Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নিঃসঙ্গ সাংসদ তাপসকে এড়িয়ে গেল কৃষ্ণনগর

তাঁর ‘ছেলেরা’ সঙ্গে ছিলেন না কেউ। কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসের মুখে গাড়ি থেকে নেমে অভ্যস্ত নমস্কার ফিরিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই। তবু, জোড় হাত-টান টান হাসি মুখ, সাড়ে ছ’মাস পরে কৃষ্ণনগরের নেমে সাংসদ বলছেন, “সক্কলে ভাল থাকবেন।” জুন মাসে, চৌমহার বটতলায় দাঁড়িয়ে ‘চন্দননগরের মাল’ তাপস পাল বিরোধীদের শাসিয়েছিলেন, “গুলি করে মারব।” তাপসের হুমকি ছিল, “একটা কেউ মস্তানি করতে এলে আমাদের ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেব।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৪
Share: Save:

তাঁর ‘ছেলেরা’ সঙ্গে ছিলেন না কেউ। কৃষ্ণনগর সার্কিট হাউসের মুখে গাড়ি থেকে নেমে অভ্যস্ত নমস্কার ফিরিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই। তবু, জোড় হাত-টান টান হাসি মুখ, সাড়ে ছ’মাস পরে কৃষ্ণনগরের নেমে সাংসদ বলছেন, “সক্কলে ভাল থাকবেন।”

জুন মাসে, চৌমহার বটতলায় দাঁড়িয়ে ‘চন্দননগরের মাল’ তাপস পাল বিরোধীদের শাসিয়েছিলেন, “গুলি করে মারব।” তাপসের হুমকি ছিল, “একটা কেউ মস্তানি করতে এলে আমাদের ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেব।” সেই তাপসের প্রত্যাবর্তনে সঙ্গে ছিলেন দলীয় এক কাউন্সিলর আর মাঝারি মাপের এক নেতা। ব্যাস, নিজের ‘ছেলে’ বলতে এই দু’জনই।

সোমবার কৃষ্ণনগরে জোলোপাড়ার মসজিদ, লাগোয়া চার্চ আর অদূরের কালী মন্দির ঘুরে ঘূর্ণির দলীয় কার্যালয় পরিক্রমার মাঝে, স্কুল পড়ুয়া থকে চায়ের দোকানি, দেখলেই হাত জোড় করেছেন সাংসদ। দুধ-সাদা প্যান্ট, নীল জ্যাকেট আর ততোধিক শুভ্র-মোজার উপরে সাদা চামড়ার কাবুলি জুতোর তাপস কি চৌমহার কালি তুলতে চাইছেন?

চায়ের দোকানে খদ্দের সামলানোর মাঝে দোকানি অবশ্য পাল্টা নমস্কারের ভঙ্গির মধ্যেই বিড় বিড় করছেন, “ওই দেখ বাবু এলেন!” মসজিদের সামনে, চাক বাঁধা ভিড় থেকে উড়ে এল দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীর টিপ্পনি, “সরি বললেই সাত খুন মাফ?”

ক’মাস আগেও দলের এই নায়ক-সাংসদকে দেখতে নদিয়ার গ্রাম-মফসস্লে ভিড় ভেঙে পড়ত। পোস্ট অফিসের মোড়, সার্কিট হাউসের চত্বর, দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে পড়শি বাড়ি থেকে উড়ে আসা ফুলের পাপড়ি, ছ-মাসে হারিয়ে গিয়েছে সব।

নাকাশিপাড়া, তেহট্ট জুড়ে, তাঁর ‘বঁটি দিয়ে’ গলা কেটে ফেলার হুমকি কিংবা মহিলাদের মান-সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জেরে নদিয়ার এই প্রান্তিক এলাকা থেকে তাঁর জনপ্রিয়তা যে ফুরিয়েছে এ দিন তা স্পষ্ট হয়েছে। দলের এক নেতা যেমন বলছেন, “ওঁর সঙ্গে থাকা মানে পায়ের তলায় জমি হারানো। তাই তাপস আসছে শুনে আমি কৃষ্ণনগর থেকে চলে গিয়েছি।” তাপসের কথায় প্রতিবাদ করেন স্থানীয় পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা। এ দিনও তিনি বলছেন, “সে দিন ওই সব বলে তিনি ঠিক করেননি। আমার অবস্থান থেকে সরিনি।” তবে কি সাংসদের সঙ্গে দেখাই করবেন না? তিনি বলেন, “তাপস ফোন করেছিলেন। বলেছি, এক সময় দেখা করব।”

বিকেলে নিঃসঙ্গ তাপস ফিরে যান সার্কিট হাউসে। ক’দিন থাকবেন তিনি। দলের এক কর্মী বলছেন, “সেটাই আতঙ্কের, পাছে দেখা হয়ে যায়!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tapas pal krishnagar visit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE