উচ্ছল: হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসে শপথ নেওয়ার পরে (বাঁ দিক থেকে) আলেকজ়ান্দ্রিয়া, তালিব এবং ইলান। ছবি: ফেসবুক
কেউ সাদা স্যুট, কারও গোলাপি ড্রেস। কেউ হাজির নেটিভ মার্কিন পোশাকে, কেউ আবার প্যালেস্তাইনি থোবে সেজে— ১১৬তম মার্কিন কংগ্রেসে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ শপথ নিতে বৃহস্পতিবার ক্যাপিটল হিল-এ ঢুকলেন ওঁরা, এই প্রথম জিতে আসা মহিলা-সদস্যরা। প্রত্যেকের সাজের ভাষায় ফুটে উঠেছিল আত্মবিশ্বাস আর নিজের সংস্কৃতির প্রতি গর্ব।
ফিনিক্সের মতো ফিরে আসা ন্যান্সি পেলোসিকে নিয়ে ক্যাপিটল হিল-এ চর্চা হচ্ছিল সব চেয়ে বেশি। কিন্তু স্পিকার পদে তিনি শপথ নেওয়ার আগে ক্যামেরার ঝলকানি খুঁজে নিয়েছিল আরও একরাশ তাজা, সাহসী মুখ। ১০২ জন পুরুষবিশিষ্ট হাউসে নেভি ব্লু, কালো স্যুটদের দাপটেও যাঁরা অম্লান। পেলোসির নিজের উজ্জ্বল গোলাপি রং বুঝিয়ে দিচ্ছিল, তিনি শুধু এই নতুনদের ঝাঁকের সঙ্গে ওড়ার জন্য আসেননি, তাঁদের পথ দেখাতেও এসেছেন।
ডেমোক্র্যাট সদস্য (মিশিগান থেকে জিতে আসা প্রথম প্যালেস্তাইনি-মার্কিন) রশিদা তালিব নিজের মাকে সম্মান জানাতে প্যালেস্তাইনি থোব পরে এসেছিলেন শপথ নিতে। ডেট্রয়েটে প্যালেস্তাইনি বাবা-মায়ের সন্তান রশিদা। ছোটবেলায় তিনি দেখতেন, একটা আলো জ্বালিয়ে মেঝেতে বসে মা গাউনে এমব্রডায়েরি করছেন। তালিবের আজকের পোশাক তাঁর সেই ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে মনে রেখে। রশিদা চান, আমেরিকা চিনুক এই ঐতিহ্যকে। গত ১৪ ডিসেম্বর এই থোবের ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে রশিদা জানিয়েছিলেন, শপথের সময়ে এটাই পরবেন। ১১ হাজার লাইক আর অভিনন্দনের সঙ্গে ধেয়ে এসেছিল জাতিবিদ্বেষী মন্তব্যও। তার পরে রশিদার পাশে দাঁড়ান অসংখ্য প্যালেস্তাইনি। শুরু হয় #টুইটইওরথোব লিখে এই পোশাক নিয়ে পোস্ট। রশিদার মতো আর এক প্রথম মুসলিম সদস্য ইলান ওমর। সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে আশ্রয় কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরে। তার পর সেখানে থেকে চলে আসা আমেরিকায়। কমলা রঙের হিজাবে তিনি শপথ নেন। মুসলিম এবং শরণার্থীর পরিচয় নিয়ে যে সময়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন ইলানের মতো মুখ যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী।
একই ভাবে নেটিভ আমেরিকার সদস্য হিসেবে প্রথম জিতে আসা ডেব্রা হাল্যান্ডও তুলে ধরেছিলেন তাঁর সম্প্রদায়ের স্বকীয়তা। রুপো আর তুঁতে রঙের গয়না, সঙ্গে নেটিভ আমেরিকান পুয়েবলো পোশাক। লাগুনা আদিবাসীদের মধ্যে পুয়েবলো সম্প্রদায়ের সদস্য হ্যালান্ড। তাঁর মতোই শ্যারিস ডেভিডসও উইসকনসিনের নেটিভ আমেরিকান সদস্য হিসেবে এই প্রথম পাদিলেন হাউসে। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে হোয়াইট হাউসে ফেলো হিসেবে কাজ করেছিলেন সমকামী শ্যারিস।
কংগ্রেসে সব চেয়ে তরুণ সদস্যা আলেকজ়ান্দ্রিয়া ওকাসিয়ো-কোর্তেজও শপথ নিলেন আজ। এয়ানা প্রেসলি এলেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সদস্যা হিসেবে। ম্যাসাচুসেটসের ১০ বারের জয়ী মাইকেল ক্যাপুয়ানোকে যখন প্রাইমারিতে হারিয়েছিলেন এই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, চমকে যান অনেকেই। লাতিন আমেরিকার মুখ হয়ে হাউসের সদস্যা হলেন ভেরোনিকা এস্কোবার এবং সিলভিয়া গার্সিয়া। কানেক্টিকাট থেকে জয়ের পরে শপথ নিলেন আফ্রিকান-মার্কিন জাহানা হেস। টেনেসির প্রথম মহিলা সদস্যা রিপাবলিকান মার্শা ব্ল্যাকবার্নও এ বার শপথ নিয়েছেন। আর আইওয়া থেকে এসেছেন আরও দুই মহিলা-মুখ সিন্ডি অ্যাক্সনে এবং অ্যাবি ফিঙ্কেনওয়ার।
পেলোসি তাঁর বক্তৃতায় জানান, আমেরিকায় মহিলাদের ভোটাধিকার শতবর্ষে পড়ল এ বছর। তাই জিতে আসা নতুন মহিলা সদস্যরা মাথায় রাখছেন প্রশ্নটা, ‘‘আমরা আমাদের ভোটাধিকার দিয়ে কী করছি?’’
সংস্কৃতির দিক থেকে প্রত্যেকে আলাদা হয়েও সবার জাতীয় ভাষা এক। নিরুচ্চারে কাজেও সেটা তুলে আনতে চান তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy