সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে মার্কিন বিমানবাহিনীকে টক্কর দিতে শুরু করল বির্টেনের রয়্যাল এয়ার ফোর্স। ছোট আকারের ব্রিটিশ মিসাইল ব্রিমস্টোন ঝলসে দিচ্ছে শত্রুর ঘাঁটি। এত নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানছে ব্রিমস্টোন যে আফগান যুদ্ধে তালিবানের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে উঠেছিল যে মার্কিন হেলফায়ার মিসাইল, তা-ও এঁটে উঠতে পারছে না ব্রিটিশ ব্রিমস্টোনের সঙ্গে।
আইএস জঙ্গিদের রাজধানী এখন সিরিয়ার রাকা শহর। মরুরাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকা এক সময় আইএস-এর দখলে চলে গেলেও আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স এক সঙ্গে বোমাবর্ষণ শুরু করে দেওয়ার পর ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে শুরু করেছে আইএস-এর মুক্তাঞ্চল। কিন্তু কিছু দিন আগে পর্যন্তও রাকা ও তার আশপাশের এলাকা আইএস-এর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ছিল। রাকার আকাশে ওড়ার আগে দু’বার ভাবতে হচ্ছিল ন্যাটো বা রাশিয়ার বিমানবাহিনীকে। কিন্তু ব্রিটেন তার ব্রিমস্টোন মিসাইলের ব্যবহার বাড়িয়ে দেওয়ার পর আতঙ্ক তীব্র হয়েছে আইএস শিবিরে। কারণ ছোট আকারের এই ব্রিমস্টোন মিসাইল বিরাট এলাকা জুড়ে ধ্বংসলীলা না চালালেও, যে লক্ষ্যবস্তুকে সেটি নিশানা বানিয়ে নেয়, কোনওভাবেই তার রক্ষা নেই। হালকা এবং ছোট আকারের হওয়ায় অনেকগুলি ব্রিমস্টোন বহন করা যায় এক একটি যুদ্ধবিমানে। যে লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করে যুদ্ধবিমান থেকে ব্রিমস্টোন ছোঁড়া হয়, নিখুঁতভাবে তাতে আঘাত করে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্রিমস্টোনের মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের রেডার লাগানো রয়েছে। এর নাম মিলিমেট্রিক ওয়েভ রেডার। এই ধরনের রেডারে ‘সিকার’ থাকে। আকাশ থেকে মিসাইল ছোঁড়ার আগে যে লক্ষ্যবস্তুর ছবি ওই সিকার-কে দেখিয়ে দেওয়া হয়, তাকে লক্ষ্য করেই ক্ষিপ্র বেগে এগিয়ে যেতে থাকে ব্রিমস্টোন মিসাইল। অর্থাৎ যদি লক্ষ্যবস্তুটি গাড়ি, ট্যাঙ্ক বা অন্য কোনও চলমান বস্তু হয়, তা হলেও সমস্যা নেই। মিসাইল ধেয়ে আসছে দেখে যত দ্রুত বেগেই পালানোর চেষ্টা করুক প্রতিপক্ষ, নিস্তার পাওয়ার কোনও উপায় নেই। ব্রিমস্টোনের রেডারে যেহেতু ওই লক্ষ্য বস্তুর ছবি গেঁথে গিয়েছে, সে হেতু লক্ষ্যবস্তু যত বার স্থান বদলাবে এই মিসাইলও তত বারই অভিমুখ বদলে ঠিক ওই লক্ষ্যে গিয়ে বিধ্বংসী আঘাত হানবে।
আরও পড়ুন:
উলার লেকে মোতায়েন ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’, ঘুম উড়েছে জঙ্গিদের
এই সাংঘাতিক মিসাইল ব্যবহার করে চলন্ত গাড়িতে থাকা একাধিক আইএস কম্যান্ডারকে ইতিমধ্যেই খতম করেছে ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্স। উড়িয়ে দিয়েছে আইএস-এর একাধিক কনভয়। ক্যামোফ্লাজ করে রাখা বিভিন্ন আইএস ঘাঁটি ঝলসে গিয়েছে ব্রিমস্টোনের ভয়ঙ্কর আঘাতে।
আমেরিকার হেলফায়ার-ও এই ধরনেরই ক্ষেপণাস্ত্র। আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রে হেলফায়ার ব্যবহার করে খুব সাফল্য পেয়েছিল মার্কিন বিমানবাহিনী। ব্রিটেন তখনও ব্রিমস্টোন ব্যবহার করেছিল। কিন্তু ব্রিমস্টোনে তখন এই মিলিমেট্রিক ওয়েভ রেডার ছিল না। ফলে হেলফায়ারের মতো নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারত না ব্রিমস্টোন। আফগান যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকেই ব্রিমস্টোন মিসাইলে ওই বিশেষ রেডার লাগানোর ব্যবস্থা করে ব্রিটেন। সিরিয়ার যুদ্ধে ব্যবহৃত ব্রিমস্টোনের সেই নতুন সংস্করণ সব ক্ষেত্রে টেক্কা দিচ্ছে মার্কিন হেলফায়ারের পারফরম্যান্সকে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আইএস-এর বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ইতিমধ্যেই ধুলিসাৎ হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক ডজন শীর্ষ কম্যান্ডারের। সিরিয়ার মরুপ্রান্তরের আতঙ্ক যারা, সেই আইএস-এর কাছে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম ব্রিমস্টোন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy