প্রকল্পটি খোদ মুখ্যমন্ত্রীর। এবং শিক্ষামন্ত্রীও বলছেন, এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি বা ওবিসি-র জন্য সংরক্ষণ সূত্র মেনে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়তি ছাত্র ভর্তি করা হবে। কিন্তু কী করে সেটা সম্ভব, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা সেটাই বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁদের প্রশ্ন দু’টো, এই কাজে বাড়তি পরিকাঠামোর জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে? অতিরিক্ত স্থানের সংস্থানই বা হবে কী ভাবে? মূলত এই দু’টি ব্যাপারেই কর্তারা এখনও ধোঁয়াশায়। আর এই জোড়া জটের জন্যই শিক্ষায় ওবিসি সংরক্ষণ চালু করার বিষয়টি অথৈ জলে।
ধোঁয়াশার মূলে আছে ওবিসি-র জন্য সংরক্ষণেরই একটি শর্ত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ঘোষণা করেছিলেন, এ বছর থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ওবিসি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু এই সংরক্ষণ চালু করার জন্য সাধারণ শ্রেণির পড়ুয়াদের আসন কমানো যাবে না। এই শর্ত মেনে ওবিসি পড়ুয়াদের ঠাঁই দিতে হলে আসন বাড়াতেই হবে।
কিন্তু আসন বাড়িয়ে ছাত্র ভর্তির প্রক্রিয়া বেশির ভাগ কলেজেই শুরু করা যাবে না বলে মনে করছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা। কারণ, এই কাজে বাড়তি পরিকাঠামোর জন্য অর্থ ও অতিরিক্ত জায়গা কোথায় মিলবে, তার ফয়সালা হয়নি। অর্থাৎ ওবিসি সংরক্ষণ অনিশ্চিত। শুক্রবার আসন সংরক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের বৈঠকে এই অনিশ্চয়তার কথাই জানানো হবে বলে দফতর সূত্রের খবর। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য এমন তথ্য মানছেন না। তাঁর দাবি, এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই সর্বত্র বাড়তি ছাত্র ভর্তি করা হবে।
গত বছর ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করার সময়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সাধারণ আসন না-কমিয়ে স্নাতক-স্নাতকোত্তরে আসন বাড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে হবে। ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে ছ’বছরের মধ্যে এই হিসেব মেনে ছাত্র ভর্তির কাজ সম্পন্ন করতে হবে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কে। রাজ্য সরকার এই খাতে বাড়তি অর্থ বরাদ্দের আশ্বাসও দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও এই প্রকল্পে ৩২০৭.৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে কত টাকা মিলবে, রাজ্যের বরাদ্দই বা কী হবে, কলেজগুলি তা জানে না।
কী ভাবে সংরক্ষণের কাজ সম্পন্ন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার অধ্যক্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, কলেজগুলির কাছে জানতে চাওয়া হবে, তারা কোন বিষয়ে কত আসন বাড়াতে পারবে। কী ভাবে আসন বাড়ানো হবে, জানতে চাওয়া হবে তা-ও। তিনি বলেন, “রাজ্যে প্রায় ৫০০ কলেজ আছে। সর্বত্রই যে এ বছর আসন বাড়ানো যাবে, তা তো নয়। কোনও কলেজ এ বার না-পারলে তাকে আগামী বছর থেকে আসন বাড়াতে বলা হবে।”
যন্ত্রপাতির মতো পরিকাঠামো বা শিক্ষক-শিক্ষিকা বাড়ানো গেলেও বাড়তি জায়গার অভাবই যে এই প্রকল্প রূপায়ণে সব থেকে বড় অন্তরায়, সংশ্লিষ্ট সকলেই সেটা মানছেন। তাঁদের বক্তব্য, অনেক কলেজে এমনিতেই বসার জায়গা নেই। তার উপরে এত কম সময়ে আরও আসন বাড়ানো হবে কোথা থেকে? আগামী শিক্ষাবর্ষেই বা কোথা থেকে জায়গার ব্যবস্থা হবে?
উচ্চশিক্ষা দফতরের ওই কর্তা বলেন, “প্রয়োজনে বর্তমান কলেজ ভবনে তলা বাড়িয়ে বাড়তি শ্রেণিকক্ষের বন্দোবস্ত করতে হবে।” কিন্তু সব কলেজে তলা বাড়ানোর সুযোগ আছে কি না বা তার অনুমতি মিলবে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
এই প্রকল্পের ঘোষণা যে-হেতু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন, তাই যে-ভাবেই হোক তা রূপায়ণ করতে মাসখানেক আগেও বদ্ধপরিকর ছিল উচ্চশিক্ষা দফতর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে বৈঠকে দফতরের তরফে বার্তা দেওয়া হয়েছিল, অন্তত দু’-একটি আসন বাড়িয়েও প্রকল্পের সূচনা করে দিতে হবে ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষেই। তা হলে কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে হঠাৎ অনিশ্চয়তার বার্তা দেওয়ার ইঙ্গিত কেন?
দফতর সূত্রের খবর, অনেক কলেজে বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের যথাযথ ভাবে ক্লাস করানোর পরিকাঠামোই নেই। তার উপরে বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি কী করে হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছে কলেজই। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:২০ রাখতেই হবে। বাড়তি পড়ুয়া এসে গেলে সেটাও বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এই সমস্ত দিক বিবেচনা করেই উচ্চশিক্ষা দফতরের সুর বদল।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এটা চেয়েছিলেন। তাই আমাদের সরকার ও দফতর এই বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছে। আমরা এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই ওবিসি সংরক্ষণ চালু করতে যাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy