সিডনির ধর্মতলায় জঙ্গি হামলা!
বড়দিনের আগের আলো ঝলমলে শহরটা এক মুহূর্তে অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল। সন্ত্রাস এত দিন যে দেশের ছায়া মাড়ায়নি, সেই অস্ট্রেলিয়াতেই ষোলো ঘণ্টা ধরে চলল আতঙ্কের তাণ্ডব! গত কালের অসহায় শহর কর্মসূত্রে সিডনিবাসী ভারতীয়দের মনে করিয়ে দিল দেশের কথা! মনে করিয়ে দিল, ২৬/১১-র দিনও একই ভাবে মুম্বইয়ের কোলাবার লিওপোল্ড কাফেতে ঢুকে পড়েছিল জঙ্গিরা।
কালকের দিনটা মনে পড়লে এখনও হাত-পা কাঁপছে অনিন্দিতার। কালই যে সিডনির সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্টের মার্টিন প্লেসে ওই বিখ্যাত সুইস চকোলেট কাফেতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর! সিডনির একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত অনিন্দিতা মিত্রের বাড়ি কলকাতায়। দিন কয়েক আগে বাবা-মাকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন। গত কাল মায়ের জন্মদিনে ওই লিন্ড কাফে থেকেই কেক আনতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। ঘণ্টাখানেকের হেরফেরে কী ঘটে যেতে পারত, ভেবেই শিউরে উঠছেন অনিন্দিতা। জানালেন, মোবাইলেই মার্টিন প্লেসের কাফেতে জঙ্গি আক্রমণের খবর পান। আর তার পর থেকেই বন্ধু-বান্ধব আর উদ্বিগ্ন বাবা মায়ের ফোন! অনিন্দিতার বাবা অমলেন্দু সাঁই কলকাতাবাসী। বিদ্যুৎ দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্তা। তাঁর স্বস্তি, “ভাগ্যিস মেয়ে জামাইয়ের কাছেই আছি। দেশে বসে এই খবরটা পেলে চিন্তায় শেষ হয়ে যেতাম!”
গত কাল লিন্ড কাফেতে যাওয়ার কথা ছিল সদ্য স্কুলের গণ্ডি পেরোনো রিয়া চট্টোপাধ্যায়েরও। জঙ্গি হামলার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন বাবা গৌতম চট্টোপাধ্যায়। তবে মেয়ে বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত একদণ্ড শান্তিতে বসতে পারেননি তিনিও। সিডনির উপকণ্ঠের বাসিন্দা আর এক বাঙালি ইন্দ্রানী দত্ত বললেন, “এক প্রতিবেশীকে মুম্বইয়ের ২৬/১১-র কথা বলছিলাম। সে-ঘটনা অবশ্য অনেকেরই মনে আছে।”
কাফেতে জঙ্গির হাতে দুই ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি পেশাদারের আটকে থাকায় প্রবাসীদের আতঙ্কের পারদ বেশ চড়েছে। তার মধ্যে আবার পুষ্পেন্দু ঘোষ নামে এক বাঙালির কথাও জানায় পুলিশ। মার্টিন প্লেসের যে অফিসে পুষ্পেন্দু কাজ করতেন, আগে সেখানেই অফিস ছিল আর এক তথ্য প্রযুক্তিকর্মী সন্দীপ কাঞ্জিলালের। জঙ্গির সঙ্গে লড়াই শেষ হলেও মানুষ যে এখনও সন্ত্রস্ত তা পরিষ্কার সন্দীপের কথায়। তিনি বললেন, “অফিসের ঠিকানা না-পাল্টালে হয়তো আমিও ঝামেলায় পড়ে যেতাম!” ওয়েস্টপ্যাক ব্যাঙ্কের কর্তা এক বাঙালি প্রৌঢ় জানালেন সহকর্মী সিলিয়ার পণবন্দি হয়ে কাফেতে আটকে থাকার কথা।
খাতায় কলমে যুদ্ধ শেষ হলেও এখনও সন্ত্রস্ত সিডনি। অনিন্দিতা জানালেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় বাড়ি ফিরতে কাল দ্বিগুণ দেরি হয়েছে তাঁর। একই কথা বললেন গৌতমবাবুও। জঙ্গি দখলের খবর পাওয়া মাত্রই অপেরা হাউসের কাছের হারবার ব্রিজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বোমা লুকিয়ে রাখার আশঙ্কা করেছিল পুলিশ। তাতেই কিছু ক্ষণের জন্য বিপর্যস্ত হয় শহর। তবে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে ঘণ্টাখানেকের বেশি দেরি হয়নি সিডনির।
আজও ছন্দে ফেরার চেষ্টায় অনড় শহর। প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যম লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে। তবে স্বাভাবিক হচ্ছে না জীবন। বিশেষত, যাঁদের স্মৃতিতে সন্ত্রাস শব্দটার পুরনো অনুষঙ্গ আছে। আছে মুম্বই, কাশ্মীর, দিল্লি অথবা কলকাতার আমেরিকান সেন্টারের স্মৃতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy