Death and Reincarnation- Story of Dorothy Eady dgtl
Mystery
সত্যিই কি পূর্বজন্মের স্মৃতি ছিল ডরোথির? বিস্ময়কর জীবনকথা আজও রহস্যে ঘেরা
সিনেমায় মুকুলের পূর্বজন্মের ঘটনা মনে পড়ার ঘটনা দেখলেও বাস্তবে কখনও এমন ঘটনা শুনেছেন? সত্যিই কি পুনর্জন্ম বলে কিছু হয়? ডরোথি এডির এই গল্প শুনলে হাড় হিম হতে বাধ্য।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ১২:৫৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
সিনেমায় মুকুলের পূর্বজন্মের ঘটনা মনে পড়ার ঘটনা দেখলেও বাস্তবে কখনও এমন ঘটনা শুনেছেন? সত্যিই কি পুনর্জন্ম বলে কিছু হয়? ডরোথি এডির এই গল্প শুনলে হাড় হিম হতে বাধ্য।
০২১৮
তিন বছর বয়সে সিড়ি থেকে দৌড়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয় ডরোথি। চিকিত্সক এসে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন তাকে। ঘণ্টাখানেক বাদে, সবাইকে চমকে দিয়ে ‘বেঁচে’ ওঠে বাচ্চাটি। এমনকি শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্নও নেই! চিকিত্সক পরীক্ষা করে তাকে সুস্থ বলে জানান। এই পর্যন্ত ঘটনাটি চমকপ্রদ হলেও এর পরের কাহিনি আরও রহস্যময়।
০৩১৮
১৯০৪ সালে দক্ষিণ লন্ডনে জন্ম নেয় ডরোথি এডি। বাকি বাচ্চাদের মতোই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল সে। সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনার পর থেকেই বদলে যায় নিজের ও তার পরিবারের জীবন। নিজেকে ডরোথি বলে মানতে অস্বীকার করে সে। দাবি করে, তার নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
০৪১৮
অস্বাভাবিকতার শেষ এখানেই নয়। মন ভোলাতে তাকে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ঘুরতে নিয়ে যান তাঁর মা-বাবা। বিপত্তি ঘটল সেখানেই, মিশরীয় গ্যালারিতে গিয়ে আর নড়তে চায় না সে। মিউজিয়ামে রাখা মমিগুলি দেখে দৌড়ে যায় সেগুলির কাছে এবং পায়ে চুমু খেতে থাকে। মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরতেও অস্বীকার করে ডরোথি।
০৫১৮
জোর করলে অদ্ভুত ভাষায় চিৎকার করতে থাকে সে এবং বলে, ‘এরা আমার নিজের লোক, এদের সঙ্গে থাকতে দাও আমায়’। সাত বছর বয়সে একদিন হঠাৎ মিশরীয় রাজা ‘সেতি-১’-এর মন্দির দেখে বাবাকে বলে ওঠে, এই মন্দিরই তার আসল বাড়ি। এখানেই নাকি বড় হয়েছে সে।
০৬১৮
ডরোথিকে হায়ারোগ্লিফিক (প্রাচীন মিশরীয় ভাষা) পড়তে দেখে চমকে ওঠে সবাই। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, “কোনও নতুন ভাষা শিখছি না। জানা ভাষাকেই একবার ঝালিয়ে নিচ্ছি।” এমনকি খ্রিস্ট ধর্মকে ‘মিথ্যা’ বলে গির্জায় যেতেও অস্বীকার করে।
০৭১৮
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বোমাবর্ষণের সময় থেকে সে তার দিদার সঙ্গে সাসেক্সে থাকতে শুরু করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা সম্পর্কে আগ্রহ আরও বাড়তে থাকে। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলিতে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে এবং মিশরীয় পুরাতত্ব সংগ্রহ করতে থাকে।
০৮১৮
২৭ বছর বয়সে তিনি এক মিশরীয় পত্রিকায় কাজ করতে শুরু করেন। প্রাচীন মিশরের সভ্যতার গুরুত্ব সম্পর্কে লিখতে থাকেন। এই সময়ই এক মিশরীয় শিক্ষকের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় এবং তাঁকেই বিয়ে করে মিশরে যান ডরোথি। ১৯৩১ সালে মিশরের পা রেখেই তিনি মাটিতে চুম্বন করে বলেন, ‘অবশেষে বাড়ি ফিরে এলাম’।
০৯১৮
মিশরে যাওয়ার পর ডরোথির ব্যবহারে দেখা যায় আরও পরিবর্তন। তিনি মাঝ রাতে উঠে হাইরোগ্লিফিক ভাষায় নানা ঘটনা লিখতেন, প্রশ্ন করা হলে বলতেন, তাঁর পূর্বজন্মের ঘটনা লিখে রাখছেন। দাবি করেন, নরক থেকে সেতির আত্মা ফিরে এসেছে। তাঁর পরিবারের লোকজনও আত্মার উপস্থিতি বহু বার অনুভব করেছেন বলে দাবি করেন।
১০১৮
ডরোথির বিয়ের পর এক সন্তান জন্ম নেয়। ডরোথি তার দাবি করা পূর্বজন্মের সঙ্গে মিল রেখেই ছেলের নামকরণ করে ‘সেতি’। নিজে স্বীকৃত হন ‘অম্ম সেতি’ হিসেবে, যার অর্থ দাড়ায় ‘সেতির মা’। কয়েক বছর পর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও ডরোথি লন্ডনে ফিরে না গিয়ে মিশরের অ্যাবিডসে বসবাস থেকে মিশরের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে কাজ শুরু করেন।
১১১৮
ডরোথি দাবি করেন, হর-রা নামক এক আত্মা এসে তাঁকে তাঁর পূর্বজন্ম সম্পর্কে জানিয়েছিল। পূর্বজন্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁর মা ছিলেন এক সব্জি বিক্রেতা, বাবা ছিলেন যোদ্ধা। মা তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘বেনট্রেসাইট’। তিন বছর বয়সে তাঁর মা মারা গেলে তাঁকে ‘কম-এল-সুলতান’ মন্দিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
১২১৮
সেখানেই সেবিকা হিসাবে তাঁকে নিয়োগ করা হয় এবং ১২ বছর বয়সে ঈশ্বরের সেবিকা হিসাবে নিজেকে অর্পণ করেন তিনি। এই মন্দিরেই নাকি ১৪ বছর বয়সে তার সঙ্গে তৎকালীন রাজা সেতির দেখা হয় এবং তাঁরা একে অপরের প্রেমে পড়েন।
১৩১৮
ডরোথির দাবি, বিয়ের আগেই বেনট্রেসাইট গর্ভবতী হয়ে পড়েন। সেই কথা মন্দিরে জানাজানি হলে প্রধান ধর্মযাজক নিয়মভঙ্গ ও পাপ কাজের দায়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেন। শাস্তির অপেক্ষা না করে তিনি নাকি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
১৪১৮
ডরোথির এই পুনর্জন্মের দাবির সত্যতা যাচাই করার জন্য তাঁকে বহু বার নানা পরীক্ষাও দিতে হয়েছে। এ রকমই এক ঘটনা ঘটেছিল যখন তিনি সেতির মন্দিরে যান। ডরোথির কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য ওই মন্দিরের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান তাঁকে অন্ধকারে দাঁড় করিয়ে বেশ কয়েকটি ছবি দেখিয়ে সেগুলি চেনেন কিনা জানতে চান।
১৫১৮
ডরোথি কেবল চিনতেই পারেননি, কোন সময়ের ঘটনা এবং কিসের উপর ভিত্তি করে এই ছবিগুলি আঁকা হয়েছিল তাও বলে দেন। এই ছবিগুলির বিষয়ে আগে কোনও পত্রিকা বা বইয়ে উল্লেখ হয়নি। তা হলে ডরোথি জানলেন কী ভাবে ছবিগুলির বিষয়ে? তিনি এমন আরও তথ্য দেন যা আগে কোনও গবেষণাতেও জানা যায়নি।
১৬১৮
ডরোথির হাইরোগ্লিফিক পড়ার ক্ষমতা এবং মনে রাখার ক্ষমতা প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার গবেষণায় নানা ভাবে সাহায্য করেছিল। জীবিত থাকাকালীন ডরোথি প্রতি দিন সেতির মন্দিরে প্রার্থনা করতে যেতেন। তিনি গবেষকদের জানান, অ্যাবিডসের এই মন্দিরেই ছিল এক বাগান, যেখানে তিনি ধ্যান করতেন। সেতির সঙ্গে আলাপও হয় এখানে।
১৭১৮
প্রথমে গবেষকরা মানতে না চাইলেও পরে মাটি খুড়ে খোঁজ চালিয়ে গাছের শিকরের চিহ্ন পান। প্রমাণিত হয়, সত্যিই ওখানে একটি বাগানের অস্তিত্ত্ব ছিল। বাগানের নীচে এক সুড়ঙ্গের খোঁজও ডরোথি ওরফে অম্ম সেতির মাধ্যমেই জানা যায়। ১৯৮১ সালে ডরোথির মৃত্যু হলে তাঁকে স্থানীয় কোপটিক কবরস্থানের পাশে মরুভূমিতে সমাধিস্থ করা হয়।
১৮১৮
পূর্ব জন্ম নিয়ে আজও তেমন ভাবে কিছু বলতে পারেনি বিজ্ঞান। ডরোথির ঘটনাকেও তাই পূর্ব জন্ম বলতে নারাজ অনেকেই। তবে একটি বিষয় মেনে নিয়েছেন সকলেই যে, তাঁর জন্যই মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাসের অনেক না জানা দিক সামনে এসেছিল।