মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করা যাবে না বলে কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চ দিন বারো আগে নির্দেশ দিয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার জানিয়ে দিল, ওই কমিশন শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে মামলার নিষ্পত্তির আগে তার ফল প্রকাশ করা যাবে না। তত দিন কোনও প্রার্থীকে নিয়োগও করা যাবে না বলে এ দিন তাদের নির্দেশে জানিয়েছে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ।
কিছু দিন আগেই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন নিয়ে একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী রায় দিয়ে বলেছিলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষক বা শিক্ষাকমী নিয়োগের জন্য কোনও সার্ভিস কমিশন সুপারিশ করতে পারে না। নিয়োগ করবে মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি। মাদ্রাসা পরিচালনা করার দায়িত্ব তাদেরই। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন অসাংবিধানিক ও অবৈধ। বিচারপতি চক্রবর্তী বলেছিলেন, সংবিধান অনুযায়ী কোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনও প্রতিষ্ঠানে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ওই সব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে পারে সংশ্লিষ্ট পরিচালন সমিতি। সেই জন্যই খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে নিয়োগের জন্য কোনও সার্ভিস কমিশন নেই।
রাজ্য সরকার একক বেঞ্চের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টেরই ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করে। সোমবার সেই আপিল মামলার শুনানিতে রাজ্যের আ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ইতিমধ্যেই লক্ষ লক্ষ প্রার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফর্ম পূরণ করে টাকা দিয়েছেন। পরীক্ষা নেওয়ার সব ব্যবস্থাও হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় পরীক্ষা বন্ধ হলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে। তাই ডিভিশন বেঞ্চের বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
মাদ্রাসা কমিশনের আইনজীবীও একই মত প্রকাশ করেন। যদিও মূল মামলার আবেদনকারীরা মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে তাঁদের আপত্তির কথা জানান। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, দু’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা পেশ করে এই ব্যাপারে তাদের বক্তব্য জানাতে হবে। চার সপ্তাহ পরে ফের ওই মামলার শুনানি হবে। কমিশন পরীক্ষা নিতে পারবে। তবে মামলার চূড়ান্ত রায়ের উপরেই নির্ভর করবে এই পরীক্ষার ভাগ্য।
মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা চলে আসছে প্রায় ছ’বছর ধরে। বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ দেন ১২ মার্চ। তবে ২০০৮ সাল থেকে এত দিন ওই কমিশন মারফত যে-সব নিয়োগ হয়েছে, তা বৈধ বলেই গণ্য হবে। কারণ, বিচারপতি চক্রবর্তীর রায়ের আগেই ওই সব নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। রায়ের দিনই বিচারপতি চক্রবর্তী জানান, রাজ্য সরকার চাইলে ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারে। সেই জন্য দু’সপ্তাহ তাঁর রায় রূপায়ণ স্থগিত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।
তার মধ্যেই কমিশন পরীক্ষা নিতে পারবে বলে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেওয়ায় প্রার্থীরা অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি পেলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy