Advertisement
২২ মে ২০২৪
আইকোর

জামিনের আগেই মুক্তি, কোপে আইজি-ও

আদালত তো তখনও জামিনের নির্দেশই দেয়নি। তার আগেই আইকোর-কর্তা কী ভাবে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেলেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। নিম্ন আদালত বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা আইকোর-এর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা চন্দন দে-র জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু দেখা যায়, চন্দনবাবু দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন ওই নির্দেশের ১০ দিন আগেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৫
Share: Save:

আদালত তো তখনও জামিনের নির্দেশই দেয়নি। তার আগেই আইকোর-কর্তা কী ভাবে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গেলেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।

নিম্ন আদালত বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা আইকোর-এর অন্যতম প্রধান কর্মকর্তা চন্দন দে-র জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু দেখা যায়, চন্দনবাবু দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন ওই নির্দেশের ১০ দিন আগেই। ১৫ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। এই তথ্য জেনে হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত বিস্মিত। দমদম জেলের পুলিশ সুপার এবং আইজি (কারা)-র বিরুদ্ধে তদন্ত করে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা জানানোর জন্য ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

অভিযুক্তের মুক্তি পাওয়া নিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন রুইদাস হরি নামে এক ব্যক্তি। তাঁর আইনজীবী দেবজ্যোতি বসু ও গৌরাঙ্গ পাল এ দিন বলেন, “যে-সংস্থা হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, তাদের কর্তা জামিন না-পেয়েও জেল থেকে বেরিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন! অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ এবং আদালতকে বোকা বানিয়েছেন। আমরা চাই, এই ঘটনায় যুক্ত গোটা চক্রকে গ্রেফতার করা হোক।” বারাসত আদালতে চন্দনবাবুর আইনজীবী জয় মিত্ররায় অবশ্য বলেন, “জামিনের ঘটনায় আমার মক্কেলের দোষ নেই। আদালতের কাগজপত্রের গোলমালেই এই বিপত্তি।” জেল সুপার বিপ্লব দাসেরও দাবি, “আমরা আদালতের নির্দেশ অনুসারেই অভিযুক্তকে ছেড়েছিলাম। আবার আদালতের নির্দেশেই পরবর্তী পদক্ষেপ করব।”

ঠিক কী হয়েছিল?

আদালত সূত্রের খবর, আমানতকারীদের আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে দেগঙ্গা, আমডাঙা ও বারাসত থানায় চন্দনবাবুর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল। তিনি বারাসত ও দেগঙ্গার মামলায় জামিন পান। ওই সময় আমডাঙার মামলাটিতে জামিন পাননি তিনি। অভিযোগ, তার সঙ্গেই আমডাঙার নামটিও যুক্ত করে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

আমডাঙার মামলাটি কী?

২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর রুইদাস হরি নামে এক ব্যক্তি আইকোর এবং চন্দনবাবুর নামে ন’লক্ষ টাকা প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলার সূত্রে ৩১ ডিসেম্বর আমডাঙা থানা চন্দনবাবুকে গ্রেফতার করে প্রথমে পুলিশি হেফাজতে রাখে। পরে ওই মামলায় তাঁকে জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় বারাসত আদালত। তার পর থেকেই তিনি দমদম জেলে ছিলেন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আমডাঙার মামলার শুনানিতে অভিযোগকারী রুইদাসবাবু আদালতে জানান, এজলাসের বাইরে আদালত-চত্বরেই তাঁকে হুমকি দিয়েছেন চন্দনবাবু। এর পরে দেখা যায়, মামলা থাকা সত্ত্বেও জেল-কর্তৃপক্ষ ওই দিন চন্দনবাবুকে আদালতে হাজির করাননি। আদালতের সব নথিতে দেখা যায়, ওই সময় কোনও আদালত থেকেই জামিন পাননি চন্দনবাবু। কোনও বন্ডও জমা দেওয়া হয়নি।

রুইদাসবাবুর আইনজীবীরা ১ মার্চ বারাসত আদালতে আবেদন করেন, কীসের ভিত্তিতে চন্দনবাবুকে জামিন দেওয়া হল, তা বিশদ ভাবে জানানো হোক। বারাসত আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মধুমিতা রায় ৩ মার্চ চন্দনবাবুকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। কেন চন্দনবাবুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা-ও দমদম সেন্ট্রাল জেল কর্তৃপক্ষকে আদালতে জানাতে হবে বলে নির্দেশ দেন বিচারক।

কিন্তু ৩ মার্চও চন্দনবাবু বারাসত আদালতে হাজির হননি এবং জেল-কর্তৃপক্ষও তাঁর আগাম মুক্তির কারণ দর্শাননি। শেষ পর্যন্ত বিচারকের নির্দেশে ওই দিন বিকেলেই আদালতে যান দমদম জেলের সুপার বিপ্লব দাস এবং জেলার শকুন্তলা সেন। তাঁরা জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি চন্দনবাবুকে জামিনের নির্দেশ দিয়েছে বারাসত আদালতই। কিন্তু রেকর্ডে দেখা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি আমডাঙা নয়, অন্য একটি মামলায় জামিন হয়েছে চন্দনবাবুর। বারাসত আদালত থেকে সেই তথ্য দমদম জেলে যাওয়ার সময়েই নথিপত্রে ‘গোলমাল’-এর ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেন বিচারক। তার পরে বারাসত আদালতে দফায় দফায় ওই মামলার বিচার চলে। রাজ্যের কারা দফতরের কর্তারাও যান। কিন্তু কোনও সুরাহা না-হওয়ায় রুইদাসবাবু শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

icore kolkata high court chandan dey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE