বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানা এলাকার বাসিন্দা বছর বাহান্নর সুবল কুমার আট দিন আগে বনগাঁয় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। মঙ্গলবার তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই এ দিন দুপুরে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলেন। শুনেছেন দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। অবরোধে গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ। এ দেশে আসবার সময় তিনি বাসে যশোর পর্যন্ত এসেছিলেন। সেখান থেকে বাস পাল্টে বেনাপোল পৌঁছে এ দেশে ঢুকে ছিলেন। পেট্রাপোলে দাঁড়িয়ে বললেন,“বাড়ি ফেরার কোনও যানবাহন পাব কিনা বুঝতে পারছি না!” কী ভাবে ফিরবেন বাড়ি? সুবলবাবু জানালেন “বেনাপোল থেকে খানিকটা হেঁটে, সেখান থেকে ইঞ্জিন ভ্যান পেলে তাই চড়ে ফেরার চেষ্টা করব।” মোট পাঁচ বার ওই ভ্যান পাল্টাতে হবে। তার পরও জানেন না, কপালে কী আছে। খরচও হবে বাড়তি বহু টাকা।
অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে,বাংলাদেশের পরিস্থিতির করণে দু’দেশের মধ্যে মানুষের যাতায়াত কমে গিয়েছে। সোমবার বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করেছেন ২৪৬১ জন। মঙ্গলবার দুপুর একটা পর্যন্ত যাতায়াত করেছেন ১৩৭৫ জন। স্বাভাবিক দিনে গড়ে এখানে দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত করেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। প্রভাব পড়েছে মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা ও পরিবহণ ব্যবসায়ও।
শুধু সুবলবাবুই নন, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে এ দিন যারা দেশে ফিরলেন, তাঁদের চোখে মুখে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা। আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করে দেশের পরিস্থিতির খবর দিচ্ছেন। রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের সর্বত্র শাসক আওয়ামি লিগ ও বিরোধী বিএনপি-জামাতে ইসলামির কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে জনজীবন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেউ দেশের বাইরে থাকতে চাইছেন না। সে কারণেই পথে যানবাহন মিলবে না, ভোগান্তি হতে পারে এ সব জেনেও দ্রুত তাঁরা দেশে ফিরতে চাছেন।
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ফিরছিলেন রাজবাড়ি জেলার পানসা থানা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। রাজবাড়ি থেকে বাসে যশোর হয়ে বেনাপোলে এসেছিলেন। পেট্রাপোল সীমান্তে এসে শুনলেন বাস চলছে না। কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন জানেন না। তবুও ঢুকে পড়লেন দেশের মাটিতে। দার্জিলিঙে বেড়াতে এসেছিলেন গোপালগঞ্জ জেলার মকসুদপুর এলাকার যুবক এবিএম মাহফুজুল হক। তাঁরও কপালে ঘোর চিন্তার ভাঁজ। তা নিয়েই তিনি পেরিয়ে গেলেন সীমান্ত।
ঢাকার বাসিন্দা মহম্মদ নইম বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে এদেশে বেড়াতে এসেছিলেন। ইচ্ছে ছিল আরও কয়েকটা দিন কাটিয়ে দেশে ফেরার। কিন্তু বাড়ি থেকে আতঙ্কিত স্ত্রী-মেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে বলায় তিনি ফিরে যাচ্ছেন। জানেন না কী ভাবে ফিরবেন।
সীমান্তে গিয়ে দেখা গেল, বাস অটো ট্যাক্সি সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যাত্রী নেই। মুদ্রা বিনিময়ের দোকানগুলোতেও ভিড় নেই। বিশ্বজিৎ ঘোষ নামে এক মুদ্রা বিনিময় ব্যবসায়ী বলেন “ভিড় একদমই কম। বাংলাদেশে দূরপাল্লার বাস চলছে না। ট্রেন চললেও প্রচণ্ড ভিড়। মানুষজন তাই যেতে চাইছেন না।”
এ দেশের বাগদার হেলেঞ্চা এলাকার বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস জানতেনই না বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি। পেট্রাপোলে এসে সব শুনেছেন বাংলাদেশি সহযাত্রীদের কাছ থেকে। যশোরে যাবেন আত্মীয় বাড়ি। বললেন, “আগে জানলে আসতাম না। শুনছি ট্রেকার ও ইঞ্জিন ভ্যানে যশোর পর্যন্ত যাওয়া যাবে। দেখা যাক!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy