সুজান কলিন্স ও ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিভিন্ন প্রচার সভায় তাঁকে ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ হারাতে দেখা গিয়েছে বহু বার। আর নিজের এই স্বভাবের জন্যই এখন বেশ প্যাঁচে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পদে বসতে গেলে এই কথায় কথায় মেজাজ হারানোটা যে একেবারে চলবে না, তা স্পষ্ট করে লিখে দিয়েছেন তাঁরই দলের এক বর্ষীয়ান সেনেটর। সুজান কলিন্স। রিপাবলিকান এই সেনেটর মার্কিন দৈনিকে একটি প্রবন্ধে লিখেছেন। তাতে তিনি ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন।
এত দিন বিভিন্ন সভায় বিরোধী শিবিরের লোকেরা ট্রাম্পকে তুলোধোনা করছিলেন। আক্রমণের নিশানা হিসেবে টেনে আনা হচ্ছিল তাঁর একদা সুপারমডেল স্ত্রী মেলানিয়াকেও। কিন্তু এক জন রিপাবলিকান সেনেটর যখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খবরের কাগজের প্রবন্ধে পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, তাঁরই দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে তিনি ভোট দেবেন না, তখন তার প্রতিক্রিয়া তো হবেই। আর সেটাই হয়েছে। মুখ খুলেছেন দেশের প্রথম সারির ৫০ জন রিপাবলিকান নিরাপত্তা উপদেষ্টাও। তাঁরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলে তার ফল মারাত্মক হতে পারে। নিজের প্রবন্ধে ট্রাম্পকে সরাসরি আক্রমণের কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন কলিন্স। তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট হতে গেলে যে ধরনের মেজাজ আর মানুষকে বিচারের যে ক্ষমতা থাকতে হয়, ট্রাম্পের সেটা নেই।’’ প্রবন্ধে মূলত ট্রাম্পের মুসলিম বিরোধী নীতিকে দুষেছেন কলিন্স। কেন তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পকে চাইছেন না সেটাও স্পষ্ট লিখেছেন, ‘‘যে ভাবে মানুষকে বিশেষত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ট্রাম্প অসম্মান করেন, এক জন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর কাছ থেকে সেটা কাম্য নয়।’’ এক জন রিপাবলিকান সেনেটর হয়ে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না, তাঁর কি দলের প্রতি কোনও কর্তব্য নেই? ‘‘আমি এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। রিপাবলিকান দলটাই আমার জীবনের সংজ্ঞা। এই দল আমাকে শিখিয়েছে মানুষকে কতটা সম্মান করতে হয়। কিন্তু ট্রাম্পের মধ্যে সেই ইচ্ছেটারই বড্ড অভাব। তাই ওর পাশে দাঁড়াতে পারছি না,’’ লিখেছেন কলিন্স।
দেশের রিপাবলিকান নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের একটা প্রতিনিধি দলেরও মতামত একই রকমের। নিক্সন, বুশের প্রশাসনে আমেরিকার নিরাপত্তার ভার সামলানোর দক্ষতা রয়েছে এঁদের। তাঁরাই এখন বলছেন, ট্রাম্পের মতো ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কেউ দেশের মাথায় বসলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক। ট্রাম্পকে রিয়েলিটি টিভি তারকা আখ্যা দিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার কোনও যোগ্যতাই ওঁর নেই। আমাদের ভোট উনি পাবেন না।’’
এই অবস্থায় দেশের অনেকেই মনে করছেন, রিপাবলিকান এই ধনকুবের ভোটের আগেই হিলারি ক্লিন্টনের কাছে হেরে বসে আছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেখানে যেখানে ট্রাম্পের সভা হচ্ছে, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে জনপ্রিয়তার নিরিখে অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছেন হিলারি। রিপাবলিকানরা কিন্তু এর জন্য দুষছেন ট্রাম্পের অতিরিক্ত মুসলিম বিরোধিতা আর মেজাজ হারানোর স্বভাবকে।
যে মুসলিম দম্পতির সঙ্গে দিন কয়েক আগে তিনি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, তাঁরা ফের এক হাত নেন ট্রাম্পকে। ইরাক যুদ্ধে নিহত পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন সেনার বাবা-মা খিজর আর গজলা খান বলেন, ‘‘আমেরিকায় মুসলিমদের প্রতি অসহিষ্ণুতা ট্রাম্পের জন্যই বাড়ছে।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘চার দশক আগে যে অভ্যর্থনা পেয়েছিলাম, এখন তার বড় অভাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy