কোচবিহারের মশালডাঙা ছিটমহল সংলগ্ন নাজিরহাটে বিজেপির জনসভায় রাহুল সিংহ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
ছিটমহল হস্তান্তরের পর পুনর্বাসনের জন্য আজ কেন্দ্রের কাছে তিন হাজার কোটি টাকা চাইল রাজ্য। পাশাপাশি কোচবিহারে মশালডাঙা ছিটমহলের ধারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সভায় আজ জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ছিটমহলের মানুষ সেখানে যাননি বলে দাবি করেছে তাঁদের সংগঠন।
কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত স্থলসীমা বিলটি আলোচ্যসূচিতে থাকলেও ওঠেনি। পরের বুধবার ১৭ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে বিলটি ওঠার কথা। অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসের মধ্যেই বিলটি পাশ করিয়ে দিল্লির তরফ থেকে কূটনৈতিক উপহার দেওয়ার সম্ভাবনাটির ইতি ঘটল। গত কাল মন্ত্রিসভার বৈঠকের দিকে ঢাকার যেমন নজর ছিল, তেমনই আশার আলো দেখছিলেন ছিটমহলবাসীও। কিন্তু বিমা বিল নিয়ে আলোচনাতেই সময় কেটে যাওয়ায় কালকের বৈঠকে স্থলসীমান্ত বিলটি উঠতে পারেনি। এতে হতাশ দুই মহলই। তবে দিল্লির পক্ষে ঢাকাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিলটির খসড়া সর্বসম্মতিতে অনুমোদন পাওয়ায় এটি পাশ হওয়া সময়ের অপেক্ষা। সব পক্ষকেই আরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই বিলটি সংসদে পাশ করানোর চেষ্টা হচ্ছে।
ছিটমহল বিনিময়ের পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়াটি নিয়ে আজ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দফতরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করে কেন্দ্র। রাজ্যের পক্ষে ছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি জিএমপি রেড্ডি। কেন্দ্রের পক্ষে স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী ছাড়া স্বরাষ্ট্র ও বিদেশ মন্ত্রকের সিনিয়র অফিসাররা এই বৈঠকে ছিলেন। ছিটমহলবাসীদের পুনর্বাসনে সম্পূর্ণ আর্থিক দায়ভার নেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানায় রাজ্য। তবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নিজেদের হাতেই রাখতে চেয়েছে তারা। সূত্রের খবর, এ কাজে কেন্দ্রের কাছে তিন হাজার কোটি টাকার দাবি জানানো হয়েছে। তবে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র সবিস্তার কিছু বলতে চাননি। তিনি বলেন, “ছিটমহল নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি। এর বাইরে কিছু বলব না।” তবে সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনের তরফে আজ ফের কেন্দ্রকে জানানো হয়েছে, নীতিগত ভাবে রাজ্য সরকার ছিটমহল হস্তান্তরে রাজি।
এ দিন মশালডাঙা ছিটমহল লাগোয়া এলাকায় জনসভা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবু। তিনি অভিযোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই ছিটমহল বিনিময় এত দিন আটকে ছিল। রাহুলবাবুর অভিযোগ, জামাতে ইসলামির কথাতেই মমতা এত দিন ছিটমহল বিনিময় হতে দেননি। একই কারণে তিনি বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বাংলাদেশেও যাননি। রাহুলবাবুর যুক্তি, “ছিটমহল বিনিময় হলে অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। জঙ্গিরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকতে পাবেন না। এটাই জামাতের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।” এ কথা শোনার পরে তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মিথ্যে, ভিত্তিহীন কথা বলেছেন রাহুলবাবু। মুখ্যমন্ত্রী কোনও দিন ছিটমহল চুক্তির বিরোধিতা করেননি। বরং অতীতে বিজেপিই বাধা দিয়েছিল।”
অবশ্য তিনি নিজেও যে ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধী ছিলেন, সে কথা এ দিন স্বীকার করেন রাহুলবাবু। তিনি বলেন, “কংগ্রেস সরকারের জন্য ছিটমহল সমস্যা তৈরি হয়েছিল। ওই সরকারের ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন করার কোনও অধিকার নেই বলে আমি মনে করেছিলাম।” রাহুল বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই ভোটের আগে স্থলসীমা চুক্তি বিলটি পাশ করানোর চেষ্টা করেছিল কংগ্রেস। এ জন্যই সে সময় বিরোধিতা করেছিলেন তিনি।
বিজেপির সভা চলার সময়েই পাশে মশালডাঙা ছিটমহলে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে রাস্তা বাঁধাইয়ের কাজ করছিলেন বাসিন্দারা। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির তরফে দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “আগের সিদ্ধান্ত মতো ছিটমহলবাসীরা কেউই বিজেপির সভায় যাননি। কোনও রাজনৈতিক দলের সভাতেই আমরা যাব না।” তবে ছিটমহলবাসীদের অনেকেই তাঁদের সভা শুনতে এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন বিজেপির কোচবিহার জেলা নেতৃত্ব। দীপ্তিমানবাবুর বিরুদ্ধে এ দিন তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও করেন রাহুলবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy