রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান মোকাবিলায় কংগ্রেসকে ফের কাছে টানার বার্তা সোমবারই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার প্রতিক্রিয়ায় শাসক তৃণমূল ও বিরোধী কংগ্রেসের বোঝাপড়ার বাতাবরণ অব্যাহত থাকল মঙ্গলবারও। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই প্রাক্তন জোটসঙ্গী দুই দল যে ফের নৈকট্য গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারে, লোকসভার ফল মাথায় রাখলেই তা বোঝা যায়। এখনই চূড়ান্ত কিছু না হলেও দু’বছর পরের বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে কোনও সম্ভাবনাই তাই একেবারে নাকচ করা যাচ্ছে না।
বিধানসভায় দাঁড়িয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর উদ্দেশে বলেছিলেন, বামেরা বিজেপি-র দিকে যেতে পারে। কিন্তু তৃণমূল তা পারে না, কংগ্রেসও পারে না। ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তার ২৪ ঘণ্টা পরে এ দিন মানসবাবুই গিয়েছিলেন অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের কাছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মানসবাবু পশ্চিম মেদিনীপুরে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হস্তক্ষেপ দাবি করতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রীর কাছেও তাঁর যাওয়ার ঘোষিত উদ্দেশ্য ওই জেলার বিষয়ই। কিন্তু পরপর দু’দিন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী অমিতবাবুর কাছে মানসবাবুর দরবার করতে যাওয়াকে নয়া রাজনৈতিক সমীকরণের প্রেক্ষিতেই দেখা হচ্ছে।
লোকসভা ভোটে তৃণমূল বিপুল সাফল্য পেলেও বিজেপি-র উত্থান তাদের চিন্তায় ফেলেছে। কংগ্রেসকে পাশে পেলে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির অংশীদার হিসাবে বিজেপি-বিরোধী ভোট আরও বেশি নিজেদের দিকে টানার সুযোগ থাকছে তাদের। আবার কংগ্রেস মালদহ-মুর্শিদাবাদে দুর্গ অনেকটাই রক্ষা করতে পারলেও বাকি রাজ্যে লোকসভা ভোটে তাদের ৩৫ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে! কাজেই বাকি রাজ্যে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তৃণমূলের হাত ধরাই সহজ পথ বলে দলের একাংশের মত। পারস্পরিক এই বাধ্যবাধকতা থেকেই ফের বার্তা বিনিময় শুরু হচ্ছে বলে দু’দলের নেতাদের একাংশই মনে করছেন। তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, “কংগ্রেসের এখন অস্তিত্বের সঙ্কট। শুধু তৃণমূল-বিরোধিতা করে তারা কি বাঁচতে পারবে?”
মানসবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, অর্থমন্ত্রীর কাছে তাঁর যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল নিখাদই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত কয়েকটি প্রশ্নে। সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়কের কথায়, “আমি গিয়েছিলাম জেলার বিধায়কদের পক্ষ থেকে। আমি-সহ জেলার বিধায়কদের অনেকেই ২০১৩-১৪ সালে এলাকা উন্নয়ন তহবিলের ৫০-৫৫%’র বেশি টাকা এখনও পাইনি। এতে উন্নয়নের কাজ করা যাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে অনুরোধ করেছি।” এ ছাড়াও, ডেবরার বালিচকে রেলের উড়ালপুল যে অনুন্নত এলাকা তহবিল (বিআরজিএফ) থেকে রাজ্য সরকারের অনুদানের অভাবে আটকে আছে এবং আরও দু’টি সেতুর কাজ রাজ্যেরই দু’টি দফতরের সক্রিয়তার অভাবে শেষ হচ্ছে না, তা-ও অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। দলেরই একাংশ অবশ্য ঈষৎ হাল্কা চালে বলছে, সেতুর কাজ নিয়ে সক্রিয় হয়ে আসলে সেতুবন্ধনেই উদ্যোগী হয়েছেন মানসবাবু!
সংসদীয় গণতন্ত্রে শাসক-বিরোধী আদানপ্রদানের রীতির কট্টর সমর্থক মানসবাবু অবশ্য মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকে রাজনৈতিক সমীকরণে মেলাতে নারাজ। তাঁর সাফ কথা, “বিরোধী দলকে মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী বা ডিজি-র কাছে যেতেই হবে। এর জন্য আমার দলে বা বাইরে আমি দু’হাজার লোকের সঙ্গে দু’শো বার বিতর্কে রাজি আছি!” বিজেপি-প্রশ্নে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “এ ব্যাপারে ওঁদেরই অবস্থান ঠিক করতে হবে! কংগ্রেসের বিজেপি-বিরোধিতা নিয়ে তো কোনও প্রশ্ন নেই!”
কংগ্রেস-তৃণমূল কাছাকাছি আসার জল্পনাতেই আরও একটু ইন্ধন দিয়েছে এ দিন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের বাজেট-বিতর্কে ঝালদার বিধায়ক নেপাল মাহাতোর বক্তব্য। সদ্য লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের টিকিটে লড়াই করে পরাজিত নেপালবাবু এ দিন সরকারের ঝাঁঝালো সমালোচনা করেননি। মন্ত্রী সুকুমার মাহাতো দায়িত্ব নিয়ে দফতরকে সচল করার এবং সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছিলেন, এ সব বলার পরে তিনি অবশ্য এখন টাকা খরচে ব্যর্থতার প্রসঙ্গ তোলেন। তাঁর সমর্থন-সূচক বক্তব্যের সময় তৃণমূল বিধায়কেরা যে ভাবে ডেস্ক চাপড়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তাতে চমৎকৃত হয়েছেন কেউ কেউ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy