Advertisement
১৬ মে ২০২৪
India China Conflict

অরুণাচলে চিনা আগ্রাসন: ভারতের পাশেই আমেরিকা

আমেরিকার সঙ্গে সেনা মহড়ার তীব্র বিরোধিতা করে জিনপিং সরকার সে দিন বলেছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ও নিরাপত্তা বহাল রাখাটা নয়াদিল্লির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা আগ্রাসনের প্রসঙ্গে আমেরিকা যে ভারতের পাশেই রয়েছে তা স্পষ্ট করে দিল পেন্টাগন।

ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা আগ্রাসনের প্রসঙ্গে আমেরিকা যে ভারতের পাশেই রয়েছে তা স্পষ্ট করে দিল পেন্টাগন। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:২৪
Share: Save:

ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা আগ্রাসনের প্রসঙ্গে আমেরিকা যে ভারতের পাশেই রয়েছে তা স্পষ্ট করে দিল পেন্টাগন। অন্য দিকে রাষ্ট্রপুঞ্জে নাম না করে সন্ত্রাস-প্রশ্নে চিন ও পাকিস্তানকে বিঁধলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

লাদাখের গালওয়ানের ধাঁচে অরুণাচলপ্রদেশের তাওয়াংয়ের ইয়াংৎসে সেক্টরে ৯ ডিসেম্বর চিনা সেনা হামলা চালিয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার স্থিতাবস্থা পাল্টানোর চেষ্টা করেছিল বলে ইতিমধ্যে মেনে নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই প্রসঙ্গে পেন্টাগনের প্রেসসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার বলেছেন, ‘‘পুরো বিষয়টির উপরে কড়া নজর রাখছে আমেরিকা। নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আমরা সব সময় বন্ধুরাষ্ট্রগুলির পাশে রয়েছি। এই সংঘর্ষের পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং উত্তেজনা কমাতে ভারত যে পদক্ষেপ করেছে, আমরা তাকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।’’ পাশাপাশি, হোয়াইট হাউসের মিডিয়া সচিব ক্যারিন জঁ পিয়ের জানিয়েছেন, তাঁরা চান সীমান্ত নিয়ে বিবাদ নিরসনে দু’দেশই উদ্যোগী হোক। ক্যারিনের কথায়, “এটা জেনে আমরা খুশি হয়েছি যে দু’পক্ষই দ্রুত সংঘাত বন্ধ করেছে। আমরা সতর্ক ভাবে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।” ভারতকে সমর্থনের পাশাপাশি এ দিন চিনকে এক হাত নিয়েছে পেন্টাগন। তাদের বক্তব্য, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় আমেরিকার বন্ধুরাষ্ট্রগুলির দিকে চিন ক্রমাগত আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। নজর রাখা হচ্ছে এ বিষয়েও।

অন্য দিকে, অরুণাচলের উত্তরে চিনের শিগাৎসে বিমানবন্দরে সম্প্রতি নির্মাণকাজের বহর বাড়ায়ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছেসেই ছবি। যাত্রী পরিবহণ এবং সামরিক বিমান ওঠানামা— দুই ক্ষেত্রেই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করে বেজিং। ভারত-চিন সীমান্ত থেকে প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার উত্তরে এই শিগাৎসে বিমানবন্দর। যাত্রী বিমান ওঠানামার পাশাপাশি সেখানে যুদ্ধবিমান, ওয়ার্নিং জেট, স্বয়ংক্রিয় বিমান ওঠানামারও বন্দোবস্ত রয়েছে। তবে সব রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি ভারত। ভারতীয় বায়ুসেনা জানিয়েছে, পূর্ব ঘোষণা মতো ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর দেশের পূর্বাংশে তারা সেনা মহড়া চালাবে। যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রচালিত বায়ুযান ওড়ানো হবে ওই মহড়ায়।

তাওয়াং সেক্টরে চিনের অনুপ্রবেশ এবং ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষের ঠিক দশ দিন আগে সীমান্তে শান্তি রক্ষা নিয়ে নয়াদিল্লিকে লম্বা-চওড়া উপদেশ দিয়েছিল বেজিং। ভারতের কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, শি জিনপিং নতুন করে ক্ষমতায় আসার পরে বেজিং আরও বেশি করে ভারত-চিন সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঘটাবে ও সংঘাত বাড়িয়ে যাবে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে একশো কিলোমিটার দূরে উত্তরাখণ্ডের আউলিতে ভারত এবং আমেরিকার সেনা মহড়া চলাকালীন গত ৩০ নভেম্বর চিন বিবৃতি দিয়ে বলে, ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত যে সব সীমান্ত চুক্তি (চিন ও ভারতের) হয়েছে সেগুলি যেন মান্য করে চলে ভারত। আমেরিকার সঙ্গে সেনা মহড়ার তীব্র বিরোধিতা করে জিনপিং সরকার সে দিন বলেছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শান্তি ও নিরাপত্তা বহাল রাখাটা নয়াদিল্লির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এর পর ৯ ডিসেম্বর তারা নিজেরাই একতরফা ভাবে অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষ বাধায়।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে চুক্তিগুলির কথা চিন বলছে, তারা নিজেরাই সেগুলি ভঙ্গ করে একতরফা ভাবে ২০২০ সালের জুনে গালওয়ানে ঢুকে পড়ে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। বিষয়টির পুনরাবৃত্তি হল এ বার তাওয়াং-এ। বার্তা স্পষ্ট। শি জিনপিং সরকার ভারতের সীমান্তে উত্তরোত্তর চাপ বাড়ি্য়ে যাবে। নয়াদিল্লির সঙ্গেসম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনও সদিচ্ছা চিনের নেই।

এই অবস্থায় অরুণাচলপ্রদেশ নিয়ে চিন নতুন করে দাবি তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারত। এ বিষয়েও ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। বৃহস্পতিবার সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, গত ছয় দশক ধরে অরুণাচল প্রদেশকে তারা ভারতের অংশ বলেই মনে করে। ফলে চিনের দখলদারি তারা মেনে নেবে না।

অন্য দিকে আজ রাষ্ট্রুপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে এক আলোচনায় জয়শঙ্কর বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের মোকাবিলায় বিশ্ব একযোগে কাজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনও সন্ত্রাসে মদতদাতাদের রক্ষা করতে অপব্যবহার করা হচ্ছে বহুপাক্ষিক মঞ্চের।’’ পাকিস্তানি জঙ্গিদের নিষিদ্ধ করার একাধিক প্রচেষ্টা খারিজ করে দিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চিন। জয়শঙ্করের ইঙ্গিত সে দিকেই বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE