জো বাইডেন। —ফাইল চিত্র।
শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাঁটুর চাপে আরও এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু নিয়ে তোলপাড় আমেরিকা। ঠিক চার বছর আগে, ২০২০ সালের মে মাসে আমেরিকার মিনেসোটা প্রদেশের মিনিয়াপোলিসে পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনের হাঁটুর চাপে মৃত্যু হয়েছিল কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডের। তার পরেই বিক্ষোভ-আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। যার আঁচ গিয়ে পড়েছিল বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। গত ২৫ এপ্রিল ওহায়ো প্রদেশের ক্যান্টন শহরে প্রায় একই ধরনের ঘটনা সামনে এসেছে। যা নিয়ে আরও এক বার কাঠগড়ায় আমেরিকার পুলিশ দফতর ও তাদের শ্বেতাঙ্গ অফিসারেরা।
মূল ঘটনা ১৮ এপ্রিলের। রাত তখন ৮টা ২০। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, রাস্তার একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ধাক্কা মেরেছিল ফ্র্যাঙ্ক টাইসন নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের গাড়ি। এর পরে পুলিশের তাড়া খেয়ে এবং তাদের হাত থেকে বাঁচতে একটি পানশালায় ঢুকে পড়েন ফ্র্যাঙ্ক। তাঁকে ধাওয়া করে সেখানে ঢুকে তাঁর সঙ্গে বচসায় জড়ান কয়েক জন পুলিশ অফিসার। দু’জন অফিসারের এক জন ফ্র্যাঙ্ককে পানশালার মাটিতে ফেলে তাঁকে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে। অপর জন ফ্র্যাঙ্কের হাতে হাতকড়া পরায়। প্রায় আট মিনিট ফ্র্যাঙ্ককে হাঁটু দিয়ে চেপেছিল ওই অফিসার। ওই কৃষ্ণাঙ্গ বার বার বলতে থাকেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না। দয়া করুন’। কিন্তু ওই অফিসারেরা তাঁকে চুপ করে থাকতে বলে। এক সময়ে নড়াচড়া বন্ধ করে দেন ফ্র্যাঙ্ক। অফিসারেরা তখন নিজেদের মধ্যেই বলাবলি শুরু করে যে ফ্র্যাঙ্ক আদৌ বেঁচে আছেন কি না। পরিস্থিতি আঁচ করে চিকিৎসাকর্মীদের ডাকা হয়। তাঁরা এসে ফ্র্যাঙ্কের শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। কাজ না হওয়ায় ক্যান্টনের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ওই কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে। কিন্তু সাড়ে ৯টা নাগাদ চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ২৫ এপ্রিল ক্যান্টন পুলিশ দফতরের তরফে অভিযুক্ত এক অফিসারের শরীরে লাগানো বডিক্যামের ফুটেজ প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। ৩৬ মিনিটের সেই ভিডিয়োয় ফ্র্যাঙ্কের সঙ্গে পুলিশের বচসা, তাঁকে মাটিতে চেপে রাখা এবং তাঁর মৃত্যুর আগের সব মুহূর্তই ধরা পড়েছে। তার পরেই সমাজমাধ্যমে সেই ভিডিয়োর ফুটেজ তুলে ধরে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফ্র্যাঙ্কের ভাইঝি জেসমিন টাইসন অবশ্য জানিয়েছেন, ফ্র্যাঙ্কের একটি অপরাধের ইতিহাস ছিল। একটি অপহরণের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল ফ্ল্যাঙ্কের। সেই ঘটনার জন্য ২৪ বছর কারাগারে থাকতে হয় ফ্র্যাঙ্ককে। সম্প্রতি জেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে দেখা করার আগেই এ ভাবে পুলিশি নিগ্রহে মৃত্যু হল তাঁর।
ফ্র্যাঙ্কের মৃত্যু এবং তার পরবর্তী ভিডিয়ো ফুটেজগুলি প্রকাশ্যে আসার পরে শোরগোল শুরু হয়েছে ক্যান্টন শহরে। বিশেষ করে শহরের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষ জন এই ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ। মেয়র উইলিয়াম ভি শেরার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আমরা এই মুহূর্তে খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই সম্প্রদায়ের প্রতি স্বচ্ছ থাকতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ফ্র্যাঙ্কের পরিবারকে আমার গভীর সমবেদনা।’’ মেয়র আরও জানিয়েছেন, ফ্র্যাঙ্কের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত করছে ওহায়োর অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর। তবে সেই তদন্তের পরে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও শাস্তির খাঁড়া নেমে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy