পুরভোটকে সামনে রেখে প্রস্তুতিতে নেমে পড়ল যুযুধান দুই দল তৃণমূল ও বিজেপি। তৃণমূল ভবনে রবিবার কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের সঙ্গে বৈঠক করে শীর্ষ নেতৃত্ব বার্তা দিলেন, আগামী বছর পুরভোটে শহরে বিজেপি তাঁদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই বিজেপি-কে খাটো করে দেখা উচিত হবে না। আবার এ দিনই দলীয় দফতরে বিশিষ্ট জনেদের সঙ্গে মত বিনিময় করে পথ ঠিক করতে চেয়েছে বিজেপি। সেখানে উঠে এসেছে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ধরানো এবং কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পে এ রাজ্যের বেকারদের কর্মসংস্থান করার প্রসঙ্গ।
কলকাতার কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূলের এ দিনের বৈঠক অবশ্য ছিল মুখবন্ধ মাত্র। এর পরে ৩ নভেম্বর কালীঘাটে পুরভোট নিয়ে বৈঠক করে আসল বার্তা দেওয়ার কথা স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই। তবে লোকসভা ভোটের নিরিখে শহরের ২৬টি ওয়ার্ডে বিজেপি-র এগিয়ে থাকা মাথায় রেখে প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না তৃণমূল শিবির। উত্তর ও দক্ষিণে মোট ওয়ার্ডগুলি ভাগ করে নিয়ে দু’দিকের কাউন্সিলরদের নিয়ে আলাদা বৈঠকেরও পরিকল্পনা হয়েছে। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার দুই সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীকে।
তৃণমূল ভবনে কাউন্সিলরদের বৈঠকে এ দিন ছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়, লোকসভার দলনেতা সুদীপবাবু, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রতবাবু, সাধারণ সম্পাদক বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, গৌতম দেব প্রমুখ। তবে তার মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতি যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরই। দলীয় সূত্রের খবর, প্রাক্তন মেয়র সুব্রতবাবু বৈঠকে বলেন, ২০১৬-য় বিধানসভা ভোটের আগে আগামী বছরের পুরভোটের ফল মানুষের মনে প্রভাব ফেলবে। তৃণমূলের পুরভোটের ফল খারাপ হলে বিধানসভার লড়াই হয়ে উঠবে কঠিন। তাই পুরভোটে আসন বাড়িয়ে রাজ্যবাসীকে বার্তা দিতে হবে, বিরোধীদের লাগাতার সমালোচনামূলক প্রচার সত্ত্বেও তৃণমূলের জনপ্রিয়তা অটুট। তবে বিজেপি-র ভয় যাতে কর্মীদের মনোবলে আঘাত না করে, সে জন্যই এ দিন তৃণমূল বৈঠকে বলেছে, গেরুয়া শিবিরকে খাটো করা বা অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া কোনওটারই দরকার নেই। নিজেদের কাজ ভাল করলেই ফল মিলবে। সে জন্যই নাগরিক পরিষেবা ও অসম্পূর্ণ প্রকল্প শেষ করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। প্রচারপত্র তৈরির কথাও এসেছে।
স্থানীয় নেতাদের প্রতি তৃণমূলের পরামর্শ, ভোটার তালিকায় নতুন নাম তোলা এবং সংশোধনের কাজে মন দিতে হবে। যে সব ওয়ার্ড তৃণমূলের দখলে নেই, সেগুলিতে জনতার মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে হবে পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের। সর্বত্র দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতে হবে। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বৈঠকের আলোচনা নিয়ে তৃণমূল অবশ্য মুখ খোলেনি। পার্থবাবু শুধু বলেন, “আমরা পুজোর পরে এই ধরনের বৈঠক করি।” ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলেও পার্থবাবু জানান।
দলের বিশিষ্ট জনেদের সঙ্গে বৈঠকে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, এ রাজ্যে বাম এবং তৃণমূল যে হেতু পরীক্ষিত, তাই আগামী দিনে বিজেপি-রই উদয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে হবে। বৈঠকে ছিলেন পি সি সরকার, প্রাক্তন ফুটবলার ষষ্ঠী দুলে, শিল্পপতি শিশির বাজোরিয়া, অভিনেতা নিমু ভৌমিক, জর্জ বেকার, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়, শর্মিষ্ঠা কর পুরকায়স্থ, আর কে হান্ডা, আর কে মহান্তি প্রমুখ। অনেক চিকিৎসক এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টও এ দিনের বৈঠকে যোগ দিয়ে জানান, বিজেপি-র কাছে তাঁদের প্রত্যাশা কী।
দলীয় সূত্রের খবর, ওই বিশিষ্টদের বক্তব্য, যে তরুণ প্রজন্ম লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর ‘সুদিন আনা’র আশ্বাসে মুগ্ধ হয়ে বিজেপি-র পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদের ভোট ধরে রাখতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কর্মসংস্থান চাই। সাম্প্রতিক বসিরহাট বিধানসভার উপনির্বাচনের ফল বলছে, শহর এলাকায় বিজেপি-র প্রভাব বেশি হলেও গ্রামাঞ্চলে তারা তেমন সুবিধে করতে পারেনি। তাই গ্রামীণ এলাকায় প্রভাব বাড়াতে হবে দলকে। এ রাজ্যে প্রায় ২৮% সংখ্যালঘু ভোট। তাদের উপেক্ষা করে ক্ষমতা দখল করা যাবে না। সুতরাং, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের দিকে টেনে আনার জন্য ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা মুছতে সচেষ্ট হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy