ধর্ষণের অভিযোগ থানায় জানাতে গিয়ে এক শ্রেণির পুলিশ অফিসারের অপমানকর মন্তব্যের শিকার হতে হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটের নির্যাতিতাকে। পরে অবশ্য সেই পুলিশ অফিসারদের শাস্তি দেয় লালবাজার।
মাস ছয়েক আগে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে মালদহে। শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে গিয়ে সেখানকার কিছু পুলিশ অফিসারের কুরুচিকর মন্তব্যে এমনই অপমানিত হয়েছিলেন যে, অভিযোগ না-জানিয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হন এক মহিলা।
পার্ক স্ট্রিট বা মালদহের মতো ঘটনা ঘটছে রাজ্যের বহু থানাতেই। পুলিশি সূত্রের খবর, প্রায়ই থানার পুরুষ অফিসারদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়ছে রাজ্য পুলিশের কর্তাদের কাছে। মহিলাদের এই ধরনের হয়রানি রুখতে তাই এ বার রাজ্যের সব থানায় ‘লেডিজ হেল্প ডেস্ক’ ‘মহিলা সহায়তা কেন্দ্র’ চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল গোটুর মহারেড্ডি প্রভু রাজাশেখর রেড্ডি।
ভবানী ভবন সূত্রের খবর, সপ্তাহ দুয়েক আগে ডিজি-র জারি করা ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রতিটি থানায় আলাদা ভাবে মহিলা পরিচালিত সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করতে হবে। মহিলা থানার মতো ওই সব সহায়তা কেন্দ্রেরও পরিচালনার ভার ন্যস্ত হবে সংশ্লিষ্ট থানার কোনও মহিলা অফিসারের উপরে। তাঁকে সাহায্য করবেন মহিলা কনস্টেবল এবং সিভিক মহিলা পুলিশকর্মীরা। হাওড়া কমিশনারেট এবং বেশ কয়েকটি থানায় ইতিমধ্যেই এই ধরনের সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ডিজি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, কী করে অভিযোগ জানাতে হবে, কী ভাবে এফআইআর করতে হবে, আইনি সাহায্য কোথায় মিলবে ইত্যাদি ব্যাপারে অভিযোগকারিণীকে সাহায্য করবেন মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের মহিলা পুলিশকর্মীরা। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ওই সহায়তা কেন্দ্র।
কিন্তু রাজ্যের সব থানায় এমন সহায়তা কেন্দ্র চালু করার মতো পর্যাপ্ত মহিলা অফিসার আছে কি?
পুলিশি সূত্র জানাচ্ছে, রাজ্যে থানার সংখ্যা প্রায় ৪৫০। এর মধ্যে বেশির ভাগ থানাতেই মহিলা পুলিশ অফিসার নেই। মহিলা কনস্টেবল এবং সিভিক মহিলা পুলিশ দিয়ে এই ঘাটতি মেটানো হয়। ফলে ডিজি-র ওই নির্দেশকে স্বাগত জানালেও পুলিশের একাংশ এই প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে রয়েছেন। পুলিশকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, সব থানায় মহিলা অফিসার না-থাকলেও সিভিক পুলিশের মহিলাকর্মীদের দিয়েই সহায়তা কেন্দ্র চালানো যেতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সমস্যা হল, পুলিশ অফিসারের মতো প্রশিক্ষণ নেই সিভিক পুলিশের মহিলা কর্মীদের। আইনকানুন সম্পর্কেও তাঁদের জ্ঞান অত্যন্ত সীমিত। তাই তাঁদের দিয়ে এই ধরনের সহায়তা কেন্দ্র চালালে তাতে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। রাজ্য পুলিশের কর্তারা অবশ্য বলছেন, সিভিক পুলিশের কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে এই ধরনের কাজ করানো যেতে পারে। ইতিমধ্যে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরুও হয়েছে অনেক জায়গায়।
রাজ্যের এক পুলিশকর্তা জানান, মহিলা সহায়তা কেন্দ্রে যাঁরা বসবেন, তাঁদের কী করতে হবে, আগে থেকেই থানার অফিসারেরা তা জানিয়ে দেবেন। হাওড়ার এক থানার অফিসার বলেন, “আমার থানায় মহিলা অফিসার নেই। কিন্তু মহিলা সিভিক পুলিশকর্মীরা আমাদের নির্দেশমতো সফল ভাবেই সহায়তা কেন্দ্রে আসা অভিযোগকারীকে সাহায্য করছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy