এ বার পণ্য-পরিষেবা কর নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের দাবি-দাওয়া না-মেনে কেন্দ্রীয় সরকার পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু করতে চাইলেও মমতা তা মানতে নারাজ। দলের সাংসদদের তৃণমূল নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, লোকসভা ও রাজ্যসভায় এর বিরুদ্ধে সরব হতে। মমতার বক্তব্য, “যে-ভাবে পশ্চিমবঙ্গকে অগ্রাহ্য করে পণ্য-পরিষেবা কর চালুর চেষ্টা হচ্ছে, তা ডেথ অব ফেডারেল ডেমোক্র্যাসি।”
গত কাল জিএসটি চালুর জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সোমবারের মধ্যেই এই বিল সংসদে পেশ করতে চাইছে তারা। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস তাতে আপত্তি জানাবে। তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের একটি কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জিএসটি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু সেই কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে রাখা হয়নি। অথচ পশ্চিমবঙ্গের তরফে যে সব দাবি ছিল, সেগুলোও মানা হয়নি।
আজ দুপুরে সংসদের সেন্ট্রাল হলে যান মমতা। সেই সময়েই অমিত মিত্র তাঁকে জানান, পশ্চিমবঙ্গকে অগ্রাহ্য করেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জিএসটি বিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বিক্রয় করের ক্ষতিপূরণ বাবদ পশ্চিমবঙ্গের পাওনা ৪,৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এখনই ৪০০০ কোটি টাকা মিটিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু আগামী অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গকে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। বাকি পাওনা পরে কিস্তিতে মেটানো হবে। অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, কোনও রাজ্যকেই এক কিস্তিতে সব পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
মমতার দাবি, পশ্চিমবঙ্গ মোটেই জিএসটি-র বিরোধী নয়। কিন্তু জিএসটি-র জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সেখানে রাজ্যগুলির মতামত ছাড়া কেন্দ্র যে ভাবে এগোতে চাইছে, তা ঠিক নয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির প্রধান কারণ, অর্থমন্ত্রীদের কমিটি থেকে অমিত মিত্রকে বাদ দেওয়া। আজ সেন্ট্রাল হলে মমতা এডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, বিজু জনতা দলের নেতাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের অনুমতি ছাড়া এমন একটি সংবিধান সংশোধনী বিল কেন্দ্র পাশ করাতে পারে না।
অর্থ মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এমপাওর্য়াড কমিটি থেকে কাউকেই বাদ দেওয়া হয়নি। সেখানে সব রাজ্যই রয়েছে। কিন্তু গত সপ্তাহে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের কমিটিতে জিএসটি নিয়ে ঐকমত্য তৈরি না-হওয়ায়, জম্মু-কাশ্মীর, গুজরাত ও হরিয়ানার অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ছোট কমিটি তৈরি হয়। কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর বাবদ ক্ষতিপূরণ, পেট্রোপণ্যের উপর করের মতো যে-সব বিষয়ে বিবাদ ছিল, তা ওই কমিটিতে নিষ্পত্তি হয়। অমিত মিত্র এই কমিটিতে ছিলেন না। এর পর জম্মু-কাশ্মীর, পঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাত, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের অর্থমন্ত্রীরা জেটলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানেই জিএসটি চালুর সমাধান সূত্র বার হয়। এর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিযয়টি অনুমোদিত হয়েছে।
যেহেতু এ’টি সংবিধান সংশোধনী বিল, তাই নিয়ম মতো সংসদের দুই কক্ষেই তিন-চতুর্থাংশের সমর্থন প্রয়োজন। তৃণমূলের তরফে অন্য দলগুলিকে পাশে টানার চেষ্টা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ইউপিএ-সরকারের আমলে গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশ জিএসটি-র বিরুদ্ধে সবথেকে বেশি সরব ছিল। মোদী জমানায় তারা সায় দিয়েছে। মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিরোধিতা করছিল। সেখানে কংগ্রেসের বদলে বিজেপি সরকার এসে গিয়েছে। তামিলনাড়ুও অবস্থান বদলে বিলে সমর্থন করবে। কেরল, কর্নাটকের মতো কংগ্রেস শাসিত রাজ্যও বিলে সমর্থন করবে। বিহার ও উত্তরপ্রদেশও বিলে সমর্থন করবে বলে অর্থ মন্ত্রক আশা করছে। কারণ জিএসটি চালু হলে এদের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বাড়বে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বাধা দিলেও সংসদে বিল পাশ করানোর পরে অর্ধেক রাজ্যের সমর্থন পেতে অসুবিধা হবে না বলেই মোদী সরকারের আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy