ঝিলে ভিড় জমিয়েছে পরিযায়ী পাখিরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
সাঁতরাগাছি ঝিলকে শীতে আরও দর্শনীয় করে তুলতে রেলের কাছে প্রস্তাব পাঠাল রাজ্য সরকার। প্রতি বছর শীতে এই ঝিলে বেশ কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি আসে। আর তাই দর্শক সমাগমও হয় যথেষ্টই। মূলত সেই আগ্রহীদের পক্ষীদর্শনের সুযোগ বাড়াতেই পাঠানো হয়েছে ওই প্রস্তাব।
বন দফতরের মতে, সাঁতরাগাছি ঝিলকে পর্যটনকেন্দ্র করে তোলা সম্ভব। সেখানকার পাখি দফতরের স্থানীয় ভারপ্রাপ্ত অফিসার (ডিএফএ) মজেদার রহমান বলেন, “প্রায় ১২ হেক্টর আয়তনের জলাশয়টির চারপাশের অপরিসর রাস্তার কিছু অংশে দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জায়গা করতে আগ্রহী আমরা। জমিটা রেল-কর্তৃপক্ষের। তাই তাদের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি।” এ ছাড়া, জলাশয়ের পূর্ব ও পশ্চিম দু’দিকে ৩৫ মিটার উঁচু ওয়াচ টাওয়ার তৈরির প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে।
সাঁতরাগাছি এখনও পরিযায়ী পাখিদের কাছে কতটা পছন্দের তা বুঝতে সম্প্রতি সেখানে সুমারি বা সমীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আয়োজন করা হয় পাখি নিয়ে দু’দিনের সচেতনতা শিবিরেরও। বন দফতরের অনুমান, আলিপুর চিড়িয়াখানা এবং পূর্ব কলকাতা জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে গেলেও সাঁতরাগাছির এই ছবি এখনও আশাপ্রদ। পরিস্থিতি দেখতে ওই দফতরের একদল পদস্থ অফিসারও সম্প্রতি সেখানে যান।
প্রতি বছর শীতে নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রচুর পাখি চলে আসে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ নানা অঞ্চলে। এ দিক থেকে এখনও পাখিদের পছন্দের একটি জায়গা সাঁতরাগাছি। পক্ষীবিশারদদের মতে, এই সব পাখির প্রায় ৯০ শতাংশ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস। ‘প্রকৃতি সংসদ’-এর সহ-সভাপতি কুশল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেশ ক’বছর ধরে পাখি-সুমারি চালিয়ে দেখছি কলকাতায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমলেও সাঁতরাগাছিতে তা কমবেশি একই আছে।”
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ২০১২, ’১৩ ও ’১৪ এই তিন বছরে সাঁতরাগাছিতে যথাক্রমে ৬ হাজার ৭১৫, ৭ হাজার ১৭৮ এবং ৭ হাজার ৩১৮ ‘জলার পাখি’-র হদিশ মিলেছে। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় মিলেছে প্রায় ২১ প্রজাতির ৭৩০০ পাখি। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে লেসার হুইসলিং ডাক, যা পরিচিত ছোট সরাল নামে। এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণ ‘নর্দান পিনটেল’ বা দিকহাঁস, ‘শোভেলার্স’ বা খুন্তিহাঁস, ‘টাফটেড ডাক’ বা বামুনিয়া হাঁস আসে সাঁতরাগাছিতে। আর সবচেয়ে কম গারগেনি বা গিরিয়া হাঁস, হোয়াইট থ্রোটেড কিংফিশার, হোয়াইট ব্রেস্টেড ওয়াটার হেন ও সিট্রিন ওয়াগটেল। কেবল উত্তরের প্রতিবেশি দেশগুলি থেকেই নয়, পরিযায়ী পাখিও আসে বৈকাল হ্রদ ও সংলগ্ন অঞ্চল থেকে।
কুশলবাবু বলেন, “পূর্ব কলকাতার জলাভূমির ‘ক্যাপ্টেন ভেড়ি’-তেও আমরা পরিযায়ী পাখির সমীক্ষা করতাম। কিন্তু সেখানে সংখ্যাটা কমতে কমতে শ দুয়েকে নেমে এসেছে। ওখানে আর সুমারি হচ্ছে না।” পাখি-বিশারদদের মতে, বেশিরভাগ জায়গাতেই নগরায়নের চাপে কমে যাচ্ছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। বছরে দু’বার জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার হয়। বন দফতরের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “সাঁতরাগাছিতে পাখি আসার পথ সুগম রাখতে সরকারি উদ্যোগে এপ্রিল ও অক্টোবর এই দু’মাসের শেষেই জলাশয় পরিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া, সেখানে তৈরি হয় পাখিদের বসার উপযোগী ১১টি মাচা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy