সারদা-কাণ্ড নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতিতে আবার আলোচনায় ফিরে এল সিঙ্গুর! টাটার কারখানার জন্য অধিগৃহীত জমি রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই বিধানসভায় বিল পাশ করিয়ে ফিরিয়ে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সিদ্ধান্তকে ঘিরে আইনি লড়াই এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচার্য। আগামী ১৪ অক্টোবর তার রায় বেরোনোর কথা। তার আগেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে ভাবে টাটা কর্তৃপক্ষের সিঙ্গুরের জমি ফিরিয়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়েই পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, সিঙ্গুর নিয়ে অনর্থক জটিলতা কাটাতে রাজ্য সরকার আগেই কেন টাটার সঙ্গে আদালতের বাইরে সমঝোতার রাস্তায় গেল না? কেন বারেবারেই বিরোধীদের প্রস্তাব তারা কানে তুলল না?
‘সিঙ্গুর দিবস’ উপলক্ষে হুগলির ওই জনপদে গিয়ে পার্থবাবু বৃহস্পতিবার টাটার উদ্দেশে বলেছিলেন, “আপনারাই বলে দিন, আদালতের বাইরে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে জমি ফেরত দেব।” ঘটনা হল, আইনি পথে অধিগৃহীত জমি মূল মালিককে ফেরত দেওয়া দুরূহ বলেই বিরোধীরা আগে প্রস্তাব দিয়েছিল, টাটার সঙ্গে আদালতের বাইরে আলোচনায় বসুক রাজ্য সরকার। তাতেই কোনও সমাধানসূত্র মিলতে পারে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী অনড় ছিলেন বরাবর। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই এখন শাসক দলকে খোঁচা দিচ্ছে বিরোধীরা। যেমন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, “নতুন সরকার আসার পরে বিধানসভায় যখন সিঙ্গুর নিয়ে আইনের তোড়জোড় হচ্ছে, তখনই এই কথা আমরা বলেছিলাম। ওঁরা তখন শোনেননি! এখন সর্বোচ্চ আদালতে রায় ঘোষণার দিনক্ষণ ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ এ সব বলছেন!” বিরোধীদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায় রাজ্যের পক্ষে বা বিপক্ষে যা-ই হোক, সিঙ্গুরকে কেন্দ্র করেই অদূর ভবিষ্যতে আবার সারদা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করতে পারে শাসক দল।
কয়েক মাস আগেও বিধানসভায় শিল্প বাজেট নিয়ে আলোচনায় কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার সরাসরি প্রস্তাব ছিল, রাজ্যের স্বার্থে আদালতের বাইরে টাটাদের সঙ্গে কথা বলুক সরকার। শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র সে দিন এই নিয়ে রা কাড়েননি! মানসবাবু শুক্রবার বলেন, “রাজ্য সরকার সুযোগ হাতছাড়া করেছে। অনর্থক জেদ এবং ইগোর লড়াইয়ে সিঙ্গুর সমস্যা এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। একমাত্র আলোচনা করলেই এই সমস্যা সমাধানের পথ বেরোতে পারত।” মানসবাবুর মতে, বাম জমানায় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বা শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনেরা যেমন আলোচনা ছাড়াই জমি অধিগ্রহণের গা-জোয়ারি করতে গিয়েছিলেন, তেমনই সিঙ্গুর নিয়ে জেদ আঁকড়ে থেকেছেন মমতাও। যার মাসুল দিতে হচ্ছে সিঙ্গুর-সহ গোটা রাজ্যের মানুষকে। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বক্তব্য, “আদালতে একের পর এক ধাক্কা খেতে খেতে রাজ্য সরকার এখন ভয় পাচ্ছে, সিঙ্গুর নিয়ে রায়ও তাদের বিপক্ষেই যাবে। তাই পার্থবাবুরা এ সব বলছেন!”
স্বয়ং পার্থবাবুর দাবি, তিনি আদালতের বাইরে কোনও সমঝোতার কথা বলেননি। ‘আদালতের বাইরে’ শব্দটি সংবাদমাধ্যমের পছন্দ বলে তাঁর দাবি! পার্থবাবুর বক্তব্য, “আমি বলতে চেয়েছি, অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। জনতার মন বুঝে টাটারা যত তাড়াতাড়ি জমি ফিরিয়ে দেয়, তত ভাল!” বিরোধীদের অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন, “টিভি ক্যামেরায় তৃণমূল মহাসচিবের যে বক্তব্য শোনা গিয়েছে, সেটা তা হলে কী!” তাদের আরও প্রশ্ন, আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে এক বার অধিগৃহীত জমি ফিরিয়ে নিয়ে মূল মালিকদের একে একে ফিরিয়ে দেওয়ার সংস্থান কোথায়? তথাকথিত ‘অনিচ্ছুক’দের কাছে নিজেদের আরও বিড়ম্বনা ঠেকাতেই কি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগে পার্থবাবুরা এমন কথা বলছেন? তৃণমূল শিবিরের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, আদালতের রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে আসবে বলেই তারা আশাবাদী। সেই সঙ্গেই তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, “রায় যেমনই হোক, সিঙ্গুরের জমি টাটাদের হাতে ছেড়ে দেবেন, এমন মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন!”
পাড়ুই রায় স্থগিত সোমবার পর্যন্ত
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
বীরভূমের পাড়ুইয়ে এক প্রাক্তন স্কুলকর্মীর হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি হরিশ টন্ডনের রায়ের উপরে আগামী সোমবার পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। পাড়ুইয়ের কসবা গ্রামে ওই খুনের ঘটনার তদন্তভার সিবিআই-কে দিয়েছেন বিচারপতি টন্ডন। সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস ও বিচারপতি ঈশানচন্দ্র দাসের ডিভিশন বেঞ্চে সেই রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করার আবেদন জানান। আবেদনে তিনি বলেন, ওই মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। কিন্তু সিবিআই কেন তদন্ত করবে, সেই প্রশ্ন তোলেন সরকারি কৌঁসুলি। ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, কেস ডায়েরি ও চার্জশিট সোমবার আদালতে পেশ করতে হবে। পরবর্তী শুনানি হবে সে-দিনই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy