চেক ফিরিয়ে নিয়ে ফের দানের সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র
মাছের তেলে মাছ ভাজা নতুন কিছু নয়। তবে বাড়তি ফায়দা লুটতে মাছের তেলে মাছ চাষের অভিনব চেষ্টা চলছে খাস কলকাতাতেই! পুরসভার ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলরের এই ধরনের খেল্-উদ্যোগ দেখে রাজ্যের ক্রীড়া দফতরের কর্তারাও হতবাক। এমনটা যে আদৌ হতে পারে, সেটা বিশ্বাসই করে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
কী করছেন ওই কাউন্সিলর?
বিভিন্ন ক্লাবের উন্নয়নে সরকারের তরফে অনুদান দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে। ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন ক্লাব জানাচ্ছে, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অনুদানের চেক হাতে পাওয়ার পরেই ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদীপ পোল্লের অফিস থেকে রীতিমতো ফরমান এসেছে, তাঁর অফিসে গিয়ে ওই চেক জমা দিয়ে আসতে হবে। আগামী ২২ জানুয়ারি রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠান করে ক্লাবগুলির মধ্যে ওই চেকই ফের বিলি করবেন সুদীপবাবু। তিনি নিজেই ওই চেক বিলি করছেন, এমনটা জানিয়ে প্রচারও শুরু হয়েছে ওই ওয়ার্ডে।
যিনি এ-সব করছেন, তিনি শাসক দলেরই কাউন্সিলর। তাই সব দেখেশুনেও কিছু বলতে পারছেন না স্থানীয় ক্লাবের কর্তারা। পাছে দু’লক্ষ টাকা হাতছাড়া হয়ে যায়! তবে প্রকাশ্যে কিছু না-বললেও আড়ালে-আবডালে এই নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে ক্লাব-কর্তাদের মধ্যে। ওই ওয়ার্ডের একটি ক্লাবের এক কর্তার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চেক আবার ঢাকঢোল পিটিয়ে বিলি করছেন সুদীপদা। এ তো রীতিমতো ভাবের ঘরে চুরি! খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কৃতিত্ব কেড়ে নিচ্ছেন তাঁরই দলের এক কাউন্সিলর!” আর এক ক্লাব-কর্তার সহাস্য বক্তব্য, “এটা হাস্যকর! রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়ে কেউ এসে তাঁর পাড়ার কাউন্সিলরের কাছে জমা দিয়ে ফের ওই পুরস্কার দিতে বলার মতোই হাস্যকর!!”
চলতি মাসেরই ১০ তারিখে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ক্লাবগুলিকে অনুদান দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে নতুন ক্লাবগুলিকে দু’লক্ষ এবং অতীতে অনুদান পাওয়া ক্লাবগুলিকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের ক্রীড়া এবং যুবকল্যাণ দফতরের তরফে। সেই অনুষ্ঠানে বেহালা এলাকার ১২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২০টি ক্লাব সরকারের কাছ থেকে অনুদান পেয়েছে। ওই অঞ্চলের বিভিন্ন ক্লাব সূত্রের খবর, অনুদান পাওয়ার পরেই কাউন্সিলরের অফিস থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি অনুদানের সব চেকই জমা দিয়ে যেতে হবে সুদীপবাবুর কাছে। তিনি ২২ জানুয়ারি বড়িশা ক্লাব প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠান করে ওই চেক ফের বিলি করবেন। সেই অনুষ্ঠানের প্রচারে শাসক দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ওই এলাকায় লাগানো হোর্ডিংয়ে বলা হয়েছে, অনুদানের চেক বিলি করবেন সুদীপবাবু। মুখ্যমন্ত্রী নয়।
আড়ালে-আবডালে সমানে কটাক্ষ এবং সমালোচনা চললেও অনুদান প্রাপক সব ক্লাবই অবশ্য কাউন্সিলরের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। এক ক্লাব-কর্তার কথায়, “বুঝতে পারছি, কাউন্সিলর নিজের প্রচার করতেই এ-সব করছেন। কিন্তু তাঁর নির্দেশ অমান্যও তো করতে পারব না। শাসক দলের ক্ষমতা অনেক!”
তবে কাউন্সিলর সুদীপ পোল্লে নিজে এর মধ্যে অন্যায়ের কিছুই দেখছেন না। তাঁর কথায়, “আমি কিছুই দিচ্ছি না। সবই সরকার দিচ্ছে।”
তা হলে নিজের নামে এ ভাবে প্রচার চালাচ্ছেন কেন?
জবাবে সুদীপবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চেক আবার দিতে পারব না, সংবিধানে এমন কোনও কথা লেখা আছে নাকি!”
কাউন্সিলরের এই কীর্তির কথা শুনে অবশ্য থতমত খেয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের অনেক তাবড় নেতা-মন্ত্রীই। এমনকী একই পুরস্কার দ্বিতীয় বার কী ভাবে বিলি করা যায়, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বেশ রক্ষণাত্মক দেখাল কলকাতার মেয়র তথা এলাকার (বেহালা পূর্ব) বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও। তাঁর ব্যাখ্যা, “এতে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়াটাকে ছোট করা হচ্ছে না। স্থানীয় ভাবে কেউ কোনও অনুষ্ঠান করতেই পারেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy