Advertisement
০৩ মে ২০২৪
India-Maldives Row

‘পর্যটক পাঠান’! ভারতীয়দের বয়কটের মুখে চিনের কাছে কাতর আর্জি বিপন্ন মলদ্বীপ প্রেসিডেন্টের

মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার পর থেকে কমপক্ষে ১৪ হাজার হোটেল বুকিং এবং প্রায় চার হাজার বিমানের টিকিট বাতিল করেছেন ভারতীয়েরা।

জিনপিং এবং মুইজ্জু।

জিনপিং এবং মুইজ্জু। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ২১:৫৮
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবমাননার জেরে সমাজমাধ্যমে ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র। আগে থেকেই মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করে চলেছেন একের পর এক ভারতীয়। ক্রমে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে বেজিং সফরে গিয়ে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকারের কাছে পর্যটক চেয়ে ‘দরবার’ করলেন!

পাঁচ দিনের চিন সফরের দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার ফুজিয়ান প্রদেশের মলদ্বীপ বিজনেস ফোরামে বক্তৃতা করেন মুইজ্জু। সেখানে চিনা বণিকসভাগুলির প্রতিনিধিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘প্রাক অতিমারি পর্বে চিন আমাদের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী ছিল। আমরা আবার সেই পরিস্থিতিতে ফিরতে চাই।’’ মলদ্বীপে চিনা পর্যটকদের আরও বেশি করে যাওয়ার আবেদন জানান মুইজ্জু। জানান, মলদ্বীপে বিশেষ পর্যটন অঞ্চল গড়ার জন্য চিনের সঙ্গে ৫ কোটি ডলারের (প্রায় ৪১৫ কোটি টাকা) একটি চুক্তি সই করেছেন তিনি।

মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার পর থেকে কমপক্ষে ১৪ হাজার হোটেল এবং প্রায় চার হাজার বিমানের টিকিট বাতিল করেছেন ভারতীয়েরা। যা, মলদ্বীপের পর্যটন এবং অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, সমুদ্রে মৎস্য শিকারের ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের আয়ের বড় অংশ হল পর্যটন। ভারতীয় পর্যটকেরা মলদ্বীপ যাওয়া বন্ধ করে দিলে দেশের অর্থনীতি বিপদের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বণিক মহলের অনেকেই।

গত সেপ্টেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘চিনপন্থী’ নেতা তথা ‘পিপল্‌স ন্যাশনাল কংগ্রেস’-এর প্রধান প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে একের পর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যা নিয়ে নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। এই আবহে সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন মোদী। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ, মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী, মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ কিছু ছবিতে মোদীকে ‘পুতুল’ এবং ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত-ইজ়রায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়। পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়।

ঘটনার পরেই মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি (যাঁকে পরাজিত করে মুইজ়ু সম্প্রতি ক্ষমতায় এসেছেন) এবং আর এক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাসিদ মোদীর সমালোচনা করা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের দাবি তোলেন। তাঁরা জানান, ভারত মলদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ ‘মিত্র’। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এর পরই ঘরে-বাইরে চাপের মুখে রবিবার মুইজ্জু সরকার তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ঘটনাচক্রে, মুইজ্জু চিন সফরের গোড়াতেই সোমবার পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায় বেজিং। কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত একদলীয় চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ভারতের বিরোধিতা করার জন্য মালেকে কোনও উস্কানি দেয়নি বেজিং। লেখা হয়, ‘‘আমরা মলদ্বীপকে সমান স্তরের সহযোগী ভাবি এবং তাদের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE