Advertisement
০২ মে ২০২৪

পুলিশ ষড়যন্ত্র করছে, কোর্টে নালিশ আসিফের

যে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তা নিয়ে বিতর্ক পৌঁছেছে আদালত পর্যন্ত। এ বার গ্রেফতারের প্রক্রিয়া নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তুললেন তাঁর আইনজীবী। শনিবার আসিফকে বারাসত কোর্টে হাজির করিয়ে ১০ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার আর্জি জানায় পুলিশ। কিন্তু বিচারক এডুইন লেপচা পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

এন আর এস হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন আসিফ খান। শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

এন আর এস হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন আসিফ খান। শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

যে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তা নিয়ে বিতর্ক পৌঁছেছে আদালত পর্যন্ত। এ বার গ্রেফতারের প্রক্রিয়া নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তুললেন তাঁর আইনজীবী। শনিবার আসিফকে বারাসত কোর্টে হাজির করিয়ে ১০ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখার আর্জি জানায় পুলিশ। কিন্তু বিচারক এডুইন লেপচা পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

একটি জমি সংক্রান্ত প্রতারণা মামলায় বিধাননগর পুলিশ বৃহস্পতিবার আসিফকে গ্রেফতার করেছিল। গ্রেফতারের পরে অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে ওই রাতেই এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ দিন দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসিফকে ছেড়ে দিলে পুলিশ তাঁকে প্রথমে কমিশনারেটের অফিসে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বারাসত আদালত। এ দিন আদালতে সরকারি আইনজীবী শান্তময় বসু জানান, জমি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে রাজারাম শরাফ ও তাঁর ছেলে নিকেতের কাছ থেকে আসিফ ছ’দফায় আট কোটি টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি রাখেননি। তাই আসিফের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে এবং গ্রেফতারও করা হয়েছে।

আসিফের আইনজীবী লোকেশ শর্মা বলেন, এই মামলায় পুলিশ ষড়যন্ত্র করেছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মানা হয়নি। লোকেশের অভিযোগ, আসিফকে গ্রেফতার করার সময় ‘অ্যারেস্ট মেমো’ দেওয়া হয়নি। শারীরিক পরীক্ষাও হয়নি। এমনকী, আদালতের কাছে এনআরএস হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্যও পেশ করা হয়নি।

ইতিমধ্যেই এই মামলার অভিযোগকারীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন লোকেশ। তাঁর বক্তব্য, রাজারাম ও নিকেত শরাফ কেন কোনও চুক্তিপত্র ছাড়াই আসিফকে নগদে আট কোটি টাকা দিলেন? এটা কতটা বিশ্বাসযোগ্য? এক জন শিল্পপতি জমি জোগাড়ের জন্য কেন হিডকো বা অন্য কোনও সরকারি সংস্থার কাছে গেলেন না, কেনই বা আসিফের কাছে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন লোকেশ। আসিফের আইনজীবীর আরও প্রশ্ন, যাঁদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, কেন তাঁরা নিজেদের বয়ানে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন না? কেন সংস্থার এক কর্মী অভিযোগ করলেন?

রসিদ বা চুক্তিপত্র ছাড়া টাকা লেনদেন নিয়ে হাইকোর্টে প্রশ্ন উঠেছিল আগেও। ২০ কোটি টাকার অন্য একটি প্রতারণার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি সুদীপ অহলুওয়ালিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে যে দিন সরকারি আইনজীবী আসিফের জামিনের বিরোধিতা করেছিলেন, সে দিনও বিচারপতিরা টাকা লেনদেনের রসিদ দেখতে চান। সরকারি আইনজীবী সে সব দেখাতে পারেননি। এর পরেই রসিদ ছাড়া কেন এত টাকা লেনদেন হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতিরা। ওই মামলায় হাইকোর্ট আসিফের জামিন মঞ্জুর করে।

এ দিন বারাসত আদালতে সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন অভিযুক্তের আইনজীবী। তিনি বলেন, হাইকোর্টে জামিন মঞ্জুর হয়ে যাওয়ার পরে নতুন একটি মামলা দায়ের করে তাঁর মক্কেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা পুলিশেরই ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক দল ছেড়ে বেরিয়ে আসাতেই পুলিশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে লোকেশের অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপধ্যায়ও এ দিন এক অনুষ্ঠানে বলেন, “পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।”

পুলিশ অবশ্য এ সব অভিযোগ মানতে নারাজ। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “টাকা কোথায় গিয়েছে আসিফকে আমাদের হেফাজতে নেওয়ার পরেই তা জানার চেষ্টা হবে।” শরাফদের বদলে তাঁদের সংস্থার এক কর্মীর অভিযোগ দায়ের করা নিয়ে গোয়েন্দাপ্রধানের মন্তব্য, “সংস্থার ম্যানেজার হিসেবে তিনি অভিযোগ দায়ের করতেই পারেন।”

পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, কৃষ্ণপ্রসাদের অভিযোগ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। কখনও বলা হয়েছে, টাকা লেনদেনের বিবরণ সংস্থার ‘লেজার বুক’-এ লেখা রয়েছে। কখনও বলা হয়েছে, নিকেতের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গিয়েছে। অভিযোগপত্রে রাজারাম শরাফের পদমর্যাদা নিয়েও দু’রকম তথ্য রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। বিধাননগরের পুলিশকর্তারা অবশ্য এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, “তদন্ত চলাকালীন এ সব কিছুই খতিয়ে দেখা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha group asif khan police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE