বিধানসভায় দীপালি। -নিজস্ব চিত্র
বুথে ঢুকে ভোট-লুঠ এবং নির্বাচন কর্মীদের মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহার জামিন এবং তাঁর হয়ে রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সওয়াল করা নিয়ে বিধানসভায় সরব হল বিরোধীরা। মন্ত্রী কী ভাবে নিজের সরকারের বিরুদ্ধেই আদালতে মামলা লড়লেন, তা নিয়ে সরকারি ব্যাখ্যা দাবি করেছিলেন বাম বিধায়কেরা। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় মঙ্গলবার কিছু ক্ষণের জন্য ওয়াক আউট করে বামফ্রন্ট।
বিষ্ণুপুরের এসিজেএম আদালতে সোমবার দীপালিদেবীর জামিনের আবেদনের পক্ষে সওয়াল করে আইনজীবী তথা মন্ত্রী শ্যামবাবু জানান, অসুস্থ থাকায় সোনামুখীর বিধায়ক দেড় মাস ধরে বাড়িতেই ছিলেন। তা হলে পুলিশ কেন তাঁকে খুঁজে পেল না, এক জন মন্ত্রী কী ভাবে সরকারের বিরুদ্ধে মামলায় আইনজীবী হয়ে দাঁড়ালেন, সরকার পক্ষের তরফে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে কেন কেউ দাঁড়ালেন না এ সব ব্যাপারে সরকারি অবস্থান জানতে চেয়ে এ দিন মুলতবি প্রস্তাব এনেছিলেন আনিসুর রহমান-সহ বাম বিধায়কেরা। কিন্তু বিষয়টি বিচারাধীন বলে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আলোচনার অনুমতি দেননি। এমনকী, প্রস্তাবটি পাঠ করার অনুমতিও মেলেনি! এই রুলিংয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওয়াক আউট করেন বাম বিধায়কেরা।
পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “বিধায়ক ভোট লুঠ করেছিলেন কি না, ছাপ্পা মেরেছিলেন কি না, এ সব নিয়ে আমরা আলোচনা চাইনি। তা হলে বিচারাধীন বিষয় হবে কী করে? কেন জামিনের বিরোধিতা হল না, মন্ত্রী আবার কোট পরে কোর্টে দাঁড়িয়ে পড়লেন, এই ব্যাপারে সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রস্তাবটা পড়তে পর্যন্ত দেওয়া হল না!” দীপালি-কাণ্ড রাজ্যে বিপজ্জনক প্রবণতার জন্ম দিল বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। ক্ষুব্ধ সূর্যবাবু বলেন, “স্পিকার বিধানসভার না শাসক পক্ষের, বোঝা যাচ্ছে না!”
স্পিকার অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, বিচারাধীন বিষয় বলেই এই নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার অবকাশ ছিল না। সরকারি সিদ্ধান্তের উপরে তিনি কোনও মন্তব্যও করতে চাননি। তবে পেশায় আইনজীবী, স্পিকারের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, মন্ত্রী হয়েও শ্যামবাবুর সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে সওয়াল নীতিগত ভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।
দীপালিদেবী অবশ্য এ দিন ঝাঁকি দর্শনের মতো বিধানসভায় আসেন! জামিন নেওয়ার সময় তাঁর পক্ষে অন্যতম যুক্তিই ছিল, বিধানসভায় তিনি না যেতে পারলে এলাকার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বাধা পড়বে। জামিন পাওয়ার পর দিন বিধায়ককে অবশ্য বিধানসভার হাজিরা খাতায় সই করেই বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। তবে হাজির ছিলেন মন্ত্রী শ্যামবাবু।
দলীয় বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করতে এ দিন বিধানসভায় এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তাঁরও অভিমত, আদালতে শ্যামবাবুর আইনি লড়াই ‘অনৈতিক ও বেআইনি’। এই নিয়ে আইনগত ভাবে কোনও পদক্ষেপ করা যায় কি না, তা তাঁরা ভেবে দেখছেন। দীপালি, ঊষারানি মণ্ডল বা মনিরুল ইসলামের মতো বিধায়কদের যে ভাবে শাসক দল আড়াল করছে, তার সমালোচনা করে অধীর বলেন, “একটা স্বৈরাচারী সরকার চলছে। গণতন্ত্রের অ-আ-ক-খ এরা মানে না! খোলা মাইকে এক জন বলছেন তিনি নিজে খুন করেছেন, অথচ তাঁর নাম (মনিরুল) চার্জশিটে নেই! এই সরকার নেতা-মন্ত্রীদের যা খুশি করার লাইসেন্স দিয়েছে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy