Advertisement
২৯ মে ২০২৪
Quantum

‘কোয়ান্টাম ডান্স’ বন্ধ করে প্রযুক্তির দৌড় বাঙালি বিজ্ঞানীর

প্রায় একশো বছর আগে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিষ্কার হয়েছিল। সেই থেকেই জানা, কোনও অণুর মধ্যে উপস্থিত ইলেকট্রনগুলির সঙ্গে পরমাণুর গতির সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণাগারে বিজ্ঞানী প্রত্যুষ ঘোষ।

গবেষণাগারে বিজ্ঞানী প্রত্যুষ ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ ০৫:০৬
Share: Save:

বিশ-পঁচিশ বছর আগের বেজায় ভারী সেই মুঠোফোন, আর এখনের ছিপছিপে চেহারার টাচ-স্ক্রিন মোবাইল— দ্রুত গতিতে বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি, অতি আধুনিক হচ্ছে বিজ্ঞান। সেই দিকেই আরও এক ধাপ এগিয়ে দিল কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্র। এই গবেষণায় যুক্ত রয়েছেন বাঙালি বিজ্ঞানী প্রত্যুষ ঘোষ। জানালেন, পরমাণুর ‘কোয়ান্টাম ডান্স’ বন্ধ করেই বাজিমাত করেছেন তাঁরা। তাঁদের এই গবেষণা ডিসপ্লে টেকনোলজি, সোলার সেল ও বায়ো-মেডিক্যাল ইমেজিং-কে আরও উন্নত করবে। কম খরচে দুর্দান্ত মোবাইল স্ক্রিন থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞান, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে অত্যাধুনিক পরিষেবা। ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।

প্রায় একশো বছর আগে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিষ্কার হয়েছিল। সেই থেকেই জানা, কোনও অণুর মধ্যে উপস্থিত ইলেকট্রনগুলির সঙ্গে পরমাণুর গতির সম্পর্ক রয়েছে। একে মলিকিউলার ভাইব্রেশন বা অণু-কম্পনও বলে। পরমাণুর এই গতি ছোট ছোট স্প্রিংয়ের মতো কাজ করে। এই সিস্টেমে ইলেকট্রনগুলি পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত থাকায় তারাও পরমাণুর ছন্দেই কাঁপতে থাকে, এক সেকেন্ডের এক কোটি ভাগের এক কোটি ভাগ গতিতে। কিন্তু এই প্রবল কম্পনের জেরে শক্তির ক্ষয় ঘটে। ‘লাইট এমিটিং ডায়োড’, ‘ইনফ্রারেড সেন্সর’ ও ‘ফ্লুরোসেন্ট বায়োমার্কার’ হিসেবে ব্যবহৃত কোনও অর্গানিক মলিকিউল বা অণুর ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে দেয়। এর জেরে যেমন কোনও সংক্রমিত কোষকে চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় বায়ো-মেডিক্যাল ইমেজিং কঠিন ও খরচসাপেক্ষ হয়ে যায়, তেমনই মোবাইলের ডিসপ্লে স্ক্রিনের দামও ব্যাপক ভাবে বেড়ে যায়। প্রত্যুষ জানিয়েছেন, তাঁরা গবেষণায় ‘লেজ়ার বেসড স্পেকট্রোস্কোপিক টেকনিক’ ব্যবহার করে অণুদের এই কম্পন (মলিকিউলার ডান্স) বন্ধ করতে সফল হয়েছেন। এতে অণুর শক্তির ক্ষয় বন্ধ হয়েছে, কার্যকারিতা বেড়েছে।

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের প্রত্যন্ত রুদা গ্রামের বাসিন্দা প্রত্যুষ বর্তমানে ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজের সদস্য, ক্যাভেনডিশ পিএইচডি রিসার্চার। প্রথমে গ্রামের স্কুলেই তাঁর পড়াশোনা। পরে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পাঠ। এর পরে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক, আইআইটি কানপুর থেকে স্নাতকোত্তর। এই গবেষণায় প্রত্যুষ প্রথম মুখ্য লেখক। তিনি গবেষণার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘জীবকোষ বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের মধ্যে উপস্থিত সমস্ত অর্গানিক মলিকিউল বা অণুর মধ্যে কার্বন পরমাণু রয়েছে। এগুলি একে অন্যের সঙ্গে রাসায়নিক বন্ড দ্বারা যুক্ত। এই বন্ডগুলি কাঁপতে থাকে স্প্রিংয়ের মতো। ইলেকট্রনগুলি যে হেতু বন্ডের সাহায্যে পরমাণুর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তাই তারাও কাঁপতে থাকে। এতে অণুর কার্যকারিতা কমে যায়। আমরা এমন কিছু অণুর সন্ধান পেয়েছি, যাঁরা এই কম্পনের প্রভাব এড়াতে পারে।’’

প্রত্যুষ জানিয়েছেন, তাঁরা এমন এক গুচ্ছ অণু তৈরি করেছেন, যাদের (কম্পনের জেরে) শক্তি ক্ষয় অনেক কম। আগের থেকে ১০০ ভাগেরও বেশি কম। তিনি জানান, অণুর কম্পনকে এ ভাবে বুঝতে পারা এবং নিয়ন্ত্রণ করে নতুন অণুর নকশা তৈরি করা, ভবিষ্যত-গবেষণার জন্য পথ খুলে দিয়েছে।

এই গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরির অধ্যাপক অক্ষয় রাও এবং সহ-লেখক ‘নাইট’ উপাধিপ্রাপ্ত প্রবীণ বিজ্ঞানী রিচার্ড হেনরি ফ্রেন্ড। অক্ষয় বলেন, ‘‘এখন কাজ হচ্ছে, যে আবিষ্কার আমরা করেছি, উন্নতমানের প্রযুক্তি তৈরিতে তার প্রয়োগ। সেটা ফোনের ডিসপ্লে হোক, কিংবা বায়ো-মেডিক্যাল ইমেজিং বা রোগ নির্ণয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE