সাত্তোরে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলছেন সিআইডি দলের এক সদস্যা। শুক্রবার পাড়ুইয়ে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
নির্যাতন-কাণ্ডে সিআইডি-র দল যে দিন বীরভূমের পাড়ুইয়ে তদন্তে গেল, সে দিনই তাদের উপরে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে বলে বর্ধমানের বুদবুদ থানায় অভিযোগ করলেন পাড়ুইয়ের নির্যাতিত বধূর বাবা-মা।
শুক্রবার রাতে ওই থানায় যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে বুদবুদের কলমডাঙা গ্রামের ওই পরিবার, তাতে দাবি করা হয়েছে, এ দিন দুপুরে গ্রামের তৃণমূল নেতা কাদের মণ্ডলের নেতৃত্বে শাসকদলের শ’খানেক লোক তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। নির্যাতিতার বাবার দাবি, তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করে। তাঁর ছেলেদের উপরেও হামলা হয়। বন্দুক দেখিয়ে স্ত্রীর শ্লীলতাহানিও করা হয়। ভাঙচুরের পাশাপাশি ঘরের জিনিসপত্রও অবাধে লুঠপাট করা হয়েছে। মানকর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছেন তাঁরা। ভয়ে তাঁর স্ত্রী এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাড়ুই থেকে সিআইডি-র দল আসার পরে তাঁকে ডেকে আনা হয়।
এর আগে পুলিশ ও শাসকদলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বধূ নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য কখনও টাকার টোপ, কখনও বা তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছিল ওই পরিবার। কিন্তু, এ দিনের ‘হামলা’-র পরে তাঁরা আদৌ গ্রামে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে তাঁদের। নির্যাতিতার মা বলেন, “তৃণমূলের লোকজন লাঠি দিয়ে মেরেছে। আমরা আতঙ্কিত। গ্রামে থাকতে পারব কি না, জানি না।” পুলিশি নিরাপত্তার দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা। তৃণমূল নেতা কাদের মণ্ডল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উল্টে তাঁর দাবি, “বিনা প্ররোচনায় এ দিন আমার উপরেই চড়াও হয়েছিল ওই বধূর বাবা ও দুই ভাই। মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।” রাতে তিনিও বধূর বাবা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে মারধর ও হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন বুদবুদ থানায়।
গোলমালের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বুদবুদ থানার পুলিশ। গ্রামে যান তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) অন্যতম সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের সদস্য দেবদাস বক্সী। তিনি দাবি করেন, বিজেপি আশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরা গ্রামে এসে অশান্তি পাকাচ্ছে। অবিলম্বে গ্রামে পুলিশ পিকেট বসাতে হবে। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ। একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি নোংরা খেলায় নেমেছে।” বুদবুদের বাসিন্দা, বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য নরেশ কোনারের পাল্টা বক্তব্য, “কলমডাঙায় কী ঘটেছে, সবাই জানেন। তৃণমূল মুখ লুকোনোর জায়গা না পেয়ে আক্রমণের রাস্তায় নেমেছে।” নানা মহলের চাপে পড়ে পাড়ুইয়ের বধূকে নির্যাতনের ঘটনার সিআইডি তদন্ত করাচ্ছে রাজ্য সরকার। এ দিন সিআইডি-র স্পেশাল সুপার (পশ্চিম) সোমা দাসমিত্রের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দল পাড়ুইয়ের সাত্তোর গ্রামে গিয়ে নির্যাতিতা ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। এক ঘণ্টার উপর জিজ্ঞাসাবাদ করে বয়ান নথিবদ্ধ করে তারা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্যাতনের বিবরণের পাশাপাশি মামলা তুলতে চাপ ও হুমকির কথা সিআইডি-কে জানিয়েছেন নির্যাতিতা। অবিলম্বে দোষী পুলিশকর্মীদের শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন।
কাদের নামে অভিযোগ জানালেন? ওই বধূর দাবি, “পুলিশের যারা ছিল, সবাইকে তো চিনি না। এ নিয়ে এখনই কিছু বলব না।” হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে ওই বধূর উপযুক্ত চিকিৎসা ও নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। উপযুক্ত চিকিৎসা হচ্ছে না দাবি করে বৃহস্পতিবার ওই বধূকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ব্যক্তিগত বন্ডে ছাড়িয়ে বাড়ি নিয়ে এসেছেন তাঁর পরিজনেরা। তাঁর স্ত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না বলেও এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন বধূটির স্বামী।
বীরভূমের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “এ ব্যাপারে নির্দেশ পেয়েছি। পাড়ুই থানার ওসি-র সঙ্গে প্রাথমিক কথাও হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।” দুপুর আড়াইটে নাগাদ সিআইডি-র দলটি বুদবুদের কলমডাঙা পৌঁছয়। তখন বাড়ির বাইরে বসেছিলেন নির্যাতিতার বাবা। বাড়ির ভিতরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তাঁকে ও পরে তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বীরভূমের মাহিদাপুর থেকে আসা ওই বধূর বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গেও কথা বলে সিআইডি। ঘণ্টা দেড়েক কথাবার্তার পরে সিআইডি বেরিয়ে যায়। তবে কী কথাবার্তা হল তা নিয়ে সিআইডি-র দল বা বধূর বাপের বাড়ির লোকজন, কেউই কিছু বলতে চাননি।
এ দিন আরএসপি-র মহিলা সংগঠন নিখিলবঙ্গ মহিলা সঙ্ঘ জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে বীরভূমের এসপি-র শাস্তি এবং দোষী পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করার দাবি জানিয়েছে।a
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy