ম্যাচ জমজমাট। মঙ্গলবার শ্রীরামপুর আদালতের মাঠে। ছবি: প্রকাশ পাল
আদালতের অচলাবস্থা কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু ওই আদালতের আইনজীবীদের তাতে কোনও হেলদোল নেই। বরং বিচারক বয়কটের ৫০ দিন পূর্তি দিবসটিকে ক্রিকেট খেলে উদ্যাপন করল শ্রীরামপুর আদালত বয়কটকারী আইনজীবীদের যৌথ সংগ্রাম কমিটি।
এক দিনের খেলা নয়, শ্রীরামপুর আদালতের দেওয়ানি বিচারক (সিনিয়র ডিভিশন) মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস বয়কটের ৫০ দিন পালনের জন্য ‘সংগ্রাম আন্দোলন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ক্রিকেট প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করেছে যৌথ সংগ্রাম কমিটি। খেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। উদ্যোক্তাদের দাবি, এতে আদালতের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হবে না। যদিও মঙ্গলবার আদালতে গিয়ে অন্য দৃশ্য দেখা গিয়েছে।
আইনজীবীদের এই ক্রিকেট খেলা সমর্থন করছেন না হাইকোর্টের আইনজীবীদের অনেকেই। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র বলেন, “আইনজীবীদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখেন বিচারপ্রার্থীরা। এ ক্ষেত্রে তাঁরাই বিচারপ্রাপ্তির থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটা ভাল নয়। তবে অযাচিত ভাবে কিছু করতে পারি না। প্রধান বিচারপতি যদি দায়িত্ব দেন অথবা ওই আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন যদি সাহায্য চান, নিশ্চয়ই সমাধানে উদ্যোগী হব।”
হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মতে, “শ্রীরামপুর আদালতের ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ। প্রধান বিচারপতির হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করার। হয় তিনি শ্রীরামপুর আদালতের ওই বিচারককে অন্যত্র বদলি করুন, নয় আইনজীবীদের শাস্তি দিন। এই অচলাবস্থা কাটাতে যে কোনও একটা করতেই হবে।”
শ্রীরামপুর আদালতের সমস্যা মেটাতে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পরে বেশ কিছু দিন কেটে গিয়েছে। সমাধান এখনও অধরা। হুগলি জেলা জজ জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার (ইনস্পেকশন) শিবকান্ত প্রসাদ ঘুরে গিয়েছেন। আন্দোলনরত আইনজীবীদের বয়কট তুলে নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন তাঁরা। এ বার আইনজীবীদের বড় একটি অংশ জানিয়ে দিয়েছেন, ওই বিচারককে অন্যত্র বদলি করা না হলে আগামী সোমবার থেকে এক সপ্তাহ ধরে শ্রীরামপুর আদালত বয়কট করা হবে।
বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ৭ জানুয়ারি থেকে তাঁর এজলাস অচল করে রেখেছেন আইনজীবীদের একাংশ। নিজেদের সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে কমিটি গঠন কিছুই বাদ যায়নি। হাইকোর্ট ওই বিচারককে না সরালে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিতেও পিছপা হননি তাঁরা। মন্দাক্রান্তাদেবীর এজলাসে ঢোকায় একাধিক আইনজীবী এবং বেশ কিছু বিচারপ্রার্থী বা সাক্ষী তাঁদের বিরাগভাজন হয়েছেন। উঠেছে মহিলা আইনজীবীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং সাক্ষ্য দিতে আসা পুলিশ অফিসারকে হেনস্থার অভিযোগও।
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, হাইকোর্টকে চাপে ফেলতেই এ ভাবে ‘সংগ্রাম আন্দোলন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি’ নাম দিয়ে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। এ দিন দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ খেলা শুরু হয়। ব্যান্ডপার্টিও ছিল। তবে চারটি দল খেললেও মাঠে নামেনি যৌথ সংগ্রাম কমিটি। আজ, বুধবার তাদের খেলতে নামার কথা রয়েছে। শ্রীরামপুর আদালতের এক প্রবীণ আইনজীবী বলেন, “দিন হিসেবে ধরলে বয়কটের হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে। এ ভাবে আন্দোলনের নামে কাজ ফেলে হুল্লোড় করে ক্রিকেটে মেতে থাকাটা মানুষ কতটা ভাল ভাবে নেবেন, সেই প্রশ্ন কিন্তু উঠছেই।”
যৌথ সংগ্রাম কমিটির মুখপাত্র রঞ্জন সরকারের বক্তব্য, “নিজেদের সম্মান রক্ষার্থেই আমাদের আন্দোলন। এ নিয়ে গোটা রাজ্যই উদ্বেলিত। তাই প্রতিযোগিতার এই নামকরণ।” তাঁর ব্যাখ্যা, “নানা আঙ্গিকে আন্দোলন চলছে। ক্রিকেট প্রতিযোগিতাও এই আন্দোলনের অংশ। সমস্যার সমাধান না হলে আগামী সোমবার থেকে শনিবার পর্যন্ত গোটা আদালত বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
বিচারপ্রার্থীদের অনেকেই অবশ্য আইনজীবীদের এই কাণ্ডকারখানার কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, এর ফলে আখেরে ভুগতে হচ্ছে তাঁদেরই। তবে রঞ্জনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “বিচারপ্রার্থী কেউ নন, প্র্যাকটিস করেন না বা চেম্বারে বসেন না এমন কিছু আইনজীবীই এ সব বলতে পারেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy