হরিকিষান মহেশ্বরীর ফ্ল্যাটে আত্মীয় পরিজনরা। সোমবার। ছবি: তাপস ঘোষ
ইট-পাথর-রড দিয়ে ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক চটকলের সিইও হরিকিষান মহেশ্বরীকে খুনের ঘটনায় ছয় শ্রমিককে গ্রেফতার করল পুলিশ। রবিবার রাতভর তল্লাশির পরে ভদ্রেশ্বরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের ধরা হয়। ধৃতদের নাম মহম্মদ আজহারউদ্দিন, মুকুন্দ গুপ্ত, মহম্মদ আসলাম, বিকাশ তাঁতি, রবীন্দ্র চৌবে এবং স্বপন সিংহ। আসলাম ফরওয়ার্ড ব্লকের শ্রমিক সংগঠন টিইউসিসি-র ওই কারখানা ইউনিটের সম্পাদক। বাকিদের মধ্যে এক জন সিপিআই, এক জন সিপিএম, এক জন ফরওয়ার্ড ব্লক এবং দু’জন বিএমএসের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত বলে চটকল সূত্রে জানা গিয়েছে।
ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৪৭ (জমায়েত), ১২০ বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩২৬ (গুরুতর আঘাত) এবং ৩০২ (খুন) ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সোমবার ধৃতদের চন্দননগর আদালতের এসিজেএম শর্মিষ্ঠা ঘোষের এজলাসে হাজির করানো হয়। বিচারক বিকাশ তাঁতিকে পাঁচ দিন জেল হাজতে রাখার এবং বাকিদের পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা আসলামকে গ্রেফতারের ঘটনা ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং তাঁকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নরেন চট্টোপাধ্যায়।
ময়না-তদন্তের পরে রবিবার রাত থেকে নিহত সিইও-র মৃতদেহ রয়েছে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ভারী কিছু দিয়ে হরিকিষানের মাথার বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করা হয়। সেখানে হওয়া গভীর ক্ষত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
ছেলে মায়াঙ্ক শিকাগো থেকে না আসায় সোমবার হরিকিষানের শেষকৃত্য হয়নি। এ দিন সকালে মহারাষ্ট্র থেকে প্রথমে এসে পৌঁছন হরিকিষানের ভাই পি কে মহেশ্বরী এবং তাঁর স্ত্রী সালেম কাবরা। হরিকিষানের স্ত্রী সুনীতাকে নিয়ে তাঁরা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে গোটা ঘটনা শোনেন। সেখান থেকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে আসেন। দুপুরে শ্রীরামপুরে এসে পৌঁছন নিহত সিইও-র দুই মেয়ে পায়েল ও অঞ্জলি। তবে, তাঁরা কেউ কোনও কথা বলতে চাননি। চাঁপদানিতে সিইও-র আবাসনে গিয়ে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। শ্রম দফতরের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, আজ, মঙ্গলবার ভোরে ভদ্রেশ্বরের বাবুঘাট শ্মশানে শেষকৃত্য হবে হরিকিষানের।
সোমবার বিকেলে কার্যত বন্ধ ওই চটকলে আসেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য। সিইও-হত্যার নিন্দা করে অপরাধীদের শাস্তির দাবি তোলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এবং শ্রমমন্ত্রী যে ভাবে ওই ঘটনায় সিটুর পাশাপাশি বিজেপির শ্রমিক সংগঠন বিএমএসও জড়িত বলে অভিযোগ তোলেন, তার নিন্দাও করেন শমীকবাবু। তাঁর দাবি, “বিএমএস আমাদের শ্রমিক সংগঠন নয়। এখানে বিএমএস থাকলেও আমাদের শ্রমিক সংগঠন নেই। সঠিক লোককে ধরে তদন্ত করা হোক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy