Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Salman Rushdie

মাথার ভিতর একটা কণ্ঠস্বর বারবার বলছিল, বাঁচতে হবে

নিউ জার্সির বাসিন্দা, ২৬ বছর বয়সি হাদি মাটারের ছুরির আঘাতে সে দিন ক্ষতবিক্ষত হয়েও জ্ঞান হারাননি রুশদি। ছুরি লেগেছিল তাঁর ডান চোখে।

সলমন রুশদি।

সলমন রুশদি। —ফাইল চিত্র।

শ্রাবণী বসু
লন্ডন শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৫
Share: Save:

২৭ সেকেন্ডে ১২ বার ছুরির ঘা খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। আর রক্তের মধ্যে পড়ে থাকতে থাকতে একটা কথাই শুধু তাঁর মাথায় ঘুরছিল। এত রক্ত? আমার শরীর থেকেই বেরিয়েছে?

ছুরি হামলার ২০ মাস পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ২০২২-এর ১২ অগস্টের সেই সকালের স্মৃতি এখনও ধূসর হয়ে যায়নি ৭৬ বছর বয়সি সলমন রুশদির। একটি ব্রিটিশ টিভি চ্যানেলকে দেওয়া তাঁর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে সেই হামলার প্রসঙ্গই বারবার উঠে আসছিল। রুশদির কথায়, ‘‘মনে হচ্ছিল, মরে যাব। কিন্তু তারপরে মাথার ভিতর যেন একটা কণ্ঠস্বর বারবার আমাকে বলছিল, বাঁচতে হবে। বেঁচে থাকতেই হবে।’’

নিউ জার্সির বাসিন্দা, ২৬ বছর বয়সি হাদি মাটারের ছুরির আঘাতে সে দিন ক্ষতবিক্ষত হয়েও জ্ঞান হারাননি রুশদি। ছুরি লেগেছিল তাঁর ডান চোখে। তাঁর কথায়, ‘‘বাঁ চোখ দিয়ে দেখলাম, ডান চোখটা কোটর থেকে বেরিয়ে আমার গালের উপরে পড়ে রয়েছে। ঠিক যেন একটা নরম ডিমসেদ্ধ!’’ ডান চোখে দৃষ্টি হারানোই রুশদিকে এখন সব থেকে বেশি পীড়া দেয়। ‘‘সিঁড়ি দিয়ে নামতে, রাস্তা পার হতে, এমনকি, এক গ্লাস জল ঢালতেও অসুবিধা হয়,’’ মেনে নিচ্ছেন লেখক। চোখ ছাড়াও ডান হাতের স্নায়ু নষ্ট হয়ে গিয়েছে রুশদির, আঘাত লেগেছিল যকৃতেও। তবে তাঁর মস্তিষ্কে যে কোনও আঘাত লাগেনি, তাতে নিজের ভাগ্যকেই ধন্যবাদ দেন লেখক। ‘‘আমার চিন্তা করার বা কথা বলার ক্ষমতা যে কোনও ভাবে নষ্ট হয়নি, এটাই সব থেকে বড় ব্যাপার,’’ বলেন তিনি।

আঘাতের মুহূর্তটি বর্ণনা করে রুশদি বলেন, ‘‘ও (হাদি) খুব দ্রুত, লাফ গিয়ে, আমার সামনে চলে এসেছিল। আমার পক্ষে কোনও ভাবেই সেখান থেকে সরে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’’ রুশদি জানান, নিউ ইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের দিন কয়েক আগে একটি দুঃস্বপ্ন দেখেন তিনি। দেখেছিলেন, তাঁর উপরে হামলা চালাচ্ছে কেউ। তাঁর কথায়, ‘‘পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে ভাবলাম, উদ্যোক্তাদের জানিয়ে দিই যে, অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারব না। কিন্তু তারপরেই মনে হল, সেই ১৯৮৯ থেকে মাথার উপরে ফতোয়ার খাঁড়া ঝুলছে। এ রকম স্বপ্ন দেখা তাই অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে, যাঁরা টিকিট কেটে আমার কথা শুনতে আসছেন, তাঁদের কথা ভেবেই আমি সে দিনের ওই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম।’’ ১৯৮৮ সালে রুশদির লেখা ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটির জন্য তাঁর উপরে ফতোয়া জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি।

এ মাসেই প্রকাশিত হবে রুশদির নতুন বই ‘নাইফ’। ‘আমাকে যাঁরা প্রাণে বাঁচিয়েছেন, সেই সব ছেলে-মেয়েকে’ বইটি উৎসর্গ করেছেন রুশদি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salman Rushdie
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE