Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বিপদ লুকিয়ে পাহাড়ে, চোখ রাঙাচ্ছে বন্যা

ভিত নড়েছিল ভূমিকম্পে। আর আফটারশক এসে মুছে দিয়েছে এমনকী শেষ চিহ্নটুকুও। সতেরো দিনে তিনটি ভূমিকম্প ও দু’শোরও বেশি ভূকম্প-পরবর্তী কম্পন পেরিয়ে আজ নিশ্চিহ্ন নেপালের লাংতাং উপত্যকার আটটি গ্রাম। আশঙ্কার কালো মেঘ এ বার পিসাং নদী-উপত্যকা ঘিরেও।

দেবদূত ঘোষঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০৩:২২
Share: Save:

ভিত নড়েছিল ভূমিকম্পে। আর আফটারশক এসে মুছে দিয়েছে এমনকী শেষ চিহ্নটুকুও। সতেরো দিনে তিনটি ভূমিকম্প ও দু’শোরও বেশি ভূকম্প-পরবর্তী কম্পন পেরিয়ে আজ নিশ্চিহ্ন নেপালের লাংতাং উপত্যকার আটটি গ্রাম। আশঙ্কার কালো মেঘ এ বার পিসাং নদী-উপত্যকা ঘিরেও।

কিন্তু কী ভাবে ঘটল এই বিপর্যয়?

বিজ্ঞানীদের মতে— কম্পন নয়, কম্পন পরবর্তী প্রাকৃতিক বিপর্যয়েই লাংতাং উপত্যকার এই দশা। তাঁদের ব্যাখ্যা, কম্পনের কারণে পাহাড়ে নাড়া পড়তেই সাড়ে চার হাজার ফুট উঁচু নদীখাতে বহু দিন ধরে জমে থাকা বরফের চাঁই এবং ছোট-বড় পাথর আছড়ে পড়ে নীচে। আর তাতেই পুরোপুরি ভেসে গিয়েছে এই আটটি গ্রাম। শুধু ভেসে যাওয়া নয়, দিন কুড়ির মধ্যে বদলে গিয়েছে ওই উপত্যকার ভৌগোলিক চেহারাটাই। সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন দেশবিদেশের ভূতাত্ত্বিকরা।

ভূমিকম্পে দেশের সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম এই লাংতাং উপত্যকা। ২৫ এপ্রিলের পর ১২ মে ফের একটি নতুন ভূকম্পে কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.৩। এর পরেই লাংতাং উপত্যকার এই বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে নামে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা, মার্কিন ভূ-বিজ্ঞান সর্বেক্ষণ (ইউএসজিএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি)-র একটি যৌথ সমীক্ষক দল। লাংতাং নিয়ে আইসিআইএমওডি-র টাস্ক ফোর্স নেপাল সরকারকে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে— এলাকায় এখন পাথর আর গলতে থাকা বরফের চাঁই ছা়ড়া কিছু নেই।

ভূকম্পজনিত ভূমিক্ষয়ের প্রাবল্য নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিল আইসিআইএমওডি। ১২ দিনে ৩ হাজারেরও বেশি পাহাড়ি ধসের হদিস দিয়েছিল সংস্থাটি। এ বার সতর্ক করা হল নেপাল এবং হিমালয়ের হিন্দুকুশ এলাকায় পাহাড়ের ‘গোপন’ বিপদ সম্পর্কে। সংস্থাটির আশঙ্কা, ফের আট মাত্রার কাছাকাছি কোনও ভূমিকম্প হলে দেশের অন্যত্রও লাংতাংয়ের ওই আটটি গ্রামের মতো দশা হতে পারে।

তাই কোন পাহাড়ের কোথায় এই ভাবে নদীখাতে পাথর ও বরফের চাঁই জমে আছে, তা জানতে শুরু হয়েছে উপগ্রহের মাধ্যমে তল্লাশি। একই সঙ্গে চলছে উপগ্রহ-চিত্র বিশ্লেষণের কাজও।

লাংতাং ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত। সমীক্ষকদের আশঙ্কা, একই রকম বিপর্যয়ের মুখে পিসাং নদীখাত ও সংলগ্ন উপত্যকা। পর পর তিনটি ভূমিকম্প আর আফটারশকের জেরে আশপাশের পাহাড় থেকে পাথর আর বরফ নেমে এসেছে পিসাং নদীতে। জলের প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে নদীখাতে। এ দিকে ভূমিকম্পে পাহাড় জুড়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ফাটল। তার কোনও একটা দিয়ে ওই বিপুল জলরাশি বেরিয়ে এলে তা পাহাড় ফাটিয়ে নিম্ন পিসাং উপত্যকার গ্রামগুলিকে পুরো ভাসিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইসিআইএমওডি-র টাস্ক ফোর্স।

কিন্তু এর পর যদি আর একটাও কম্পন না হয়! ভূবিজ্ঞানীদের দাবি, বিপদ টলছে না তাতেও। আগামী বৃষ্টির মরসুম ঘিরেও সিঁদুরে মেঘ দেখছেন তাঁরা। বর্ষাকালে উপর থেকে যখন বিপুল জলরাশি এসে পিসাং নদীর বুকে জমা হবে, তার পরিণতিও একই রকম ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

এই মুহূর্তে পিসাং নদীখাতে কত জল রয়েছে, তারও একটা হিসেব কষেছেন বিজ্ঞানীরা। নদীর একটা অংশ ধসের কারণে বুজে গিয়েছে। বাকি অংশে রয়েছে আনুমানিক ১ লক্ষ ১০ হাজার কিউবিক মিটার জলরাশি। বর্ষাকালে এই জলের পরিমাণ আড়াই লক্ষ কিউবিক মিটার হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। আনুপাতিক হারেই তাই বাড়ছে পাহাড়ি বানের আশঙ্কা। সমীক্ষকদের দাবি, কোনও ফাটল দিয়ে পাহাড়ি বান এলে সেকেন্ডে এক হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার কিউবিক মিটারের জলরাশি ৫ থেকে ১২ মিটার উঁচু হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে জনপদে।

পিসাংয়ের মতো দেশের আর কোন কোন নদী এ ভাবে ধসে বুজে গিয়েছে, তা জানতেও উপগ্রহ-চিত্রের সাহায্য নিচ্ছেন দেশবিদেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। মার্কিন, ব্রিটিশ, হল্যান্ডের সমীক্ষকদের সঙ্গে ভারত, চিন এবং পাকিস্তানের বিজ্ঞানীরাও হাত লাগিয়েছেন বলে জানিয়েছে আইসিআইএমওডি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE