আমি তাঁদের সাহায্য করি। বিপদগ্রস্ত সাংবাদিকেরা আমার পরিবারের সদস্য বলে মনে করি। কেউ যদি ওই বিপদগ্রস্ত সাংবাদিকদের নিয়ে বৈঠক করেন, তা হলে কী অপরাধ? আমিও তো করি!” অর্থাৎ তৃণমূল নেত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, এমন বৈঠক করে মুকুল কোনও ‘অপরাধ’ করেননি।

দলনেত্রীর মঞ্চ থেকে মুকুলও দলে ঐক্যের বার্তাই দিতে চেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতার নেতৃত্বে রাজ্যে উন্নয়নের যা কাজ হয়েছে, আসন্ন পুরভোটের প্রচারে সে সব তুলে ধরার জন্য কর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন মুকুল। লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেছেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় গত পঞ্চায়েতে ভাল ফল হয়েছে। জেলার পাঁচটি লোকসভা আসনই দল জিতেছে। তবু ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা এলাকায় ভোট কমেছে কেন, খতিয়ে দেখতে হবে। আর তার পরেই মঞ্চে উপস্থিত যুবরাজের দিকে তাকিয়ে বলেছেন, “অভিষেক আমার পুত্রসম! সে-ও সংগঠন দেখছে। তা ছাড়া শোভন, অরূপও আছে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করুন।”

সুখী পরিবার! এই ছবি দেখানোই এখন তাগিদ তৃণমূল নেত্রীর। দলেরও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE