ক্ষতিগ্রস্ত: সেই গাড়ির ধাক্কায় তুবড়ে গিয়েছে এটিও। ছবি: রয়টার্স।
ভিড়ে ঠাসা শহরের প্রাণকেন্দ্র। বেশির ভাগ মানুষই বড়দিনের কেনাকাটায় ব্যস্ত। কেউ এসেছেন বাড়ির খুদেকে সঙ্গে নিয়ে। কেউ আবার স্ত্রীর সঙ্গে কেনাকাটায় মশগুল। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট স্টেশনের সামনের লাল সিগনাল উপেক্ষা করে আচমকাই একটা সাদা এসইউভি ধেয়ে আসে পথচারীদের দিকে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই আশপাশের মানুষকে পিষে ফেলতে শুরু করে সেটি। আজ মেলবোর্নের প্রাণকেন্দ্রে এলিজাবেথ আর সোয়ানস্টন স্ট্রিটের মোড়ে আচমকা এই হামলায় আহত হয়েছেন ১৪ জন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের মধ্যে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছে একটি বছর তিনেকের শিশু।
ফ্রান্সের নিস শহর থেকে শুরু। তার পর বার্লিন, লন্ডন, বার্সেলোনা, নিউ ইয়র্ক, স্টকহলমের মতো একের পর এক শহরে ট্রাক বা বড় গাড়ি নিয়ে হামলার ঘটনা গত এক বছরে আকছার ঘটেছে। চলতি বছরের গোড়ায় মেলবোর্নেও প্রায় একই কায়দার গাড়ি হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ছ’জনের। বেশির ভাগ সময়ই এই ধরনের হামলার দায় নিয়েছে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস। কখনও তারা নিজেরা বিবৃতি দিয়েছে, কখনও বা আইএস ভাবধারায় উদ্বুব্ধ কোনও ‘লোন উল্ফ’-কে হামলার নেপথ্যে থাকতে দেখা গিয়েছে।
আজ বিকেলেও মেলবোর্নে সেই একই হাড়হিম করা স্মৃতি ফিরে এসেছিল। প্রায় ১৫-২০ জন পথচারীকে ধাক্কা মেরে সাদা গাড়িটি একটি ট্রাম স্টেশনের দেওয়ালে গিয়ে ধাক্কা মারে। তাতে আহত হয় গাড়ির চালক। স্থানীয় বাসিন্দারা তাড়াতাড়ি গিয়ে তাকে ধরেও ফেলে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে তাকে গ্রেফতার করে। বছর বত্রিশের ওই যুবক আদতে আফগানিস্তানের বাসিন্দা। কিন্তু সে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক। আপাতত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তাকে। তবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চালকের অবস্থা গুরুতর নয়। ওই হামলা আদৌ কোনও জঙ্গি হামলা কি না, তা-ও প্রাথমিক ভাবে জানায়নি মেলবোর্ন পুলিশ। দেশের প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল শুধু টুইট করে জানিয়েছেন, ফেডেরাল পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে।
তবে তদন্তকারীরা একটি বিষয়ে একমত। আর সেটি হল, ধৃত যুবকের গাড়িতে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না। সে যা করেছে, একেবারেই ইচ্ছে করে করেছে। গোটা ঘটনা ভিডিও বন্দি করছিল আর এক যুবক। পুলিশ তাকেও গ্রেফতার করেছে। তারা জানিয়েছে ওই যুবকের ব্যাগ থেকে তিনটি ছুরি মিলেছে। কী উদ্দেশ্যে সে ওই ভিডিও তুলছিল, তা স্পষ্ট নয়। চালকের সঙ্গে তার কোনও যোগসাজস রয়েছে কি না, তা নিয়েও মুখ খোলেনি পুলিশ।
আরও পড়ুন: ওয়ানাক্রাই: না বলল পিয়ংইয়ং
ওই ঘটনার পরে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট ও তার আশপাশের এলাকা। বন্ধ হয়ে যায় সব দোকান-পাটও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন কমপক্ষে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে গাড়িটি চালাচ্ছিল চালক। ডেভিড নামে এক যুবক বললেন, ‘‘আমি ফ্লিন্ডার্স স্ট্রিট স্টেশনের সামনের রাস্তা পার হচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে ঘুরে তাকিয়ে দেখি একটা সাদা গাড়ি এলোমেলো ভাবে গ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। সামনে যাঁদের মারছে, তাঁরা ছিটকে গিয়ে রাস্তার অপর প্রান্তে গিয়ে পড়ছেন। মেলবোর্নের ইতিহাসে আজ এক ভয়ঙ্করতম দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy