এমন বন্ধু আর কে আছে, প্রশ্ন করলে বলা যায়, কেন, খাট-ই তো আছে! দেখতে অনেকটা নটেশাকের মতো। তবে শাকপাতা নয়, খাট-পাতা!
মদের বোতল আঁকড়ে যদি ‘এমন বন্ধু...’ গানটা গাওয়া যায়, মুখে খাট চালান করেও গলা ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। খাট-সেবনে শুধু গান নয়, উন্মত্ত নাচেরও মাতন লাগে। আর বন্ধুত্ব? খাটপাতা চিবিয়ে খেলে মনে উথলে ওঠে বন্ধু-ভাব। এতটাই যে, অচেনা-অজানা মানুষের সঙ্গেও বন্ধুত্ব করার ইচ্ছা জাগে! ইউরোপ ও আমেরিকা তো বটেই, এ দেশেও যুবক-যুবতীদের ‘রেভ পার্টি’ (উদ্দাম নাচাগানার হুল্লোড়)-তে নেশার জন্য এখন তাই বেশ কদর ওই পাতার। তারই নাম ‘খাট’।
এই প্রথম সেই খাট ধরা পড়ল কলকাতা বিমানবন্দরে। খিদিরপুরের দুই যুবক আসিফ আলম এবং নিজামুদ্দিন শেখ ৮০ কিলোগ্রাম খাট-পাতা নিয়ে পাড়ি দিচ্ছিলেন চিনের কুনমিং-এ। বেশ কিছু দিন ধরেই খাট পাচারের খবর আসছিল শুল্ক বিভাগের অফিসারদের কাছে। সোমবার রাতে ওই দুই যুবকের গতিবিধি দেখে সন্দেহ হয় তাঁদের। ব্যাগ তল্লাশ করতেই বেরিয়ে পড়ে নটেশাকের মতো দেখতে ওই পাতা। শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, ঠান্ডা জায়গায় না-রাখলে খাট-পাতার গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
তাই আসিফ ও নিজামুদ্দিন ব্যাগের গায়ে ফুটো করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ২০০ গ্রামের এক-একটি আঁটি মোড়া ছিল কলাপাতায়।
শুল্ক দফতর জানাচ্ছে, খাট-পাতার চাষ হয় প্রধানত ইয়েমেন, সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ায়। তরকারি করে খাবার জন্য নয়, চাষ হয় মাদক হিসেবে জোগান দেওয়ার জন্যই। শুল্ক অফিসারেরা মনে করছেন, জলপথে মুম্বই ও কলকাতা বন্দর দিয়েই খাট ঢুকছে ভারতে। দেখতে শাকের মতো, তাই অন্যান্য শাকসব্জির মধ্যে সহজেই মিশিয়ে ফেলা যাচ্ছে একে। আলাদা করে চিহ্নিত করাই মুশকিল।
অফিসারদের সন্দেহ, কোনও দালালের কাছ থেকে খাট-পাতা চিনে পৌঁছে দেওয়ার বরাত পেয়েছিলেন খিদিরপুরের ওই দুই যুবক। জেরায় জানা গিয়েছে, ওই যুবকদের মাধ্যমে যিনি খাট পাঠাচ্ছিলেন, তিনিই তাদের বিমানে যাতায়াতের টিকিট কেটে দিয়েছেন। প্রত্যেককে দিয়েছেন ১০০ মার্কিন ডলার। চিনে থাকার ব্যবস্থাও হয়েছিল তাঁদের। চিনে পৌঁছনোর পরে মোবাইলে যোগাযোগ করলে সেখানকার এক ব্যক্তি খাট-পাতা নিয়ে নেবেন বলে ঠিক হয়েছিল।
এর আগে কলকাতায় কখনও খাট ধরা পড়েনি। গত অক্টোবরে হায়দরাবাদের হাকেমপেট এলাকায় হানা দিয়ে সেখানকার পুলিশ ইয়েমেনের দুই ছাত্রকে ধরেছিল বেশ কিছু খাট-সহ। এ ছাড়া খাট ধরা পড়ার ঘটনা ভারতে খুবই কম।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাটের দাম কত, তা নিয়েও মতভেদ আছে। তবে সোমবার গভীর রাতে কলকাতায় ধরা পড়া ৮০ কিলোগ্রাম খাটের দাম কয়েক কোটি টাকা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পরীক্ষার জন্য ওই পাতা কলকাতায় কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক পরীক্ষাগারে পাঠাচ্ছে শুল্ক দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy